Friday, September 13, 2024
বাড়িরাজ্যসন্ত্রাসের অভিযোগ! ভোটদানে বাধা, নির্দল প্রার্থী আক্রান্ত, ভোট বন্ধ রাখা, মথার বিধায়কের...

সন্ত্রাসের অভিযোগ! ভোটদানে বাধা, নির্দল প্রার্থী আক্রান্ত, ভোট বন্ধ রাখা, মথার বিধায়কের দ্বারা বিজেপি কর্মী নিগ্রহ, ছাপ্পা ভোট

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৮ আগস্ট  : বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাস, ভোটদানে বাধা, নির্দল প্রার্থী আক্রান্ত, ভোট বন্ধ রাখা, বিধায়কের দ্বারা বিজেপি কর্মী নিগ্রহ, ছাপ্পা ভোট সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলি সংঘটিত হয়েছে বিলোনিয়া, উদয়পুর, সোনামুড়া, ভবানীপুর, খোয়াই এবং রামচন্দ্র ঘাটে। দিনভর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা হুজ্জতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ভবানীপুর। সকাল থেকে সন্ত্রাস চোখ রাঙিয়েছে ভবানীপুরে।

অভিযোগ উঠেছে ছাপ্পা ভোটের। এবং বিরোধীরা এই অভিযুক্তি তুলেছে শাসকদলের দিকে। এদিন মারপিটের ঘটনায় দুই পক্ষের নেতৃত্ব ও কর্মী সমার্থক আক্রান্ত হয়েছে। জানা যায় এদিন ভবানীপুরে সহ-সভাপতি রতন দত্ত নিজের ভোট দেওয়ার পাশাপাশি আরো কয়েকজনের ভোটার স্লিপ নিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। বিষয়টি বিরোধী দলের কর্মী সমর্থকদের এবং প্রিসাইডিং অফিসার নজরে আসে। তখন প্রিসাইডিং অফিসারকে ভবানীপুরের সহ-সভাপতি রতন দাস জানান অন্ধ ব্যক্তিদের ভোটা স্লিপ নিয়ে তিনি ভেতরে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু সেটা বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি বিরোধী দলের কর্মীরা এবং পুলিং এজেন্ট। সাথে সাথে বাধা দিতেই শুরু হয় বিজেপি নেতা রতন দত্তের মারমুখী আক্রমণ। খবর পেয়ে ছুটে আসে তার পরিবারের লোকজন। তারা এসে বিরোধী দলের কর্মী সমর্থক এবং এজেন্টকে মারধর করে বলে অভিযোগ। কিন্তু পাল্টা প্রতিরোধ করে তোলেন বিরোধী দলের কর্মীরা। তখন ঘটনার স্থল থেকে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতা রতন দত্ত।

 তখন কিছু শাসক দলের কর্মীরা এগিয়ে এসে বিরোধীদের সাথে আবার ঝামেলা বাধে। এই ঝামেলায় ভোট কেন্দ্রে ভাঙচুর চালায়। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ছুটে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়ে এলাকায় মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে রাস্তা অবরোধ করে ঘটনার সুবিচার চায়। এরই মধ্যে আবার এলাকার বিধায়ক বিন্দু দেবনাথ এসে পরিস্থিতি আরো বেশি উত্তপ্ত করে তোলে। বন্ধ হয়ে যায় ভোট প্রক্রিয়া। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বিজেপি নেতৃত্ব। তারা কথা বলেন গ্রামবাসীর সাথে। কিন্তু পরিস্থিতি কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তারপর এলাকাবাসী দাবি তোলে অবিলম্বে ভোট প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য। এলাকাবাসীর চাপে পড়ে রিটার্নিং অফিসার এবং প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু করেন।   ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুললেন গোমতী জেলা পরিষদের ১২ নং কেন্দ্রের কংগ্রেস দলের প্রার্থী নিত্যগোপাল সাহা।

অভিযোগ কাকড়াবন আর.ডি ব্লকের অধীন তোলামুড়া পালপাড়া এলাকার ভোট কেন্দ্রে পরিদর্শনে গেলে গাড়ি থেকে নামতেই মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতিকারীরা। এবং গাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। তিনি অভিযোগ করেন এই কেন্দ্রে তাঁর সাথে থাকা পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ তোলেন। এই ঘটনায় কাকড়াবন থানায় মামলার দায়ের করা হবে বলে তিনি জানান।   ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ভোটগ্রহণ শুরুতেই রক্তাক্ত নির্দল প্রার্থী বিমল শীল শর্মা। অভিযোগ শাসক দলের বিজেপি -র কর্মীদের দিকে। ঘটনা বিলোনিয়া মহকুমার ভারতচন্দ্র নগর ব্লকের অন্তর্গত নেতাজি সুভাষচন্দ্র নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই এবং তিন নং ওয়ার্ডের সুভাষ কলোনি জেবি স্কুল ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। জানা যায় নেতাজি সুভাষ নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাতটি ওয়ার্ড বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেন ,বাকি দুইটি কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী দাঁড়িয়েছে।

