Tuesday, January 14, 2025
বাড়িরাজ্যসাত বছরে জনবিরোধী ডাবল ইঞ্জিন সরকার থেকে রাজ্যবাসীর প্রাপ্তি কি, প্রশ্ন কংগ্রেসের

সাত বছরে জনবিরোধী ডাবল ইঞ্জিন সরকার থেকে রাজ্যবাসীর প্রাপ্তি কি, প্রশ্ন কংগ্রেসের

স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১৪ জানুয়ারি : রাজ্যের ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের সাত বছর পূর্ণ হতে চলেছে। রাজ্যবাসী জানতে চায় তাদের প্রাপ্তি কী? মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন ছেড়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি বামফ্রন্ট সরকারের সাথে বর্তমান সরকারের তুলনা করে সমালোচনার ডাবল ইঞ্জিন সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, পূর্বেকার সরকার প্রায়ই যে কথাগুলি বলতো রাজ্যের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এসব যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না কারণ কেন্দ্রীয় সরকার সহায়তা করছে না।

রাজ্যকে ঋণ করে কাজ চালাতে হচ্ছে। ২০১৮ সালের পূর্বে রাজ্য সরকারের ঋণ ছিল ১১.৮৫১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে রাজ্যের বিজেপির নেতারা ২৯৯ টি প্রতিশ্রুতির ন্যায় কেন্দ্রের অঢেল অর্থ সাহায্য প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলো। কেন্দ্র- রাজ্যে একদলীয় সরকার হলে পর রাজ্যে হীরা যুগ চলে আসবে ইত্যাদি। এই সময়ে ২৯৯টি প্রতিশ্রুতির একটিও যেমন সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি, তেমনি কলসী ভর্তি টাকা আসা, মুখ্যমন্ত্রী থেকে সকল মন্ত্রীরা দিল্লি থেকে ফিরে এসেই হাজার হাজার কোটি টাকার প্রাপ্তির গল্প শুনানো ও ২৬.৪৪৬ কোটি টাকা ঋণ বেড়ে যাওয়া এর কোনওটারই যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এত টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে তার কোনও হদিশ রাজ্যবাসীর জানা নেই। তিনি আরো বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় বেতনক্রম পাননি, অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করা হয়নি, মহার্ঘ্য ভাতাও নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে না, সামাজিক ভাতা প্রাপকদের তালিকা থেকে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের নাম বাদ দেওয়া বা যোগ্য ৬০ হাজার মানুষের অন্তর্ভুক্ত না করা, রেগার কাজ কমতে কমতে ৩০-৩২ দিনে নেমে আসা, প্রতিশ্রুতিমতো মজুরি না বাড়া, নতুন নিয়োগ নেই বললেই চলে, শূন্যপদ বিলোপ করা, ঠিকা শ্রমিক, সাফাই কর্মীদের নিয়মিত মজুরি না দেওয়া। নতুন কোনও স্কুল খোলা তো দূরের কথা, চালু স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এইমস-র প্রতিশ্রুতি আজ ক্লোজড চ্যাপ্টার। নতুন কোনও হাসপাতালও হয়নি। নতুন রাস্তা, সেতু নির্মাণের খবর নেই। পূর্বেকার পরিকল্পিত রাস্তা, সেতু সমূহ যথাযথভাবে নির্মাণ না করার ফলে অল্প সময়েই সেই সমস্ত ভেঙে যাচ্ছে বা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জাতীয় সড়ক সহ প্রায় সব নির্মাণ প্রকল্পেই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের ফলেই নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। সরকার কতটা জনবিরোধী হলে পর সর্বকালের ভয়াবহ গত আগস্ট মাসের বন্যায় তার নিজের ঘোষণা করা প্রায় ১৭ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সহ ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির কথা জানিয়েছিলো। যদিও বাস্তবে তা আরও অনেক বেশি। জাতীয় কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলির জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবিকে উপেক্ষা করে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে ৭০৮৩.৫৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা চায় এর মধ্যে ৫৮৫৪.৮৩ কোটি টাকাই পরিকাঠামো মেরামতির জন্য।

