Wednesday, March 26, 2025
বাড়িরাজ্যগন্ডাছড়ার শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে সরকারের ভূমিকা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল

গন্ডাছড়ার শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে সরকারের ভূমিকা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১ আগস্ট : শ্মশানপুরীতে পরিণত হয়েছে গন্ডাছড়া! ১৬৫ পরিবারের চার শতাধিক মানুষ এখনো অনিশ্চিতায় দিন কাটাচ্ছে গন্ডাছড়া স্কুলের শরণার্থী শিবিরে। তাদের প্রশ্ন বাড়িঘর ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। শ্মশান বানিয়ে দিয়েছে গ্রাম! বাড়িঘর কিছু নেই, লুটপাট করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে নিষ্ঠুর দুর্বৃত্তরা। বাড়ি থেকে গরু, হাঁস, মোরগ সব কিছু নিয়ে গেছে। এখন তাদের ভিক্ষা করে খাওয়ার মত অবস্থাও নেই। শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা নিয়ে কোথায় যাবে? পড়াশোনাও একেবারে বন্ধের পথে ছেলে মেয়েদের। বই খাতা সবকিছু পুড়ে ফেলেছে।

 কিন্তু শেষ সম্বল টুকু বাড়ির মাটি রয়ে গেছে, সেই ভিটেমাটিতে কবে যেতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা মিলছে না প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এই ধরনের ঘটনা কি সভ্য সমাজে হতে পারে সেটা একবারের জন্য কেউ ভাবতে পারে না। কিন্তু এই ঘটনার সাক্ষী হয়েছে গন্ডাছড়াবাসী। এই কথাগুলি শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সর্বহারা এক বৃদ্ধার। বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের পরিষদীয় দল গন্ডাছড়ায় গিয়েছিলেন। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, বিধায়ক রাম দাস, বিধায়ক সুদীপ সরকার, বিধায়ক নয়ন সরকার, প্রাক্তন মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া, প্রাক্তন বিধায়ক সুধন দাস, গন্ডাছড়া পুরনো বাসিন্দা নকুল দাস এবং স্থানীয় নেতা ললিত কুমার ত্রিপুরা। তাদের সামনে এদিন শরণার্থী শিবিরে অসহায় পুরুষ, মহিলা জানান, গত ১২ জুলাই সন্ধ্যা থেকে গ্রামে দুর্বৃত্তদের আনাগোনা শুরু হয়েছিল। এই বিষয়ের সাথে সাথে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল ১৬৩ ধারা জারি রয়েছে। নিরাপদে বাড়িতে থাকার জন্য। কিন্তু রাতের বেলা ভয়াবহ পরিস্থিতি শুরু হয়ে যায় গ্রামে, গ্রামে।

