Monday, July 14, 2025
বাড়িরাজ্যনার্স এবং সিকিউরিটি গার্ড টেস্ট চূড়ান্ত গাফিলতি জীবন কেড়ে নিল এক মায়ের,...

নার্স এবং সিকিউরিটি গার্ড টেস্ট চূড়ান্ত গাফিলতি জীবন কেড়ে নিল এক মায়ের, নির্বিকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ জুলাই : কলঙ্ক বুঝতে পারছে না রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতাল। প্রতিদিন খবরের শিরোনামে উঠে আসছে হাসপাতালের পরিষেবার নগ্নতা। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক, ওয়ার্ড মাস্টার, নার্স এবং সিকিউরিটি গার্ডের চরম গাফিলতিতে মৃত্যু হল মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে সন্তান জন্ম দেওয়া মায়ের।

এই ঘটনার জন্য পুরোপুরিভাবে হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ড এবং ওয়ার্ডে স্পেশাল নার্সদের দায়ী করলেন মৃতের পরিবার। অভিযোগ, রবিবার তেলিয়ামুড়ার মোহরছড়ার বাসিন্দা সুপ্রিয়া দাসের ডেলিভারি হয়েছিল জিবি হাসপাতালে। ডেলিভারি হওয়ার পর থেকে শারীরিক যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে শয্যায় ছটফট করছিল সুপ্রিয়া। বিষয়টি নজরে আসে পরিবারের লোকজনদের। রাতের বেলা বিষয়টি চিকিৎসক এবং নার্সদের জানানো হলো তারা একবারের জন্য রোগীকে দেখতে আসেনি। বরং রাতের বেলা এগারোটার নাগাদ যখন সুপ্রিয়া চিৎকার করছিল তখন রোগীর পরিবারের লোকেরা ওয়ার্ডে প্রবেশ করে তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সে সময় ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ড এবং নার্সেরা তাদের বাধা দেয়। পায়ে ধরে পর্যন্ত ভেতরে রোগীর কাছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও রোগীর পরিবারকে অনুমতি দেয়নি।

সোমবার ভোরবেলা ওয়ার্ডের ভেতর থেকে সিকিউরিটি গার্ড এসে রোগীর পরিবারকে ভেতরে যাওয়ার জন্য বলে। তারপর রোগীর পরিবার ওয়ার্ডের ভেতর গিয়ে দেখে রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে আছে সুপ্রিয়া। তখন অন্যান্য রোগীদের কাছ থেকে সুপ্রিয়ার পরিবারের লোকজন জানতে পারে অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় ছটফট করে বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে যায় সে। তারপর কান দিয়ে রক্ত বের হয় সুপ্রীয়ার। তখন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় সুপ্রিয়ার। এ বিষয়ে যখন হাসপাতালে সিকিউরিটি গার্ড, নার্স সহ দায়িত্বে থাকা অন্যান্যদের জিজ্ঞাসা করা হলে তখন তারা কিছুই বলতে পারেনি। তখন রোগীর পরিবার হাসপাতালে চরম বিক্ষোভ দেখায়। খবর পেয়ে ছুটে আসে হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা অন্যান্য কর্মী এবং পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও সুপ্রিয়ার জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেনি দায়িত্বে থাকার কর্মীরা এবং পুলিশ প্রশাসন। স্বামী সুমন দাস অভিযোগ করেছেন নার্সের গাফিলতির কারণেই মৃত্যু তার স্ত্রী সুপ্রিয়া দাসের। সন্তান জন্ম দেওয়া মায়েদের দেখভালের জন্য যাদেরকে স্পেশাল নার্স হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় রাতের বেলায় তারা ব্যস্ত থাকেন মোবাইল নিয়ে। আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি রক্ষীরা পাত্তাই দেয় না রোগীর পরিবারের লোকজনদের। কোন ধরনের প্রয়োজন থাকলেও তারা পরিবারের লোকজনদের ওয়ার্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয় না। আর এ ক্ষেত্রে ও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কামাই বাণিজ্য। যারা স্পেশাল নার্স হিসেবে দায়িত্বে থাকেন তাদেরকে ডেকে তাদের হাতে দু তিনশ টাকা ধরিয়ে দিলে রোগীর পরিবারের লোকজনদের কাজটা সেরে দেয় সেই স্পেশাল নার্সরাই। ঠিক এই ধরনের বিস্ফোরক অভিযোগ আনল মৃতা সুপ্রিয়া দাসের স্বামী সুমন দাস। মৃতা সুপ্রিয়া দাস এর মা জানিয়েছেন নার্স এর গাফিলতির কারণেই মৃত্যু তার মেয়ে সুপ্রিয়া দাসের।

তার মেয়ে সুপ্রিয়া দাস মা মা করে আর্তনাদ করলেও মোবাইল নিয়ে মগ্ন থাকা নার্সের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি অসহায় মেয়ের সেই আর্তনাদ। তিনি এর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। আর কারোর মায়ের কোল যাতে এভাবে খালি না হয়ে যায়। হাসপাতালের কর্মীদের চূড়ান্ত গাফিলতিতে সন্তানের চেহারাটা পর্যন্ত ভালো করে দেখতে পারলো না – না ফেরার দেশে চলে যাওয়া এক হতভাগা মা। এ কেমন দুর্ভাগ্য! রোগীর পরিবার হাসপাতাল থেকে এদিন সিকিউরিটি গার্ড সহ দায়িত্বে থাকার সকলের ফাঁসির দাবি করেছেন। এ ধরনের নিষ্কর্মা হাসপাতালে দায়িত্বে থাকলে বহু মার দুর্ভাগ্য হবে। এদিকে হাসপাতালের অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবাদ মাধ্যমে সামনে এসে পরিষেবার গুন গান শোনালেও বাস্তবে নগ্ন পরিষেবা জিবি হাসপাতালে। এর জবাব কে খুঁজবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে? তবে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে সত্যিই এই দিন চরম গাফিলতি করেছে ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নার্স থেকে শুরু করে সিকিউরিটি গার্ড সকলের। তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্তের দাবিও করেছে সাধারণ মানুষ। তারা যদি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকে তাহলে কোনদিন পরিষেবার মান উন্নত হবে না, কিভাবে জীবন হানি হবে প্রতি মুহূর্তে। যার উত্তর খুঁজে পাবে না খুদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী চিকিৎসক মানিক সাহা। তবে বর্তমান সরকারের সাধের জিবি হাসপাতাল যে প্রতিদিন এভাবে গাফিলতির শিকার হয়ে কলঙ্কিত হচ্ছে সেটা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশ্ন আর কত মানুষের জীবন হানি হলে সরকার এবং তার দপ্তরের আধিকারিক হাসপাতালের এ ধরনের ঘটনার উত্তর খুঁজতে যাবে?

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!