স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৮ অক্টোবর : ধুর আমাদের বিধায়ক! ২০২৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিধায়ক নিজের পছন্দের কয়েকজনের দ্বারায় জয়ী হননি। জনগণের ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। যারা আজকে দলের সমর্থক তারা সেই সময় কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আজ বিধায়ক যদি ভাবেন তিনি এলাকার অভিভাবক হয়েছেন বলে তিনি শেষ কথা, তাহলে ভুল করছে।
বিধায়কের কথা শেষ কথা হবে না, জনগণের কথাই শেষ কথা হবে। নলছড় বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক কিশোর বর্মনের কারণে চরম ক্ষুদ্ধ শিব নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ এই কথা বলছেন। সোমবার তারা শিবনগর এলাকায় একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন বিধায়কের জন্য শিবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে। বিধায়ক কিশোর বর্মন চাইছেন শিবনগর পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে সিপিআইএম থেকে আসা শিপ্রা ঘোষকে নির্বাচিত করার জন্য। এবং এলাকার উপপ্রধান হিসেবে রঞ্জিত দেবনাথকে নির্বাচিত করার জন্য। কিন্তু পঞ্চায়েতের বাকি ছয় জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চাইছে প্রধান হিসেবে উজ্জ্বলা বিশ্বাস এবং উপপ্রধান হিসেবে শুকুমারকে করার জন্য।
এবং এর জন্য সমর্থন করছেন গ্রামবাসীও। কিন্তু বিধায়ক মানতে নারাজ। গত কয়েকদিন আগে শপথের দিনক্ষণ নির্দিষ্টভাবে ঘোষণা হয়েছিল। যথারীতি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিধায়ক যাননি বলে ব্লকের বিডিও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। এবং এটা বিধায়কের মতলবেই বানচাল হয়েছে। কারণ পরবর্তী সময়ে জনপ্রতিনিধি বিনয় পাল, উজ্জ্বলা বিশ্বাস, ঊমা দেবনাথ, রঞ্জিত দেবনাথ এবং প্রানতোষ পালকে ডেকে নিয়ে বিধায়ক অপমান করেছেন। বিধায়ক তাদের হুমকি সুরে বলেছেন তারা নাকি দলের যোগ্য নয়। তাদের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য এবং প্রধান করার সিদ্ধান্ত কিভাবে নিয়েছে দল? পরবর্তী সময়ে বিধায়ক এলাকার মানুষকেও জানিয়ে দেন নির্বাচিত ৬ জন জনপ্রতিনিধির কাছে যাতে কেউ না যায়। তারা অযোগ্য। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। জনপ্রতিনিধিরা সাংবাদিক সম্মেলনে আরো বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর তারা সিপিআইএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। ২০১৭ সালের বিরোধী দল থেকে তারা ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেছেন।
দলের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছে। আর এখন বিধায়ক বলছেন তারা অযোগ্য। গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা এবং প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন তারা যাতে বিষয়গুলি অবশ্যই খতিয়ে দেখে। এবং এভাবে চলতে থাকলে তারা আগামী দিন আইনের পথে হাঁটতে বাধ্য হবে। এমনকি বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলাকার উন্নয়নের জন্য গেলে তিনি নাকি তাদের সাথে বিমাতৃ সুলভ আচরণ করেন। এভাবে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। উল্লেখ্য, দলীয় শৃঙ্খলা হীন রাজ্য বিজেপির অত্যন্ত করুণ দশা। এমন বহু পর্যায়েতে আজও তারা শপথ গ্রহণ আধরা। আগরতলা শহরে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করে শুধুমাত্র সুশাসনের গল্প শুনিয়ে চলেছেন। দলের অন্দরে চলছে দুঃ শাসন। বিষয়টি নিচু মহল থেকে উপর মহল সকলের জানা থাকলেও কেউ মাথা ঘামাতে চাইছে না। বহু বিধানসভা কেন্দ্রে দলের দুই গোষ্ঠী এতটাই মারমুখী এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রেখেছে যে পরিস্থিতি যেকোনো সময় অবনতি হতে পারে। সবটা বিষয় একসাথে পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয় প্রদেশ বিজেপি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ-র কথা শুনতে নারাজ।
সব নিজেই নিজের দলের নেতা। বিধায়ক মন্ডল নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি এতটাই দলীয় নির্দেশ অমান্য করে চলেছে যে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই। যা এক কথায় নজির বিধি। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুরোপুরি ছন্নছাড়া অবস্থা। কিন্তু গত আড়াই থেকে তিন মাসে উন্নয়নের মুখ থুবড়ে পড়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলোর। অবাক করার বিষয় হলো, পঞ্চায়েত নিয়ে এতটা গভীরে যাওয়া রাজ্যের ইতিহাসে একপ্রকার ভাবে নজির বিহীন ঘটনা।