স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৫ মার্চ : মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা ত্রিপুরা চা মজদুর ইউনিয়নের নেতা বীরজিৎ সিনহা। মন্ত্রী ভগবান দাসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হবে বলে শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান বীরজিৎ সিনহা। ত্রিপুরা চা মজদুর ইউনিয়নের এক্সিকিউটিভ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবার। বৈঠকে রাজ্যের চা শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। কারণ ত্রিপুরার একমাত্র শিল্প হল চা। দীর্ঘ বাম শাসনের ত্রিপুরার চা শিল্প ধ্বংসের পথে হেটেছে। তৎকালীন সরকার শ্রমিকদের কথা বলে মালিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
মালিক-শ্রমিক একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু বামফ্রন্টের এ ধরনের নিতির জন্য ত্রিপুরার চা শিল্প উন্নয়ন হয়নি। ফলে ত্রিপুরার চা মজদুর ইউনিয়ন গঠিত হয়। বামফ্রন্টের সময় ত্রিপুরার প্রথম চা বাগান হীরাছড়া চা বাগান, সোনামুখী চা বাগান, নটিংছড়া, লক্ষীছাড়া চা বাগান খাস করে দেয়। পরবর্তী সময় সেই জায়গায়গুলি ইন্ডাস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের নামে দিয়ে দেওয়া হয়। সেই চা বাগানগুলোতে শত শত শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের কথা সরকার চিন্তা করে নি। সরকার চাইলে জমি অধিগ্রহণ না করে রক্ষা করতে পারত। কিন্তু তা করে নি সরকার। কিন্তু ঊনকোটি জেলার নটিংছড়া চা বাগানে অনেকাংশ জায়গা জোড়ে ডাবল লেনের কাজের আওতায় পড়েছে। যে বড় বড় গাছ গুলি নষ্ট হবে তার মূল্য হবে ৫৮ লক্ষ টাকার অধিক। তৎকালীন সময়ে সেখানকার বিধায়ক তথা বর্তমান মন্ত্রী ভগবান দাস। তখন সেই বিধায়ক প্রশাসনিক আধিকারিকের কাছে চিঠি লিখে জানান চিটফান্ডের নামে একাউন্টটি ওপেন করা হোক।
পরবর্তী সময় সেই চিঠির মূলে একাউন্টটি ওপেন করে ৫৮ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন তৎকালীন বিধায়ক ভগবান দাস। বিষয়টি চা মজদুর ইউনিয়ন এবং কংগ্রেসের নজরে আসে। তারপর তদন্ত হয়। এ ডি এম সাসপেন্ড হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনো রকম আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে মন্ত্রী করা হয়েছে। তাই উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করতে চলেছে ইউনিয়ন। ত্রিপুরা চা বাগানগুলির অবস্থা করুন। তাই দাবি জানানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরা চা বাগানগুলি রক্ষা করার জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করুক। এবং বাগানগুলোতে যাতে বারোমাস জল দিয়ে পাতা তুলতে পারে তার ব্যবস্থা করা জন্য। পাশাপাশি এম জি এন রেগা প্রকল্পে সমতুল্য ২১২ টাকা মজুরি যাতে চা বাগানের শ্রমিকদের প্রদান করা হয় তার জন্য দাবি জানায় ইউনিয়ন। চা বাগান করার জন্য মালিকরা সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে সেখানে রাবার চাষের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। চা বাগানে জমিতে রবার চাষ করা নিষিদ্ধ। তাই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছে সেসব রাবার গাছ নষ্ট করে সেখানে চা গাছ রোপন এর ব্যবস্থা করা হোক। নাহলে আন্দোলনে নামলে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি আরো বলেন শ্রমিকদের বাসস্থানের ঘর সংস্কার করা হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারে পাকা ঘর করে দিতে দাবি জানান। রাজ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ বলে গেছেন চা শ্রমিকদের তিন গন্ডা করে জমি অধিগ্রহণ দেওয়া হবে। কিন্তু তিন গন্ডা করে জমি অধিগ্রহণ দিলে অনেকটাই কম হবে। অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করার দাবি জানান। অবসর প্রাপ্ত শ্রমিকদের সঠিকভাবে পেনশন দেওয়া হচ্ছে না। তাই তাদের ২ হাজার টাকা করে পেনশন দিতে হবে। চা শ্রমিকদের জন্য আগরতলা শহরে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট লেভার ভবন গড়ে তোলার জন্য দাবি জানান তিনি। আগামী ১২ এপ্রিল শ্রম দপ্তরের কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়ে শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত করা হবে বলে জানান তিনি।