এদিন শাসক দলের কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর আহত প্রার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিলোনিয়া মহকুমা হাসপাতালে। এর ফলে সাথে সাথেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে গোটা পঞ্চায়েত এলাকা। খবর পেয়ে ছুটে যান জেলাশাসক স্মিতা মল এম এস, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, বিডিও কাবেরী নাথ সহ বিশাল পুলিশ এবং টিএস আর বাহিনী। পরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোট কেন্দ্র ভোট গ্রহণ হয়।অপরদিকে রামচন্দ্র ঘাটের এক ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বিজেপি কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠল এলাকার বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মার বিরুদ্ধে। তিনি এদিন ৮ টি গাড়িতে মথার বহিরাগত কর্মী সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় পৌঁছায়। তারপর বিজেপি কর্মীরা যখন মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও করছিলেন তখন তিনি এসে বিজেপি কর্মীদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। তখন বিজেপি কর্মীরা জানতে চায় কেন তিনি বহিরাগতদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন। এবং এভাবে বহিরাগতদের কেন ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে? এর জবাব দিতে না পেরে তিনি বিজেপি কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ।

 বিজেপি কর্মীদের আরো অভিযোগ তাদের শরীরে নাকি হাত দিয়েছে বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা এবং পাড়াতে কিভাবে তারা থাকতে পারবে সেটাও তিনি দেখে দেবেন? এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। এদিকে খোয়াই আর ডি ব্লকের অন্তর্গত বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ভোটাতে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে জেলা শাসকের দারস্থ হয় খোয়াই সিপিআইএম মহকুমা কমিটির নেতৃত্ব। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতরা গিয়ে ভিড় জমায়। ছাপ্পা ভোট দিচ্ছে বলে অভিযোগ। আম্বেদকর স্কুল, পদ্মসিঙ্গি ছাড়া, মধ্য সিংহী ছাড়ার দুই নং স্কুল, অজগর টিলা সহ বেশ কিছু জায়গায় বামফ্রন্ট সমর্থিত পরিবারগুলিকে ভোট দিতে যেতে বাধা দেয়। আরো অভিযোগ তুলেন পূর্ব সোনাতলা একটি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী এবং এজেন্টকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ বিষয়গুলি নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব। এদিকে সোনামুড়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি দীপক চক্রবর্তীর অভিযোগ তুলেছেন মোহনভোগ ব্লকের পূর্ব চন্ডীগড়, তেল কাজলা, বানিয়া ছড়া এবং কলমক্ষেত গাঁও সভাতে ব্যাপকভাবে ছাপ্পা ভোট হয়েছে। বিশেষ করে পোলিং এজেন্টদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে সেক্টর অফিসারকে জানানো হলেও উপযুক্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। একই অবস্থা নলছড়ের একটি জেলা পরিষদের আসনের নির্বাচনে। কংগ্রেসের এজেন্টকে বেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি বলে জানান। বক্সনগরে দুটি জেলা পরিষদের নির্বাচন অর্থাৎ ১৫ এবং ১৭ নং আসনের এজেন্ট এর ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দেয় শাসক দলের দুর্বৃত্তরা। অপরদিকে কাঠালিয়া ব্লকের অন্তর্গত রাঙামুড়াতে ঝামেলা শুরু হয়েছে। সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রতন ভৌমিক সাংবাদিকদের বলেন, রাজ্যের এই এি- স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে বাগমা কড়াই মুড়া, কাঁকড়া বন, জামজুরি সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় শাসকদল বিজেপি বিরোধী দলের প্রার্থী, সমর্থকদের উপর অত্যাচার, ভোট কেন্দ্র থেকে প্রার্থী সহ এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ছাপ্পা ভোট দিতে থাকে শাসকদলের সমর্থিত কিছু সমাজদ্রোহীরা। এই নির্বাচন গনতন্ত্রের পক্ষে কলঙ্ক বলে উল্লেখ করেন রতন ভৌমিক। তিনি বলেন এই নির্বাচন নিয়ে আগামী দিনে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এর জবাব দিবে বলে জানান তিনি। সমস্ত ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিরোধীরা। বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য