Saturday, May 31, 2025
বাড়িরাজ্যমন্ত্রী সহ শাসক দলের নেতৃত্ব গন্ডাছড়ায় পৌঁছাতে মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়লেন,...

মন্ত্রী সহ শাসক দলের নেতৃত্ব গন্ডাছড়ায় পৌঁছাতে মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়লেন, সর্বহারাদের আশ্বস্ত করে সহযোগিতা

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ জুলাই : তিন দিন পর গন্ডাছড়ার ধ্বংসলীলা স্বচক্ষে দেখতে গিয়ে সর্বহারাদের রোষানলে পড়লেন রাজ্যের মন্ত্রী টিঙ্কু রায় সহ বিজেপি নেতা সুবল ভৌমিক, প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া। ১৪৪ ধারা জারি করা সত্ত্বেও কিভাবে আগুনে পুড়ে ছারখার হল এতসব ঘরবাড়ি। তার ব্যাখ্যা চাইলেন সর্বহারারা। জিজ্ঞাসা করলেন এটা কি পরিকল্পিত ছিল? আর যদি না হয়ে থাকে তাহলে যেহেতু জেলা পুলিশ সুপারের সামনে এত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তাহলে সেই পুলিশ সুপারের উদ্দি খুলে জনগণের দেওয়ার জন্য দাবি জানান।

তারপর জনগণকে সান্ত্বনা দিতে যখন মন্ত্রী ভিড়ের মধ্যে পা বাড়ালেন তখন ক্ষুদ্ধ মন্ত্রীসহ বিজেপি নেতৃত্বদের সামনে এগোতে দেয় নি। প্রতিনিধি দলের উপর চরম অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে সেখান থেকে চলে আসতে বলেন জনগণ। তাদের বক্তব্য, গন্ডাছড়া মহকুমায় আনন্দ মেলাকে কেন্দ্র করে গত ৮ জুলাই একদল উশৃংখল যুবক আক্রমণ করেছিল পরমেশ্বর রিয়াং নামের এক যুবক। পরবর্তী সময়ে আগরতলার জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল পরমেশ্বর। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার বিকেল থেকেই গন্ডাছড়া মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা।

 কিন্তু দুর্ভাগ্য শনিবার রাতে ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও বহু ঘরবাড়ি উশৃংখলতার আগুনে ঝলসে যায়। সর্বহারা হয়ে পড়ে বহু পরিবার। বহু পরিবারের রুজি রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। উশৃংখলতার আগুনে পুড়ে যায় দোকানপাট ও। সোমবার গন্ডাছড়া মহকুমায় সর্বহারাদের খোঁজ খবর নিতে যান রাজ্য সরকারের মন্ত্রী টিংকু রায়। সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা এবং শীর্ষ নেতা সুবল ভৌমিক। রাজ্য সরকারের মন্ত্রী সহ প্রতিনিধি দলের সকল সদস্যদের দেখে সর্ব হারারা তাদের ভস্মিভুত হয়ে যাওয়া কাঠ এবং টিন ফেলে প্রতিনিধি দলের পথ আটকে দেয়। সর্বহারাদের আর্তনাদ ভাসতে থাকে আকাশে বাতাসে। মন্ত্রী টিংকু রায় সহ প্রতিনিধি দলের সকলেই সর্বহারাদের রোষানলের মুখে পড়ে। সর্বহারারা চিৎকার করে শোনাতে থাকেন শনিবারের সেই বীভৎস রাতের চিত্র। উশৃংখলতার আগুনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ১১ টি বিয়ে।

এই ১১ টি পরিবার আজ অসহায়। উশৃংখলতার আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের কাছ থেকে সবকিছু। সর্বহারারা চিৎকার করে বলতে থাকেন বর্তমান সরকারের অকর্মণ্য পুলিশ কর্মীদের সেদিনকার ব্যর্থতার কথা। ১৪৪ ধারা জারি করা সত্ত্বেও পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে তামাশা। পরমেশ্বর রিয়াংকে যারা মেরেছে তারা শাস্তি পাক এটা সকলেই চায়। কিন্তু যারা এই ঘটনার ধারে কাছে নেই তারা কেন উশৃংখলতার আগুনে পুড়বে? পুলিশকে গোটা ঘটনা সম্পর্কে আগাম জানানো হলেও পুলিশ কেন কোন ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলো না, এ নিয়ে চিৎকার করে মন্ত্রীকে শোনান সর্বহারারা।

পুলিশকে বলা সত্ত্বেও সেদিন পুলিশ নাকি তাদেরকে বলে দিয়েছে কোন কিছু করার ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। পুলিশ যেহেতু রক্ষাকর্তা, যেহেতু সর্বহারাদের কেন পুলিশ সেদিন রক্ষা করেনি এর কোনো উত্তর নেই। জেলাশাসককে উদ্দেশ্য করে জেলা পুলিশ সুপারকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে অস্পষ্ট হিন্দিতে পুলিশ সুপারকে “অযোগ্য” বলে দাবি করেন। পুলিশ সুপারের উর্দি খুলে তার দায়িত্ব নাগরিকদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তোলেন। দাবি তুলেন এইসব পুলিশ কর্মীদের চাকরি থেকে ছাটাই করার। প্রতিবাদী মহিলার কন্ঠে এইসব কথা শুনে জেলা পুলিশ সুপারকে অনেকটাই ইতস্তত থাকতে দেখা গেছে। প্রতিনিধি দলকে নিরাপত্তার মোড়কে মোড়ে দেওয়া হয়েছিল এদিন।

 ছিলেন পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরাও। তারাও এদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলেন নিচু তলার অকর্মণ্য পুলিশ কর্মীদের হাতে চুড়ি পড়ে রাখার বিষয়টি। সর্বহারারা মহকুমা প্রশাসনের ওপর ও যে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ তার প্রমাণ পেয়ে গেছেন এদিন মন্ত্রী টিংকু রায় নিজেও। মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তার প্রাচীর গড়ে তোলা হলেও সর্বহারাদের রোষানল থেকে বাদ পড়েন মহকুমা শাসকের কার্যালয়। এই রোষানলে রীতিমতো লন্ডভন্ড হয়ে যায় মহাকুমা শাসকের কার্যালয়। মন্ত্রী টিংকু রায়কে তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিলেন তাদের রুজি রোজগারের পথ হিসেবে থাকা দোকানগুলো বেছে বেছে উশৃংখলতার  আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব উশৃংখলতার আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি এবং দোকানপাটের সমস্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাশাপাশি যে ১১ টি বিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!