স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩ অক্টোবর : রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভালো স্থানে আছে বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী নিজের পিঠের চামড়া বাঁচাবার চেষ্টা করছেন। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে এটা মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্য নয়। ত্রিপুরা রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষের এই বক্তব্য। কারণ বর্তমান সরকারের আমলে রাজ্যের মানুষ প্রতিদিন জ্বলছে। মাথায় হাত দিয়ে মানুষ বলছে বিজেপি করে কি ভুল করলাম, নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মেরেছি
। তারাই এখন আবার দল ছাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার কাজ ও খাদ্যের সংকট, দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বন্যা দুর্গতদের সাথে অসহযোগিতা সহ একাধিক অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই কথা বললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার। এদিন রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে থেকে বামেদের প্রধান বিরোধীদল সিপিআইএমের ডাকে একটি বিক্ষোভ মিছিল সংঘটিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশ থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, পূর্বের সরকারের সময়ে খুনের মামলা পুনঃ তদন্ত করা হবে। কিন্তু সাত বছর হয়ে গেছে কেন মামলার পুনঃ তদন্ত করা হচ্ছে না? আরো কত বছর লাগবে! নিয়ম মেনে তদন্ত করুন।
মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে এক কথাই বললেন তিনি। তিনি বলেন গত ছয় বছরে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কিছু নেতা সংগঠক কর্মীর নামের তালিকা হাতে নিয়ে বিজেপি দলের দুর্বৃত্তরা খুন করেছে। মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দাবি মুখ্যমন্ত্রী এগুলির তদন্ত করুন। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। যারা খুন হয়েছে তাদের পরিবারের পাশে সরকার নৈতিক, মানবিক দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। গত ছয় বছরে একটা খুনের ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি, অপরাধীদের চিহ্নিত পর্যন্ত করা হয়নি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি সরকার। বামফ্রন্ট কমিউনিস্ট পার্টি যে ২০ থেকে ২২ জন কর্মী খুন হয়েছে তারাও মানুষ। তারা রাজ্যের নাগরিক। তারা রাস্তাঘাট, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ সমস্ত কিছু জন্য তারা লড়াই করেছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছয় বছরে সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক বক্তব্য পর্যন্ত দেখা যায়নি। তিনি আরো বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেনি। মূল সমস্যাটা সৃষ্টি করেছে সন্ত্রাসবাদীরা। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলন দুর্বল করা এবং উপজাতি থেকে অন উপজাতিদের আলাদা করা। অত্যাচারী স্বৈরাচারীদের ক্ষমতায় আনবার জন্য সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণ শুরু হয়েছিল রাজ্যে। এই খুনে প্রাক্তন মন্ত্রী বিমল সিংহকেও তারা রক্ষা দেয় নি। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, গত ছয় থেকে সাত বছরে রাজ্যে কোন সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ সংগঠিত হয়নি। কিন্তু ছয় থেকে সাত বছর বাদে শত শত জঙ্গি আত্মসমর্পণ করার কথা সামনে তুলে ধরছে সরকার। এবং তাদের জন্য সরকার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার ঘোষণা দিচ্ছে। এতদিন কোথায় ছিল তারা?
এতদিন কারা তাদের খাবার-দাবাদের ব্যবস্থা করেছে? এর জবাব মুখ্যমন্ত্রী কাছে নেই। এই উগ্রপন্থীরা যে রাজ্যের শত শত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে সেই তথ্য জানার চেষ্টা করা দরকার মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি আরো বলেন, যে তথ্যগুলি আজ তুলে ধরা হচ্ছে সে তথ্য অনুযায়ী তদন্ত করার সাহস মুখ্যমন্ত্রী এবং তার সরকারের নেই। আসলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে মুখ্যমন্ত্রী। এভাবে বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। এদিন শ্রী সরকার আরো বলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার শুধু ত্রিপুরা রাজ্যে নয়, সারা দেশে যুবকদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। সবচেয়ে বেশি এই যুবকরাই বিভ্রান্তের শিকার হয়েছে বিজেপি সরকার দ্বারা। তিনি বলেন, চাকরি কি হাতের মোয়া? ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যুবকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকারে এসে মিসকল দিলে নাকি চাকরি মিলবে। এবং রাজ্যের বড় অংশের বেকার মহল তাদের বিভ্রান্তের ফাঁদে পা দিয়েছিল। আজ বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের ছয় থেকে সাত বছরে বেকাররা কর্মসংস্থানের জন্য দিশেহারা। এমনটাই বললেন মানিক সরকার। আয়োজিত এদিনের সমাবেশে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী থেকে শুরু করে অন্যান্য নেতৃত্ব। এদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে কয়েক শতাধিক সিপিআইএম কর্মী সমর্থক মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়।