Tuesday, January 21, 2025
বাড়িরাজ্যনাটক মঞ্চস্থ তৈরি করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আত্মসমর্পণকারী বৈরীদের সড়ক অবরোধ

নাটক মঞ্চস্থ তৈরি করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আত্মসমর্পণকারী বৈরীদের সড়ক অবরোধ

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৫ সেপ্টেম্বর : দীর্ঘ তিন দশক রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছিলে এন এল এফ টি এবং এ টি টি এফ। সাধারণ মানুষের রক্তের বন্যা হয়েছে রাজ্যে। এই উগ্রপন্থীদের জন্য মানুষ এসকর্ট নিয়ে জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম বাধা ছিল এই উগ্রপন্থী গোষ্ঠী।

উগ্রবাদীদের আস্ফালনে রাজ্যে বহু মানুষ বাড়ি ঘর ছেড়ে এখনো উদ্বাস্তুর জীবন কাটাচ্ছে। সরকার উগ্রবাদীদের লাগাম টানতে সময়ে সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উগ্রবাদীরা যেন হিংসার জীবন ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে তার জন্য সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। বহু উগ্রবাদী সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসে। পাহাড়ের জঙ্গলে অনাহারে কষ্টের দিন কাটানো ত্যাগ করে বহু উগ্রবাদী ইতিপূর্বে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসা বৈরিদের সরকার থেকে দেওয়া হয় ঢালাও প্রতিশ্রুতি। সেই সকল প্রতিশ্রুতির সিকি ভাগও এখনো বাস্তবায়িত হয় নি। এরই মধ্যে সম্প্রতি কেন্দ্র, রাজ্য ও উগ্রবাদীদের দুইটি সংগঠনের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়। সেই চুক্তির ভিত্তিতে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসে ৫৮৪ জন বৈরী। তারপরও শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মহলে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। কারন এত সংখ্যক বৈরি কোথা থেকে এসেছে।

শান্তি চুক্তি মোতাবেক এই সকল বৈরিদের মাসিক ভাতা সহ দেওয়া হবে একাধিক সুবিধা। কেন্দ্রীয় সরকার তার জন্য আর্থিক প্যাকেজও ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার তারাই জামাই আদরে ফিরল সাধারণ জীবন যাপনে। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের মাসিক ভাতা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করার কথা বলা হলেও যারা তার পূর্বে বিভিন্ন সময়ে আত্মসমর্পণ করেছে তাদের জন্য কিছুই বলা হল না। এমনকি আত্মসমর্পণের সময় তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়েও কোন কিছু বলা হয় নি। ফলে এই সকল বৈরিরা বুধবার উদয়পুর-অমরপুর সড়ক অবরোধে বসে। সড়ক অবরোধকারিদের অভিযোগ তাদের দাবি পুরনে প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। বহুবার তারা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে। তারপরও কাজের কাজ কিছুই হয় নি। তাই বাধ্য হয়ে এইদিন তারা সড়ক অবরোধে সামিল হয়েছে। সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অমরপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক।

তিনি সড়ক অবরোধকারিদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন কথায় কথায় সড়ক অবরোধ মেনে নেওয়া হবে না। তাদের দাবি থাকলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকের সাথে দেখা করে আলোচনা করার জন্য বলেন। মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের সাথে আলোচনার পর আত্মসমর্পণকারি বৈরিরা তাদের সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। প্রশ্ন হচ্ছে একদিকে একসাথে এক ঝাক বৈরী আত্মসমর্পণের নামে নাটক মঞ্চস্থ করা হল। অপরদিকে কেন দাবি আদায়ের জন্য আত্মসমর্পণকারি বৈরীদের সড়ক অবরোধ করতে হচ্ছে ? সরকার সত্যি কি চাইছে। একসাথে এক ঝাক বৈরি আত্মসমর্পণের নাটক মঞ্চস্থ করার পিছনে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে নেই তো ? সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে মঙ্গলবার আত্মসমর্পণকারি বৈরিদের জন্য মাসিক ভাতা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিষয়ে ঘোষণা প্রদান করা হলেও, একটা সময় উগ্রবাদীদের কারনে যারা বাড়ি ঘর ছেরে এখনো উদবাস্তুর জীবন যাপন করছে, সরকার তাদের জন্য একটা কথাও বলছে না। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও বলেন নি। যাদের দ্বারা একটা সময় মানুষের রক্ত ঝরেছে, মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে, মানুষ প্রান হারিয়েছে, বর্তমানে তাদের বসানো হল সম্মানের আসনে। আর যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তারা এখনো বঞ্চনার শিকার। সত্যি বিস্ময়কর বিষয়। সরকার কি করতে চাইছে। আগামিদিনে ত্রিপুরা রাজ্য কোন দিকে যাবে। এই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সচেতন মহলে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য