স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৪ জানুয়ারি : গত ১৭ ডিসেম্বর কৈলাসহর মহকুমা কমিটির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী কংগ্রেস দলকে নিয়ে এবং বিধায়ক বীরজিৎ সিনহাকে নিয়ে আক্রমনাত্মক বক্তব্য রেখেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরজিৎ সিনহা পাল্টা জবাব দিলেন। ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আয়োজিত কৈলাসহর কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে বিরজিৎ সিনহা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামান, প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রুদ্রেন্দু ভট্টাচার্য এবং ফুলবাড়ি কান্দি গ্রামের মহিলা প্রধান।
দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছিলেন, ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং সি.পি.আই.এম দলের মধ্যে জোট না হলে এবং সি.পি.আই.এম দলের কর্মী সমর্থকরা ভোট না দিলে বিরজিত জিততে পারতেন না এবং বিধায়কও হতে পারতেন না। এর উত্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে বিধায়ক বিরজিত সিনহা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জোট না হলেও তিনি জয়ী হতেন। কৈলাসহর কেন্দ্র থেকে ছয়বার ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি এবং পাঁচবারই সি.পি.আই.এম দলের প্রার্থীকে হারিয়ে ভোটে জিতেছিলেন। সুতরাং হারের কোনো সুযোগ ছিলো না। তাছাড়া রাজ্যে ২০১৮ সালে বিজেপি দলের সরকার প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র কৈলাসহর আসনেই কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় দুই হাজার ভোটে লিড নিয়েছিলো। ২০১৯ সালে কিন্তু কংগ্রেস সি.পি.আই.এম জোট ছিলো না। ২০২৩ সালে জোট হয়ে ভোট বেড়েছে এটা স্বাভাবিক।
কিন্তু জোট না হলেও জিততেন বলে দাবি করেন। জিতেন বাবু কৈলাসহরে এসে যেভাবে কটুক্তি করেছেন তার তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানান তিনি। বিরজিত সিনহা আরো বলেন, জিতেন বাবু সতেরো ডিসেম্বর কৈলাসহরের দলীয় সভায় প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে মঞ্চে রেখে দীর্ঘ সময় বক্তব্য রাখায় মানিক সরকার পরবর্তী সময়ে বক্তব্য রাখতে রাজি ছিলেন না। কারন, বেশির ভাগ দলীয় কর্মী সমর্থকরাই চলে গিয়েছিল। আসলে জিতেন বাবুর অহংকার হয়ে গেছে। ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে জনজাতি রিজার্ভ আসনে না দাঁড়িয়ে সাব্রুমে সাধারণ আসনে দাঁড়িয়ে দুইশো থেকে আড়াইশো ভোটে জিতেছেন। জিতেন বাবু যেভাবে তিপরা মথা এবং প্রদ্যোত কিশোরের সমালোচনা এবং গালিগালাজ করেন তাতে যদি প্রদ্যোত কিশোর ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে সাব্রুম আসনে তিপরা মথার পক্ষ থেকে প্রার্থী দিতো তাহলে জিতেন বাবু কত হাজার ভোটে হারতেন তা রাজ্যের সবাই জানে। আরো বলেন , সি.পি.আই.এম ভারতের কোথাও নেই। শুধু কেরলে আছে তাও লোকসভায় নাই, সামনে তারা জিরো হয়ে যাবে। ২০২৩ সালে রাজ্যের বিধানসভা ভোটে সি.পি.আই.এম দল ৪৭ টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিলো। আর, কংগ্রেস দল ১৩ টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি দলের সাথে সমানে সমানে লড়াই করে। অন্যদিকে সারা রাজ্যে বিজেপি চল্লিশ শতাংশ ভোট পেয়েছে। পরবর্তী সময়ে জোট শরিক আই.পি.এফ.টি দলের এক শতাংশ ভোট যোগ করে একচল্লিশ শতাংশ হয়েছে। যাইহোক, জিতেন বাবু যেভাবে বলেছেন তাতে উনার নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও বিধায়ক বিরজিত সিনহা আরও বিস্ফোরক বলেন যে, সুধীর রঞ্জন মজুমদার রাজ্যের প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন। রাজ্যসভার ছয় বছরের সাংসদ ছিলেন। উনার বাড়িতে দুজন পুলিশ ছিলো।
এছাড়া সুধীর বাবুকে কিছুই দিতে রাজি ছিলো না তৎকালীন সি.পি.আই.এম সরকার। একটি কেরানী অব্দি দিতে চায়নি। সেইসময় কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে বিধানসভার অধ্যক্ষকে বার বার বলার পর জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যে, কিছুই দেওয়া হবে না। আর, এখন প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কার দেওয়া বিলাস বহুল গাড়ি চলেন? কার দেওয়া দ্বিতল বিশিষ্ট ডুপ্লেক্সে থাকেন? গাড়ির তেল কে দেয়? গাড়ির ড্রাইভারের বেতন কে দেয়? সুতরাং কারো সম্বন্ধে বলতে গেলে নিজে সৎ হয়ে বলতে হয়। তাছাড়া, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কৈলাসহর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত শ্রীনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস এবং সি.পি.আই.এম দলের মধ্যে কোনো জোট হয়নি। পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল ত্রিশংকু হবার পর পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস দল থেকে প্রধান এবং সি.পি.আই.এম দল থেকে উপ প্রধান হয়েছিল। সাম্প্রতিক কালে জিতেন চৌধুরী শ্রীনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় সভায় এসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেস, বিজেপি এবং তিপ্রা মথাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন এবং কুৎসা করে গেছেন। অথচ এর কিছুদিন পর জিতেন বাবুর নির্দেশ পেয়ে সি.পি.আই.এম দলের পঞ্চায়েত সদস্যরা কংগ্রেস দলের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয় এবং বিজেপি দলের সাথে মিলে পঞ্চায়েত গঠন করার আদেশ দেন। এটা কি ধরনের নীতি হলো? কৈলাসহর শহরে এসে দলীয় মহকুমা কমিটির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য জনসভায় যেভাবে কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে সমালোচনা এবং বিষোদগার করেছেন ঠিক সেইভাবে সাহস থাকলে আশারাম বাড়ি, রামচন্দ্র ঘাটে কিংবা খোয়াইতে গিয়ে এভাবে প্রকাশ্য জনসভা করে দেখান। কিছুদিন পূর্বে ধর্মনগরে তো প্রকাশ্য জনসভা করার চান্সই পায়নি এবং অনুমতিই আদায় করতে পারে নি। জিতেন বাবু বলছেন সি.পি.আই.এম দলের জন্য কংগ্রেস পঞ্চায়েত ভোটে ভালো রেজাল্ট করেছে। অথচ, সি.পি.আই.এম দল পঞ্চায়েত ভোটে কৈলাসহরে ৯৯ শতাংশ আসনে প্রার্থীই দিতে পারে নি। সি.পি.আই.এম দলের দশজন বিধায়ক তাদের এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেন নি। কারন তারা একেবারেই জনভিত্তি হারিয়ে ফেলেছেন। অথচ, বড় বড় কথা বলছে। দেখুন না জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।