 অথচ সরকারি হিসাব মোতাবেকই ২ লক্ষ ১৩ হাজার ২৭৮ জন কৃষক, ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৩২ জন মৎস্য চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিয়েও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, রাজ্য সরকার তথাকথিত উন্নয়নও সুশাসনের ফাঁকা বুলি প্রচার করে চলছে, তার সাথে বাস্তবের কোনও মিলই নেই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের লেবার ব্যুরো ও লেবার জার্ণালের সূত্র থেকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। তাতে দেখা গেছে ত্রিপুরা রাজ্যের শ্রমজীবী অংশের মানুষ শ্রমের বিনিময়ে যা মজুরি পায় তা দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় একেবারেই নিম্নমুখী। এমনকি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির তুলনায়ও অনেক কম। আরবিআই ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভের পঞ্চম রাউন্ডের যে তথ্য এ মাসে প্রকাশিত করেছে, তাতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যগুলোর অপুষ্টির কবলে আক্রান্ত মা এবং শিশু যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে, তার যে রিপোর্ট তাতে দেখা যাচ্ছে আমাদের রাজ্যে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে ৬৪.৩ শতাংশ রক্তাল্পতায় আক্রান্ত। মণিপুরে এই হার ৪২.৮ শতাংশ, মেঘালয়ে ৪৫.১ শতাংশ, মিজোরামে ৪৬.১ শতাংশ, নাগাল্যান্ডে ৪২.৭ শতাংশ। ১৫-৪৯ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যে ৬১.৫ শতাংশ, মণিপুরে ৩২.৪ শতাংশ, নাগাল্যান্ডে ২২.২ শতাংশ, মিজোরামে ৩৪ শতাংশ, মেঘালয়ে ৪৫ শতাংশ। রিপোর্টে চতুর্থ রাউন্ডের সময়ে আমাদের রাজ্যের অবস্থাও উল্লেখ করে।

সেই সময় ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি মহিলাদের হার ছিলো ৫৪.৪ শতাংশ, বর্তমানে বৃদ্ধির হার ৭.১ শতাংশ। ৬-৫৯ মাস বয়সি শিশুদের হার ছিলো ৪৮.৩ শতাংশ, বৃদ্ধির হার ১৬ শতাংশ। সর্বোপরি বেকারি হার বেড়ে যেমন হয়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশ, কৃষি উৎপাদন প্রতিবছরই পাল্লা দিয়ে কমছে। এই সরকারের শাসনকালে কর্মরত শ্রমিক কাজ হারিয়েছে প্রায় ১২২৬ জন। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের হিসাব অনুযায়ী ৯২ হাজারেরও বেশি ছেলেমেয়ে ন্যূনতম মজুরিতে যেকোনও কাজ করার জন্য রাজ্যে সুযোগ না পেয়ে বহিরাজ্যে বা বর্হিদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার ঢাউস ঢাউস বিজ্ঞাপনি প্রচার করে নিয়মিতভাবে বলে যাচ্ছে রাজ্যের মানুষের আয় বেড়েছে, চাকুরি সহ কাজের সুযোগ বেড়েছে, রাজ্যটা নাকি উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যের মানুষের সাথে প্রতারণা হয়েছে। একসাথে জড়িত মন্ত্রীদের একটা অংশ থেকে শুরু করে বিজেপির নেতারা, নিগো মাফিয়া এবং নেশা কারবারিরা। রাজ্যে তাদেরই আয় বাড়ছে। বিশেষ করে গত সোমবার বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন নেশার বাড়বাড়ন্ত স্বীকার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন সর্বভারতীয় একটি সংস্থার রিপোর্টে এসেছে ত্রিপুরায় লাগামহীন ভাবে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় ৯০ শতাংশ বেকাররা হতাশায় নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এর বিরুদ্ধে আগামী দিন বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করে বর্তমান ডবল ইঞ্জিন সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে বলে জানান তিনি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য