স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১৩ জানুয়ারি : আইজিএম হাসপাতালে টিকিট কাউন্টারে কর্মীদের দুর্ব্যবহার ঘিরে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হলো সোমবার। কিন্তু অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি টিকিট কাউন্টারে থাকা কর্মীর। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সোমবার সকালে ডাক্তার দেখাতে ৪৭ বছর বয়সী দিপালী দেবনাথ নামে এক মহিলাকে তার পরিবারের লোকজন আইজিএম হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন টিকিট কাউন্টারে গিয়ে রোগীর পরিবারের সদস্য মিষ্ঠু নাগ টিকিট দেওয়ার জন্য বলেন।
টিকিটের মধ্যে টিভি এসোসিয়েশনের স্ট্যাম্প যাতে লাগানো না হয় তার জন্য বলেন টিকিট কর্মীকে। কারণ তার কাছে ৫ টাকা ছিল না। স্ট্যাম্প লাগালে পাঁচ টাকা দিতে হয় কাউন্টারে। তখন কাউন্টার থেকে টিকিট কর্মী বলেন কেন তিনি ৫ টাকা দিতে পারবেন না? যদি পাঁচ টাকা নাই দিতে পারে তাহলে লাইন থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তারপর মিষ্টু নাগের সাথে সে টিকিট কর্মীর বাক বিতন্ডা শুরু হয়। একটা সময় পর টিকিট কাউন্টারের কর্মী বিনা স্ট্যাম্পে টিকিট দিতে বাধ্য হন। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি ত্রিপুরা যুক্তিবাদ বিকাশ মঞ্চে জানান তিনি। তখন যুক্তিবাদ বিকাশ মঞ্চ থেকে কিছু কর্মীরা এসে টিকিট কাউন্টারে জানতে চায় কেন মেয়েটিকে বিনা ট্রাম্পে এবং বিনা মূলে টিকিট দিতে রাজি হননি? টিকিটের স্ট্যাম্প লাগানো বাধ্যতামূলক নয়। মেয়েটির অভিযোগ তার শারীরিক দুর্বলতা ও পড়াশোনা নিয়ে গালিগালাজও করেছে টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা।
একটা সময়ের পর কাউন্টারের কর্মীদের সাথে ত্রিপুরা যুক্তিবাদ বিকাশ মঞ্চের কর্মীদের ঝগড়া এতটাই চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় আশেপাশের মানুষজন জড়ো হয়। তখন টিকিট কাউন্টারের মহিলা কর্মী মেয়েটিকে বারবার বলার চেষ্টা করছিল তিনি এমন কোন আচরণ মেয়েটির সাথে করেননি। এদিকে আরও এক ব্যক্তির অভিযোগ, সেই ব্যক্তিকেও নাকি পাঁচ টাকার না থাকলে লাইন থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন। আরো অভিযোগ ৫ টাকা খুচরো না দিতে পারলে দশ টাকায় রেখে দিচ্ছেন টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা। তাই এই বিষয়ে মেয়েটি পরবর্তী সময় মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্টের সঙ্গে দেখা করে একটি লিখিত অভিযোগ জানান। সঙ্গে ছিলেন ত্রিপুরা যুক্তিবাদ বিকাশ মঞ্চের সদস্যরা। পরে তারা বলেন মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. দেবশ্রী দেববর্মা তাদের বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। ডেপুটেশনের পর এই কথা জানিয়েছেন আইজিএম হাসপাতালে গিয়ে হেনস্থার শিকার হওয়া রোগীর পরিবারদের সদস্য মিষ্টু নাগ। তবে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে সরকারি হাসপাতাল গরিবদের জন্যই। গরিব মানুষ যাতে হাসপাতালে এসে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পায় সেটা নিশ্চিত করতে সরকার হাসপাতাল নির্মাণ করেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর্মীও নিয়োগ করেন। কারণ মৌলিক অধিকারের আওতায় আসে স্বাস্থ্য পরিষেবা। এটা দেশের প্রত্যেকটা নাগরিক পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এভাবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে গিয়ে যদি রোগীদের ৫ টাকার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া না হয় সেটা কিসের বিকাশ ত্রিপুরা? প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে রোগী আসে আই জি এম হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে এসে বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা বাড়ি ফিরে। সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের তথাকথিত কর্মযজ্ঞ করা কর্মীদের উদাসীনতা এবং শীত ঘুমের সুযোগ নিয়ে হাসপাতাল গুলিতে চলছে এহেন পরিস্থিতি। মুখ খোলার সুযোগ নেই কারোর!