স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ৩০ জানুয়ারি : রাজ্যে “অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ” করার লক্ষ্যে বুধবার মোহন ফাউন্ডেশানের আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করলেন জিবি হাসপাতালের এমএস সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্যে “অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ” করার লক্ষ্যে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মোহন ফাউন্ডেশান “অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ” করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করে।
বৃহস্পতিবার জিবি হাসপাতালের কাউন্সিল রুমে সাংবাদিক সম্মেলন করে জিবি হাসপাতালের এমএস ডাক্তার শঙ্কর চক্রবর্তী জানান “অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া নিয়ে সমগ্র দেশে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসছে মোহন ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের আধিকারিকদের সাথে বুধবার ওয়ার্কশপ করা হয়েছে। পরবর্তী সময় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্টেক হোল্ডার মিটিং করা হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের পাশাপাশি সমগ্র দেশের বহু মানুষ এমন কিছু রোগে আক্রান্ত হন যাদের চিকিৎসার একমাত্র মাধ্যম অঙ্গ প্রতিস্থাপন। সমগ্র বিশ্ব ও দেশ জুড়ে অনেক দিন আগে থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়। ত্রিপুরা রাজ্যেও অনেক দিন পূর্বে থেকে চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু কিডনি, লিভার ইত্যাদি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা রাজ্য পিছিয়ে রয়েছে। গত বছর থেকে রাজ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। দুই জন রোগীর কিডনি গত বছর প্রতি স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে কিডনি দান করেছেন রোগীর পরিবারের জিবিত লোক। বর্তমান সময়ে একটি পরিবারে বেশি লোক সংখ্যা থাকে না।
ফলে পরিবারের লোকের পক্ষে অঙ্গ দান সব সময় সম্ভব নয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সকল রোগীর মস্তিস্কের মৃত্যু হয় তাদের শরীর থেকে অঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।মনিপুরের সিজা হাসপাতালের চিকিৎসকদের সহযোগিতায় জিবি হাসপাতালে দুই জন রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সিজা হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে মোহন ফাউন্ডেশনের বিষয়ে জানতে পেরেছেন বলে জানান ডাক্তার শঙ্কর চক্রবর্তী। তিনি আরও জানান মোহন ফাউন্ডেশনের বিষয়ে জানার পর ফাউন্ডেশনের আধিকারিকদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের সাথে মিটিং করা হয়। অবশেষে বুধবার তাদের সাথে সরাসরি মিটিং করা হয়। মূলত বিনা রোগে কিংবা যান দুর্ঘটনায় যে সকল রোগীর মৃত্যু হয়, তাদের শরীর থেকে অঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রে যে সকল বাধ্য বাধকতা গুলি রয়েছে সেই গুলি নিয়ে কাজ করে মোহন ফাউন্ডেশন। জিবি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ২০২৩ সালে ৯৮ জন ও ২০২৪ সালে ১১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশের মস্তিস্কের মৃত্যু হয়েছে আগে। তাদের শরীর থেকে অঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীকে বাঁচানো যেত। ত্রিপুরা রাজ্যের বহু রোগী প্রতি বছর কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বহিঃরাজ্যে চলে যায়। সমগ্র দেশ ও দেশের বাইরে যারা মস্তিস্কের মৃত্যু হওয়া রোগীর শরীর থেকে অঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করে তাদেরকে আইনি পরামর্শ প্রদান সহ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে মোহন ফাউন্ডেশন। সাংবাদিক সম্মেলনে মোহন ফাউন্ডেশানের সদস্য তথা দিল্লি এইমস-এর নিউরো সার্জন প্রফেসর দীপক গুপ্তা জানান কোন রোগীর মস্তিস্কের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা ঘোষণা করার জন্য একটা কমিটি গঠন করতে হয়। সেই কমিটি অনেক কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কোন রোগীর মস্তিস্কের মৃত্যু ঘোষণা করে। মস্তিস্কের মৃত্যু হওয়া রোগীর শরীর থেকে অঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কি কি কাগজ পত্রের প্রয়োজন হয় সেই বিষয়ে সহযোগিতা করবে মোহন ফাউন্ডেশান। তিনি আরও জানান কোন রোগীর মস্তিস্কের মৃত্যু হওয়া মানে ঐ রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত। কোন রোগীর মস্তিস্কের মৃত্যু হলে তার হার্ট চলতে থাকে। এই অবস্থায় ঐ রোগীর অঙ্গ দান করতে পারে। এই ক্ষেত্রে ঐ রোগীর পরিবারের লোকজনদের বুঝাতে হবে। প্রতি বছর দেশে দেড় থেকে দুই লক্ষ কিডনি প্রয়োজন। ত্রিপুরা রাজ্যে প্রতি বছর দেড়শ থেকে দুইশ কিডনি প্রতিস্থাপন জরুরী প্রতি বছর। ত্রিপুরা রাজ্যেও মস্তিস্কের মৃত্যু হওয়া রোগীর শরীর থেকে অঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে কোন ধরনের শর্ত ছাড়া মোহন ফাউন্ডেশান ত্রিপুরা রাজ্যকে সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।