স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২ এপ্রিল : বর্তমান কর্পোরেশন একটি লুটের রাজত্ব হয়ে গেছে। তপশিলি জাতি অংশের মানুষের জন্য কোন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না। কিন্তু তপশিলি সম্প্রদায়ের মানুষকে বাদ দিয়ে সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের বিশেষ নজর ছিল তাদের কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা অসহায়। সম্মান মর্যাদা কিছুই পাচ্ছে না। তারা এখন বেঁচে থাকার জন্য অন্য কাজকে সম্মান করছে। কিন্তু এগুলি বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে মুছে গেছে। শুধু বক্তৃতা চলছে, বিজ্ঞাপন ছাপাচ্ছে।
বর্তমানে মানুষের অবস্থা গভীরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করছে না এ সরকার। ত্রিপুরা তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতি উদ্যোগে জনতার আদালতে চার্জশিট পেশ কর্মসূচি বক্তব্য রেখে এমনটাই বললেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। এদিন রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন এর সামনে জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা আরো বলেন, গত চার বছরে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান নানা অংশের মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতি আদালতের সামনে পেশ করেছে। ব্যাপক উদ্যোম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এবং রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে যে কর্মসূচি করেছে। তপশিলি অংশের মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ, যন্ত্রণাকর। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে একটার পর একটা দিনরাত তাদের কাটাতে হচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকার যখন ছিল তখন এমন অবস্থা ছিল না। কারণ পিছিয়ে পড়া মানুষের দিকে বামফ্রন্ট সরকারের নজর ছিল সর্বাধিক। কিন্তু চার বছরে সবকিছু উলটপালট করে দিয়েছে। শুধু জলাশয় থাকলেই মাছের চাষ হয় না, পূর্বতন সরকারের আমলে মাছের পোনা বিতরণ করে মাছকে একটি শিল্পের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ফলে ত্রিপুরার মাছের চাহিদা পূরণ করে বহিঃরাজ্যে মাছ রপ্তানি করা হতো। এগুলি সব শেষ হয়ে গেছে। তপশিলি অংশের বেকারদের দিয়ে যাতে মাছের খাবার তৈরি করা যায় তার জন্য কারখানা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এগুলি শেষ হয়ে গেছে। মাছের খাবার তৈরীর কারখানা গড়ে উঠেনি রাজ্যে। এবং বিদেশ থেকে মাছ চাষের উন্নত যন্ত্রপাতি আনা হয়েছিল। কিন্তু এগুলি বর্তমান সরকারের আমলে কিছুই নেই। এবং কিছুই আনা হচ্ছে না। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। একই অবস্থা চর্ম শিল্পীদের। এ শিল্পের জন্য একটি কারখানাও পাওয়া যায়নি। আধুনিক বাজারে এ শিল্পের যাবার বিকাশ হচ্ছে, তা প্রতিযোগিতা করে বেঁচে থাকার কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের সময় আয় উপার্জন করতে এগিয়ে আসা সকলকে সহযোগিতা করা হয়েছিল। অপরদিকে লন্ডী শিল্পী যাতে বেঁচে থাকতে পারে তার জন্য সহযোগিতা করেছে বামফ্রন্ট সরকার বলে জানান বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার।
ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোভিডের সময় মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। জিবি হাসপাতাল নরককুণ্ড হয়ে গেছে। অক্সিজেনের অভাবে মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সেখানে মানুষ যেতে চাননি। একই অবস্থা শিক্ষাক্ষেত্রে। অধিকাংশ স্কুল বেসরকারিকরণের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যারা বেসরকারি কাজে নিযুক্ত তারা আধপেটা খেয়ে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করানো দুর্বিষহ হয়ে গেছে। সুতরাং সরকারটা কোথায়? সরকারটা সম্পূর্ণ অমানবিক। এগুলি তো আগে কথা ছিল না। কিন্তু আসলে মিথ্যার উপর ভিত্তি করে এই সরকারকে তারা সাজিয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য দায়ী বর্তমান জনবিরোধী সরকার। সারাদেশ যেভাবে চলছে, ত্রিপুরা একই ভাবে চলছে। এই পরিস্থিতি চলতে দেওয়া যায় না। যারা তপশিলি অংশের মানুষের উপর এবং বেকার যুবক-যুবতীদের অধিকার হরণ করছে তাদের উপর আরো কয়েকগুণ চাপ বাড়াতে হবে। তাই এদিন লড়াই শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।
যারা ভিশন ডকুমেন্ট এর নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে তারা ৪২০ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করলেন এদিন মঞ্চ থেকে জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন এই সরকার সম্পূর্ণ একটা প্রতারক। মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিষ্টিত হয়েছে। তাই লড়াই তীব্রতর করার আহ্বান জানান তিনি।
সম্পূর্ণ প্রতারণা করেছে বিজেপি ও আইপিএফটি জোট সরকার। প্রতিশ্রুতি তারা পালন করিনি। চার বছরে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রমাণ হয়েছে। তাই সরকার থেকে তাদের সরাতে আহ্বান জানান ত্রিপুরা তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুধন দাস। এদিন জনসভার আগে একটি মিছিল সংঘটিত করা হয় প্যারাডাইস চৌমুনী থেকে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে জনসভা সংঘটিত করে।