Saturday, December 7, 2024
বাড়িরাজ্যকলঙ্ক ধামাচাপা দিতে মন্ত্রীর বৈঠক, সেদিনের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে ছিঃ ছিঃ রব

কলঙ্ক ধামাচাপা দিতে মন্ত্রীর বৈঠক, সেদিনের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে ছিঃ ছিঃ রব

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৮ নভেম্বর : শিক্ষক সমাজের মেরুদন্ড। শিক্ষক যদি ভুল করে তাহলে তার জন্য আইন রয়েছে, কিন্তু কোন অভিভাবকের ঠিক নয় সেই শিক্ষককে শোধরানোর জন্য আইন হাতে তুলে নেওয়ার এবং নিজের ছেলে মেয়েদের হাতে ঝাড়ু এবং জুতো তুলে দেওয়ার। কিন্তু গত শুক্রবার এমনই এক নজির বিহীন ঘটনার সাক্ষী হল রাজ্যবাসী। কিছু অভিভাবক এবং কিছু অভিভাবিকা নিজে এবং ছেলে মেয়েদের দিয়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ঝাড়ু পেটা এবং জুতো পেটা করেছে। ভাঙচুর করেছে স্কুলের সরঞ্জাম।

এই ঘটনাটি ঘটেছে কৃষ্ণপুর উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে। সোমবার এই ঘটনা ধাপা চাপা দিতে মন্ত্রীর উপস্থিতিতে হয় বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ২৯ কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, তেলিয়ামুড়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন দীপা দেব সহ বিদ্যালয় পরিদর্শক সহ এস.এম.সি -র কমিটি। উল্লেখ্য, কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ক অনিয়মিত শিক্ষক বিপুল বিশ্বাস বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের কুরুচিকর মন্তব্য করায় শিক্ষককে জুতো ও ঝাঁটা পেটা করলো এলাকাবাসী সহ ছাত্র ছাত্রীরা।

অভিযোগ মূলে জানা গেছে, বিপুল বিশ্বাস নামের কম্পিউটার বিষয়ক শিক্ষক “সিভিন লার্নিং চ্যাট প্রাইভেট লিমিটেড”- কোম্পানির চুক্তিবদ্ধ কর্মী হিসেবে কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই নাকি ছাত্রীদের কুরুচিকর মন্তব্য এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে আসছে। এই ঘটনার পর ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ দেববর্মা সহ অভিভাবকদের ঘটনা সম্পর্কে অবগত করলে প্রধান শিক্ষক মনোজ দেববর্মা কোন এক অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ ছিলেন। পরবর্তীতে উত্তেজিত অভিভাবকেরা এবং ছাত্রছাত্রীরা মিলিতভাবে শিক্ষক বিপুল বিশ্বাসকে ঝাড়ু ও জুতো পেটা করে বলে অভিযোগ। এমনকি ছাত্র ছাত্রীরা এবং অভিভাবকেরা ঐ শিক্ষককে অর্থনগ্ন করে জুতো, ঝাঁটা এবং বাঁশ দিয়ে দফায় দফায় প্রহার করে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলায় ছুটে যায় বিদ্যালয়ের এস.এম.সি কমিটির  সহ তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষক বিপুল বিশ্বাসকে থানায় নিয়ে আসে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার বিদ্যালয়ে গৃহকক্ষে এসএমসি কমিটির উদ্যোগে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষিকারা, বিদ্যালয় পরিদর্শক,অভিভাবক অভিভাবিকা, শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে সেদিনের ঘটনার সম্পর্কে অবহিত হন মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা। তারপর মন্ত্রী বলেন একজন শিক্ষকের উপর এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অমানুষিক। এলাকায় শিক্ষার হার কম। আগামী দিন যাতে ভালোভাবে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু রাজ্যে এই কলঙ্ক রচনা হওয়ার পর। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে দাবি উঠেছে ঘটনার যাতে সুষ্ঠু তদন্ত হয়। শিক্ষক যদি দোষী হয় তা যেমন শাস্তি হওয়ার প্রয়োজন, তেমনি যেসব অতি উৎসাহী অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা এ ধরনের কলঙ্কজনক ঘটনা সেদিন শিক্ষকের উপর সংগঠিত করেছে তাদেরও যাতে শাস্তি হয়। নাহলে এ ধরনের ঘটনা আগামী দিন অন্যান্য বিদ্যালয়েও ঘটতে পারে।

 তখন কিন্তু রাজ্যেরই দুর্নাম বাড়বে। সুশাসনে বিদ্যালয়ে যে কি ধরনের দূঃশাসন অভিভাবকদের উস্কানিতে ঘটে চলেছে তারই প্রমাণ রাখবে। সেদিন ঘটনায় যেসব অভিভাবক জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে যদি অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না হয় তাহলে প্রশ্রয় পাবে সমাজ। আর একের পর এক কলঙ্কের অধ্যায় রচনা হবে রাজ্যের বুকে। এদিকে অভিভাবকদের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক এবং নিন্দনীয় ঘটনায় রাজ্যজুড়ে গুঞ্জন উঠেছে এই যদি হয় অভিভাবকদের ভূমিকা তাহলে তারা কিভাবে ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ সঠিক দিশায় নিয়ে যাবে? আজকের ছেলে মেয়েরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাহলে যে অভিভাবকরা এই ঘটনায় যুক্ত তারা কি শেখাচ্ছে তাদের ছেলেমেয়েকে? তাহলে ভবিষ্যতে এই ছেলে মেয়েগুলি সুস্থ পরিবেশকে অসুস্থ করে তুলবে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য