স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ৩ মার্চ : শহীদ ধনঞ্জয় ত্রিপুরার ৫১ তম শাহিদান দিবস উপলক্ষে সোমবার এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। স্টুডেন্ট হেলথ হোমে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নারায়ন কর সহ অন্যান্যরা। এই আলোচনা সভায় আলোচনা করতে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন রাজন্য শাসনের সময় থেকে গণতান্ত্রিক দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে মানুষের স্বার্থে কাজ করার যে কোন প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যে রাজনৈতিক দলের অভাব নেই। কিন্তু তারা নিজেদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শ্লোগান উত্থাপন করেন।
স্লোগানে উল্লেখিত দাবি বাস্তবায়নে যে দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করার প্রয়োজন তা না করে তার বিরুদ্ধাচারন করে। চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে সেই আন্দোলন গুলিকে ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ত্রিপুরা রাজ্যে রাজন্য শাসন কালে রাজারা ত্রিপুরা রাজ্য শাসন করেছেন। কিন্তু জনজাতিদের কল্যাণে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তা রাজারা করেন নি। সেই সময় ত্রিপুরা রাজ্যে জনজাতি অংশের জনগণ বেশি ছিল। তার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ছিল নিরক্ষর। সেই সময় জনশিক্ষা সমিতি গঠন করা হয়। ১১ থেকে ১২ জনকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। তারা বেসরকারি উদ্যোগে জনজাতিদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শহীদ ধনঞ্জয় ত্রিপুরার শহীদানের বিষয়ে তুলে ধরতে গিয়ে মানিক সরকার বলেন ৪ টি দাবিকে সামনে রেখে ১৯৭৫ সালে গনমুক্তি পরিষদ সকলকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সময় রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস সরকার। আন্দোলন যখন ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে তখনই আন্দোলন থেকে কোন কোন সংগঠন পিছু হাটে। তখন গনমুক্তি পরিষদ রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৭৫ সালের ৩ মার্চ আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেয়। বর্তমান শান্তিরবাজার মহকুমার জোলাইবাড়ি তহশিলের সামনে আইন অমান্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেখানে আইন অমান্য আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ধনঞ্জয় ত্রিপুরা। তারপরও আন্দোলন বন্ধ হয় নি। এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালের ৬ মার্চ সমগ্র ত্রিপুরা রাজ্যে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। সেই ধর্মঘট সফল হয়। তারপর ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকে আন্দোলন। তারপরই জরুরী অবস্থা জারি হয়ে যায়। জরুরী অবস্থার পর লোকসভা নির্বাচন হয়। নির্বাচনে কংগ্রেস পরাস্ত হয়।
মানিক সরকার এইদিন জনশিক্ষা আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরে ত্রিপুরার রাজাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন ত্রিপুরার রাজারা জনজাতিদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে নারাজ ছিলেন। তাই তারা জনশিক্ষা সমিতির কাজে বাধা দানের চেষ্টা করেছেন। তবে সকল বাধা উপেক্ষা করে জনশিক্ষা সমিতি বেসরকারি ভাবে অনেক গুলি স্কুল সমগ্র রাজ্যে স্থাপন করে বলে জানান তিনি।