Sunday, September 8, 2024
বাড়িরাজ্যগন্ডাছড়ার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কাঁধে দোষ চাপালেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, প্রদেশ...

গন্ডাছড়ার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কাঁধে দোষ চাপালেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, আমারও বাঙালি দল- পরমেশ্বরের বাড়িতে গেলেন প্রদ্যোত

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৩ জুলাই : পরমেশ্বর রিয়াং নামে এক ২১ বছর বয়সী যুবকের মৃত্যুর পর শুক্রবার রাতে গন্ডাছড়া মহাকুমা বহু বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। ১৪৪ ধারার মধ্যে দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসের ঘটনায় তীব্র নিন্দার ঝড় বইছে। এদিন এই ঘটনার পর শনিবার আগরতলা শহরের রাজপথে নামে আমার বাঙালি দল।

 এবং সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা। অপরদিকে মৃত যুবকের বাড়িতে ছুটে গেলেন তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ।

জানা যায়, পরমেশ্বরের মৃতদেহ শুক্রবার রাতে গন্ডাছড়া নিজ বাড়িতে পৌঁছানোর পর একাংশের মানুষ অপর একটি অংশের বিরুদ্ধে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে। এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে আমরা বাঙালি। শিবনগর স্থিত আমরা বাঙালি দলীয় কার্যালয়ের সামনে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর দলের সম্পাদক গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল জানান, গত ৭ জুলাই গন্ডাছড়ায় একটি আনন্দ মেলা চলছিল। সেখানে মদ ও জোয়ার আসর বসেছিল। সেখানে তর্ক-বিতর্কের সময় একটি বিদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসে পরমেশ্বর রিয়াং নামে এক যুবক। তখন তাকে সকলে মিলে বিদ্যুৎ সংস্পর্শ থেকে সরিয়ে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয় স্থানীয় গন্ডাছড়া হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেফার করে জিবি হাসপাতালে। জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পরমেশ্বর।

 শুক্রবার তার মৃত্যুর পর সেখানে একটি নির্দিষ্ট অংশের মানুষ উপর একটি অংশের মানুষের উপর আক্রমণ শুরু করে। এবং যারা এই ঘটনাগুলি সংগঠিত করেছে তাদের বাড়ি অমরপুর, অম্পি ও আমবাসা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা গন্ডা ছড়ায় গিয়ে এ ধরনের সন্ত্রাস শুরু করেছে। তারপর বৃহৎ অংশের মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে জঙ্গলে। এর মধ্যে ৫০ টি পরিবার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্বৃত্ত অংশের মানুষ হুলিয়া জারি করেছে গন্ডাছড়ায় সেই অংশের মানুষকে থাকতে দেবেনা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আরো বলেন আশির দাঙ্গার যারা নায়ক ছিল তাদের ২০১৮ সালের পর বিজেপি সরকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে চলেছে। আবার তাদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্যাকেজের ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, এদেশের ভূমিপুত্র বাঙালি। তাদের সাথে আজ এ ধরনের সন্ত্রাস কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেন বাঙালি কারোর দয়ার পাত্র নয়। এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা, যারা ক্ষতি হয়েছে তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা, গন্ডাছড়া মহকুমা সহ প্রত্যন্ত এলাকায় টিএসআর ক্যাম্প স্থাপন করার দাবি জানান তিনি। এদিকে এই ঘটনার বিষয় রাজ্যে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি জেলা শাসককে বলেছিলেন যাতে জেলা পুলিশ সুপারকে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন বিষয়টি দেখবেন। তারপর যথারীতি জেলা পুলিশ সুপারকে সেখানে পাঠানো হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তারপর রাতের বেলায় রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের সাথে কথা বলে আহবান করা হয়েছে যাতে সেখানে একজন অভিজ্ঞ অফিসারকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। রাত দুইটা পর্যন্ত চলে এ ধরনের ঘটনা। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে এই ঘটনা কোনভাবেই কাঙ্খিত নয়। আর এক সুতো যাতে কারোর ক্ষতি না হয় তার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার। পাশাপাশি শান্তি সম্প্রীতি যাতে বজায় থাকে তার জন্য সব অংশে মানুষের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান তিনি। আরো বলেন, রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে কাজ নেই, গত অর্থবছরের রেগার মজুরিও দিতে পারছে না সরকার। তারপরও কিভাবে এই আনন্দমেলার অনুমতি দিয়েছে সরকার? আর এ ধরনের আনন্দ মেলা শুধু গন্ডাছড়ায় নয়, রাজ্যের আরও বিভিন্ন স্থানে প্রত্যেক মহকুমা আনন্দমেলার নামে গাঁজা জোয়ার সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এর সাথে জড়িত শাসক দলের কর্মীরা। তারা যখন থানাকে বলে তখন অনুমতিতে কোন সমস্যা হয় না।

সুতরাং এর জন্য দায়ী সরকার। দাবি জানানো হচ্ছে সরকার যাতে উদ্যোগ নিয়ে সব অংশের মানুষদের নিয়ে শান্তির সভা করে। যতদিন না পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ততদিন পর্যন্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে দাবি জানান। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে আরো দাবি জানান, মৃত যুবক পরমেশ্বরের পরিবারে একটি সরকারি চাকরি দেওয়া এবং দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ হাতে গুনে পুরোপুরি ভাবে সহযোগিতা করার দাবি জানান। এছাড়াও যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আপাতত থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে প্রাপ্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জানান, এই ঘটনার নিয়ে শুক্রবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহার সাথে কথা হয়েছে। প্রথম রাত দশটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছিল যাতে তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন শক্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। তারপরও এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

শনিবার সকালে শান্তির বৈঠক হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার পর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিতে হবে বলে জানান তিনি। অপরদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা জানান, সরকার ও প্রশাসন চাইলে এই ঘটনা রুখে দিতে পারতেন। কিন্তু দেখা গেছে প্রশাসন নির্বিকার। দুই অংশের মানুষের মধ্যে ডাঙ্গা বাধিয়ে দিতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সরকার। সুতরাং এর জন্য দায়ী সরকারই। তিনি আরো বলেন এ ধরনের ঘটনা থেকে আগামী দিনের অশ্বিনী সংকেত বয়ে আসছে। তাই অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। পাশাপাশি দায়িত্ব নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে সরকারকে। এদিকে নিহিত পরমেশ্বরের পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলেন তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। তিনি পরিবারের সাথে কথা বলে, তার অনুগামীদের বলেন, শান্তি বজায় রাখতে। পরমেশ্বরের পরিবারকে গ্যারান্টি দিয়েছেন ন্যায়ায় দিয়ে ছাড়বে। যারা এই ঘটনা সংঘটিত করেছে তাদের জেলে ঢুকিয়ে ছাড়বেন। মুকুটহীন রাজা এদিন চোখের জল ফেলে বলেন, যতদিন আমরা আলাদা থাকবো ততদিন এই ঘটনাগুলি ঘটবে। আর যখন ঐক্যবদ্ধ হবো তখন মনোবল বাড়বে।

আরো জানিয়ে দেন, এ ডি সি -র পক্ষ থেকে পরমেশ্বর এর পরিবারকে এক লক্ষ টাকা সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি অশান্ত করে কোন কিছু মিলবে না। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো কেউ যদি নেতা হয় তাহলে তিনি সব অংশে মানুষের জন্য কাজ করেন। মুকুটহীন রাজা গন্ডাছড়ায় গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পাশে দাঁড়ান নি। তাদের খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয় নি বলে জনপ্রিয় বোবাগ্রা সম্পর্কে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য