 বাড়ির ঘরে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে লুটপাট, মারধর শুরু করে দুর্বৃত্তরা। তারপর ঘরে ঘরে মধ্যে আগুন লাগিয়ে দেয়। বীভৎস দৃশ্য দেখে হাতের মুঠোতে জীবন নিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায় শতশত মানুষ। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণই ছিল না পরিস্থিতি। দমকল কর্মীরাও ঘটনাস্থলে আসেনি। বর্তমানে তারা গত ১৩ এবং ১৪ জুলাই থেকে এ শরণার্থী শিবিরে থাকছে। এই শরণার্থী শিবিরেও চরম অব্যবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে বলে তাদের দাবি। দুবেলা খাবার দেওয়া হলেও ঘুমানোর জন্য পলিথিন দিয়েছে। এই পলিথিনের মধ্যে দীর্ঘ কুড়ি দিন ধরে তারা দিনরাত কাটাচ্ছেন। পানীয় জলের জন্য একটি ফিল্টারের ব্যবস্থা হয়নি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো মশারি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি শিবিরে। যার কারণে বর্তমানে শিবিরের থাবা বসিয়েছে জ্বর। থরথর করে কাঁপছে রোগীরা। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার মত পর্যন্ত লোক নেই। নেই চিকিৎসা পরিষেবা। সবকিছু সরজমিনে প্রত্যক্ষ করে এই অভিযোগগুলো তোলেন বিরোধী দলের নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় জল বাহিত রোগও দেখা দিতে পারে শিবিরের। এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিবিরে থাকা সর্বহারা মানুষকে। জিতেন্দ্র চৌধুরীর কাছে এদিন অসহায় মানুষ জানায় তাদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবারের ২৫ হাজার টাকা সরকারি সহযোগিতা জুটেছে, কিন্তু এখনো বহু পরিবারের ব্যাংক একাউন্টে ২৫ পয়সাও ঢুকেনি। বিরোধী দল নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী আরো জানান, ঘটনার এতদিন পরেও যখন গত কয়েকদিন আগে বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল গন্ডাছড়ায় আসতে চেয়েছিল কখন দাঙ্গাবাড়ীতে কেন পুলিশ বাধা দিয়েছে সেটা আজকে এসে প্রত্যক্ষ করছেন। তিনি বলেন প্রশাসনের বাধা দেওয়ার পেছনে কিসের এত লজ্জা, কিসের এত সংকোচ এবং কি কারণ ছিল সেটা আজ প্রত্যক্ষ করেছেন। এসব গুলি বিষয় সরকারের কাছে যেমন তোলা হবে, তেমনি বিধানসভায় সরকারের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। এর জবাব দিতে হবে সরকারকে। সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণ ষোল আনা না হলেও বারো আনা দিতে হবে। পাশাপাশি দ্রুত নিরাপত্তার ক্যাম্পের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনঃবৃত্তি না ঘটে। এ ধরনের ঘটনা আগেও সংগঠিত করার চেষ্টা করত দুর্বৃত্তরা, কিন্তু প্রশাসন দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনত। ১২ জুলাই ঘটনা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া মাত্রই জেলা শাসক, রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশককে জানানো হয়েছিল, কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া এই ঘটনা ঘটেছে। এবং এই ঘটনার জন্য কারা ইন্ধন দিয়েছে সেটাও জানা আছে। আরো বলেন এই অনভিপ্রেত ঘটনা সরকার এবং শাসক দলের বদান্যতায় হয়েছে। যে মহকুমাতে সন্তান বিক্রি হয়, রেশন কার্ড বন্ধক দিয়ে খাবার যোগাতে হয় এবং রেগার কাজ হয় না সেই মহকুমা সরকার এ ধরনের আনন্দ মেলা আয়োজন করেছে।

আনন্দ মেলায় ঘিরে রাত দশটা বারোটা পর্যন্ত জুয়ার আসর বসেছে। একে কেন্দ্র করে পরমেশ্বর রিয়াং এর মৃত্যু হয়েছে। তারপরেই এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। তাই পরমেশ্বর রিয়াং -এর মৃত্যু যেমন নিন্দনীয়, তেমনি পরে যে ঘটনা গোটা মহকুমাতে হয়েছে সেটাও নিন্দনীয় এবং দুর্ভাগ্যজনক। মানুষের বাড়িঘর লুটপাট করে যারা আগুন লাগিয়েছে তারা হিটলারের মত কাজ করেছে। তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তবে পরিস্থিতি যাতে আর খারাপ না হয় তার জন্য গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান বিরোধী দলনেতা। এদের বিরোধী দলনেতা সহ প্রতিনিধি দলের বাঁকে সদস্যরা ৬০ কার্ড, ৩০ কার্ড সহ সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। ঘটনার নিন্দা জানান। এদিকে এদিন মৃত যুবক পরমেশ্বর রিয়াং -এর বাড়িতে যান। তার বাবার সাথে কথা বলেন বিরোধী দলের এই প্রতিনিধি দল। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারপর অসহায় মানুষের পাশে আছে বলে আশ্বস্ত করে বামফ্রন্টের প্রতিনিধি গঙ্গাছড়া থেকে আগরতলা ফিরে আসেন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য