Tuesday, February 11, 2025
বাড়িরাজ্যট্র্যাফিক জ্যাম, ইন্টারনেট বিহীন এবং পর্যাপ্ত যাত্রী সেডের অভাবের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ...

ট্র্যাফিক জ্যাম, ইন্টারনেট বিহীন এবং পর্যাপ্ত যাত্রী সেডের অভাবের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ হলো তীর্থমুখ পৌষ সংক্রান্তি মেলা

স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১৫ জানুয়ারি : রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী তীর্থমুখের পৌষ সংক্রান্তি মেলা বিভিন্ন প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক তৎপরতায় শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ হলো এই বছরের তীর্থমুখের পৌষ মেলা। মঙ্গলবার রাতে মেলার সমাপ্তি ঘোষনা হতেই ঘর মুখী হয়েছে পূর্ণ্যার্থীরা। হিন্দু সনাতনীদের ঐতিহ্য, পরম্পরা, সংস্কৃতি ও ভক্তির এক মিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী তীর্থমুখের পৌষ সংক্রান্তি মেলা। রাজ্যের দামছড়া থেকে সাব্রুম, মান্দাই থেকে র‌ইস্যাবাড়ী সকল এলাকার পুরন্যার্থীদের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাজ্য আসাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম প্রভৃতি রাজ্য থেকেও পুণ্যার্থীরা ধর্মীয় ভাবাবেগের টানে গত দুই দিন ভিড় জমিয়েছে তীর্থমুখের পৌষ মেলায়।

 মকর সংক্রান্তির পূর্ণ লগ্নে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ, পিন্ডদান, অস্থি বিসর্জন এবং অবগাহনের জন্য হাজার হাজার পুর্নার্থী গোমতী নদীর উৎস স্থলে সমবেত হয়েছে। তবে এ বছর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা মেলায় আসতে না পারায় মেলার লোকসমাগমে কিছুটা ভাটা পড়েছে। রাজ্য সরকারের জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের পক্ষ থেকে রাজ্যের প্রতিটি ব্লক এলাকা থেকে একটি করে গাড়ি দেওয়া হয় পূণ্যার্থীদের মেলায় আসার জন্য। এছাড়াও বহু পুণ্যার্থীরা নিজেদের খরচে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে তীর্থমুখ মেলায় এসেছে। সোমবার ভোর সকাল থেকে প্রচুর সংখ্যক গাড়ির তীর্থমুখ মেলা মুখী হওয়ায় ট্রাফিক পরিষেবা নিয়ন্ত্রণে আনতে ট্রাফিক পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। ছোট ছোট প্রাইভেট গাড়ি ও বড় বাস গাড়ির সমাগমে সমস্ত পার্কিং জোন সকাল দশটার মধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পার্কিং জোনে জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করা শুরু হয়। রাস্তার দুই পাশে গাড়ি পার্কিং করার ফলে মেলায় আসা-যাওয়ার রাস্তায় ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। শিলছড়া ব্রু ক্যাম্প থেকে ১০ মিনিটের তীর্থমুখের রাস্তা অতিক্রম করতে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে যায়। যার ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় মেলায় আগত দূর-দূরান্তের পূর্ণার্থীদের।

ডটকমের যুগে দাঁড়িয়েও তীর্থমুখের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মেলায় আগত পুর্নার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। মন্ত্রী বাহাদুররা প্রতিবছরই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে অত্র এলাকায় মোবাইল পরিষেবা স্বাভাবিকের গল্প শুনিয়ে যান। মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, গত বছর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে অত্র এলাকায় মোবাইল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এবছর উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত হয়ে মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা জানান বন্যার জন্য নাকি এ বছর মোবাইল পরিষেবা স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি আবারো আশ্বস্ত করেন আগামী ২০২৬ সালের তীর্থমুখ মেলায় তিনি মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা উপহার দেবেন পূর্ণার্থীদের। মেলায় আগত পূর্ণ্যার্থীদের রাত্রি যাপন করার জন্য এ বছর মেলায় অস্থায়ী যাত্রী সেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি ওই অস্থায়ী যাত্রী শেডগুলি দূর দূরান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীদের টাকা দিয়ে ভাড়া নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনের কোন নজরদারি না থাকায় স্থানীয় কিছু অসাধু লোক এই কাজগুলি করছে বলে অভিযোগ। যার ফলে বহু পুর্ন্যার্থীদের এবছরও খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে।

এ মেলায় আগত পূর্ণ্যার্থীদের প্রতি বছরই নানা প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়। তারপরেও ধর্মীয় ভাবাবেগের টানে এবং আসছে বছর সব ঠিক হয়ে যাবে এই প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার পূণ্যার্থী এ মেলায় সমবেত হয়। একাংশ পূর্ণার্থীদের অভিযোগ এ মেলায় পূর্ণার্থীদের স্বাচ্ছন্দের চেয়ে বেশি মন্ত্রী আমলাদের পরিষেবা প্রদানে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এদিকে দুই দিন ব্যাপী তীর্থমুখের এই পৌষ সংক্রান্তি মেলায় এ বছর দোকান পাটের সংখ্যা কম ছিল। একাংশ ব্যবসায়ী জানান এ মেলায় দোকান ভিটি নিতে তাদের প্রচণ্ড ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী এ বছর মেলায় আসেননি। তবে এ বছর লোকসমাগম কিছুটা কম হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবছর মেলায় যে ঘাটতি গুলি হচ্ছে তার পুনঃমূল্যায়ন কখন‌ও হয় না। কারণ মেলা শেষ হতেই তীর্থমুখের কথা বেমালুম ভুলে যান প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে শুরু করে আমলা কিংবা মন্ত্রী বাহাদুররা। যে কারণে প্রতিবছর হাজার‌ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই শুধুমাত্র ধর্মীয় ভাবাবেগের টানে পূন্যার্থীরা তীর্থমুখে সমবেত হয়।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য