স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ২৩ ফেব্রুয়ারি :রাজ্যে রেগা আইনে নথিভুক্ত থেকে ৯ লক্ষ ১৮ হাজার ৩২৮ জন শ্রমিকের নাম বাদ পড়েছে বলে দাবি প্রদেশ কংগ্রেসের। রবিবার প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই কথা বলেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছিলেন যে রেগা প্রকল্প মানুষকে অকর্মণ্য করে তুলেছে। এই প্রকল্প বন্ধ করে দেবে। এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে প্রতি বছরই রেগা প্রকল্পে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে আসছিল।
২০২১-২২ অর্থ বর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার আধার সংযুক্তিকরণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি প্রদান এসব নানা প্রশ্ন তুলে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেগার জব কার্ড বাতিল করা শুরু করে। প্রথম বছরেই ১ কোটি ৪৯ লক্ষ রেগা শ্রমিকের নাম তালিকা থেকে বাদ করে দেয়। পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই ধারাবাহিকভাবে রেগা শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে আসছিল। চলতি বছরে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের শ্রমিক সংখ্যা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের পোর্টাল মোতাবেক ১০ কোটি ৪৩ লক্ষেরও বেশি।
গোটা দেশে কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী সবকয়টা রাজনৈতিক দল, কৃষক শ্রমিকদের দল, কৃষক শ্রমিকদের সংগঠন সমূহ ইউপিএ সরকারের সময়কালে দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং-র কাজের অধিকারকে সাংবিধানিক আইনি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে তৈরি রেগা প্রকল্প বর্তমান সময়ে সার্বিক অবস্থান নিরিখে তা বাড়িয়ে ২০০ দিন করা ও বর্তমান মুদ্রা স্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনায় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের পাশাপাশি একে বাস্তবায়িত করার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থের সংস্থান করার বিকল্প প্রস্তাবও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নিকট তুলে ধরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কেউই এই দাবি এবং প্রস্তাবে কর্ণপাত করেননি। এই প্রস্তাবিত বাজেটেও রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ায় নি।
ত্রিপুরা রাজ্যেও ভয়াবহ বেকার সমস্যা, শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী জনগণের কাজের সংকট মজুরি কমে যাওয়া ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে প্রদেশ কংগ্রেস দাবি করে রেগায় ২০০ দিনের কাজ এবং মজুরি ন্যূনতম ৫০০ টাকা করার। অথচ কার্যকরী করে নি, উপরন্তু দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের পোর্টাল থেকে ত্রিপুরা রাজ্যেও ২১ লক্ষ ২২ হাজার ১২৯ জন শ্রমিকের মধ্যে রেগা আইনে নথিভুক্ত থেকে ৯ লক্ষ ১৮ হাজার ৩২৮ জনের নাম রেজিস্ট্রেশন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা এডিসি এলাকার বসবাসকারী। বাদ যাওয়া তালিকাভুক্তদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যাই হচ্ছে ধলাই জেলা।
এই জেলাতেই বাদ পড়া শ্রমিকের সংংখ্যা ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৮৩২ জন। অথচ রেগা আইনে পিছিয়ে থাকা জেলা হিসেবে ধলাই জেলা স্বীকৃত। এই জেলায় ১০০ দিনের কাজের জায়গায় ১৫০ দিনের কাজের সংস্থান আছে। অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার প্রায় সকল সদস্য, বিজেপি দলের বিভিন্ন নেতা-নেত্রী সহ ট্রিপল ইঞ্জিনের শরিক দলের নেতারও প্রায়ই প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, রেগা শ্রমিকদের কাজ পূর্বের তুলনায় নাকি বৃদ্ধি পেয়েছে । এবং শ্রমিকদের মজুরি বাড়া সহ সাধারণভাবে রজ্যের প্রতিটি মানুষের গড় আয় নাকি অনেকটাই বেড়ে গেছে। যা জাতীয় গড় আয়ের চাইতেও বেশি। অথচ সরকারি তথ্য থেকে যে হিসাব বেরিয়ে এসেছে তা থেকে দেখা যায় বর্তমান অর্থ বছরেও রেগার কাজ ত্রিশ/বত্রিশ দিনের বেশি হয়নি। তেমনি কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট বরাদ্দের ন্যায় রাজ্যেও বিশেষত ২০২১-২২ সাল থেকে প্রতি বছর রেগার বরাদ্দ কমিয়ে আসছে। যেমন ২০২০-২১ অর্থ বর্ষের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থ বর্ষে ত্রিপুরায় কোটি টাকা কম বরাদ্দে হয়।
২০২২- ২০২৩-এ বরাদ্দ আরও কমে দাড়ায় ৭৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ সালেও ৩০ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। আবার ২০২৪-২৫ অর্থ বর্ষে ৭৫ কোটি টাকা ছাটাই করা হয়। কাজ করানোর পর মজুরি কয়েক মাসেও মেলে না এমন শ্রমিক বাড়ানোর পাশপাশি বর্তমান নির্ধারিত মজুরিও মেজারমেন্টের নামে ১৮৫-১৯০ টাকা বেশি হয় না। এমনকি বন অধিকার আইন পাট্টাপ্রাপক শ্রমিকদের যেখানে ১৫০ দিনের কাজ দেওয়ার কথা তারাও সেই পরিমাণ পাচ্ছে না। অথচ দেখা যাচ্ছে শাসক দলের একটা অংশের নেতা নেত্রীরা কোনওরকম কাজ না করেই ১০০ দিনের পূর্ণ মজুরিও হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সমস্ত ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি বঞ্চনার শিকারই হচ্ছেন আদিবাসী অংশের পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকরা। অথচ তথাকথিত আদিবাসী প্রেমী বিশুদ্ধ তিপ্রাসা নেতা-নেত্রীরাও একেবারেই নিশ্চুপ। এই ক্ষেত্রে কাজ না পাওয়া, কাজ করে সময়মতো মজুরি না পাওয়া, শ্রমজীবী অংশের মানুষ বিভিন্ন সময় দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাস্তা অবরোধ সহ নানা আন্দোলন সংগঠিত করে আসছে। প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যের সমস্ত অংশের রেগা শ্রমিক সহ শ্রমজীবী জনগণ ও সার্বিকভাবে সকল অংশের শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনগণের কাছে আবেদন জানায় শ্রমজীবী জনগণের স্বার্থে রেগার শ্রম দিবস বাড়িয়ে ২০০ দিন করা, মজুরি ন্যূনতম ৫০০ টাকা নির্ধারিত করা এবং বিভিন্ন কারণে রেজিস্ট্রেশন বাতিল সহ সমস্ত শ্রমিকদের নাম অবিলম্বে রেগার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রাজ্যব্যাপী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আবেদন করা হচ্ছে।