Friday, November 22, 2024
বাড়িরাজ্যঅক্সিজেন পার্কের শুভ উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী

অক্সিজেন পার্কের শুভ উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১১ অক্টোবর : কোন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলে, সেই ব্যক্তির প্রথমে অক্সিজেন লেভেল দেখতে হয়। আগে মানুষ জানত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ অক্সিজেন গ্রহণ করে। আর এতেই যথেষ্ট ছিল মানুষের জানার। তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন সম্পর্কে মানুষ অবগত ছিল না বলে চলে।  সোমবার শালবাগান স্থিত অক্সিজেন পার্কের উদ্বোধন করে বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী এন সি দেববর্মা, বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস, পিসিসিএফ সহ অন্যান্যরা। 

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন সাধারণত ত্রিপুরার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ অংশ বনাঞ্চল। সে দিক থেকে ত্রিপুরা অক্সিজেন দাতা স্টেট-এর মধ্যে পড়ে। ত্রিপুরাতে অক্সিজেনের সমস্যা রয়েছে তা কখনো সামনে আসেনি। করোনা পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা সামনে এসেছে। তখন ঘরে ঘরে সকলের কাছে পৌঁছে গেছে অক্সিমিটার অক্সিজেন চেক করার জন্য। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু যদি কেউ হয়ে থাকে সেটা হচ্ছে অক্সিজেন। করোনা আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।

রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্ক দর্শনে পিএম কেয়ার ফান্ড থেকে, ইউনিসেফ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে বড় মাত্রায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। সেই অক্সিজেন প্ল্যান্ট গুলি ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে। ৭ অক্টোবর দেশের প্রধানমন্ত্রী সমগ্র দেশে একযোগে বড় মাত্রায় অক্সিজেন প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেছেন। একটা সময় সকলের মনে ভয় ছিলো তাদের নিকটবর্তী হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকবে কিনা। বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যের জেলা হাসপাতাল গুলিতেও অক্সিজেন প্ল্যান্টের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আগে ত্রিপুরা রাজ্যে ছোট আকারের দুটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট ছিল। মহাকুমা স্তরের যে সকল হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি কিছু কিছু সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রও অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটা সময় ত্রিপুরা রাজ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট দেখা দিত।  বর্তমানে এই করোনা পরিস্থিতিতে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভাবেও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী । দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আগরতলা শহরের বিভিন্ন প্যান্ডেলে দর্শনার্থীরা যাবে দেখবে। কিন্তু করোনা বিধি মেনে চলতে হবে। কারণ দুর্গাপূজার সময় বহি রাজ্য থেকে মানুষ পূজা দেখতে আসবে। বহি রাজ্যে এখনও পজিটিভিটি রেইট বেশি। স্বাভাবিকভাবেই কোন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি যদি পুজো দেখতে আসে, তার সংস্পর্শে যারা যাবে তারা সংক্রমিত হবে। পার্শ্ববর্তী রাজ্য মিজোরামে পজিটিভিটি রেইট অনেক বেশি। ত্রিপুরা আর  মিজোরামের দূরত্ব বেশি নয়। তার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। দুর্গাপূজা দেখার পাশাপাশি অক্সিজেন পার্কে গিয়ে সময় কাটানোর আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। অক্সিজেন পার্কে সময় কাটালে  ভালো লাগবে। এমনিতেই সবুজকে দেখতে ভালো লাগে। অক্সিজেন পার্কে ২ দশমিক ১ কিলোমিটার রাস্তা হাটার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে হাটলে শারীরিকভাবেও লাভ হবে। মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন বনদপ্তর থেকে অক্সিজেন পার্ককে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা হবে। এই অক্সিজেন পার্ক সম্পর্কে সাধারণ মানুষ যেন জানতে পারে তার জন্য প্রচারের উপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

দুর্গা পুজাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ২৪ হাজার কোটী টাকার অর্থনৈতিক ব্যবসা হয়। এই উৎসবে রাজ্যের সরকারী কর্মচারীদের পূজা অগ্রিম হিসাবে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পূজা অগ্রিম পেয়েছে অঙ্গনওয়ারী কর্মী , সহায়িকা ও হোমগার্ডরাও। এই টাকা পেয়ে তারা বাজারে খরচ করবে। সব জায়গায় যাবে এই টাকা। বড় মাত্রায় রাজ্যে সরকারী কর্মচারী রয়েছে। তাদের জন্য পূজা অগ্রিম দিলে এই টাকা বাজারের মাধ্যমে অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত পৌছাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই অক্সিজেন পার্কে রাজ্যের পাশাপাশি বহিঃ রাজ্যের মানুষ আসবে। তাদের যথাজথ আপ্যায়ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে এই অক্সিজেন পার্কের আরো প্রচার ঘটে। এছাড়া পার্কে যারা আসবেন তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলে অর্থনৈতিক লাভ হবে। প্রয়োজনীয় ডাস্টবিন, স্বেচ্ছা সেবক, নিরাপত্তা রক্ষী ও সিসিটিভি বসানোর জন্য পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বন দপ্তরের মাধ্যমে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা রাজ্যবাসীর কল্যানে আসবে বলেও জানান তিনি।

এই পার্ক তৈরিতে ব্যায় ধরা হয়েছিল ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে খোলা জিম, প্রাতঃ ভ্রমনের জন্য ২ দশমিক ১৩ মিটার ব্যবস্থা আছে, ওষুধি গাছ, শিশুদের জন্য পৃথক ভাবে খেলা ধূলার ব্যবস্থা, ১৯ টি জন জাতির সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে, ত্রিপুরার প্রকৃতির সম্পদ জীবজন্তু তুলে ধরা হয়েছে এই পার্কের মাধ্যমে। ৮ টি স্মৃতি বন তৈরি করা হয়েছে রাজ্যে। এই স্থানে প্রিয় জনের নামে একটি গাছ রোপণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে বন দস্যুদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে । একই সঙ্গে ঘটবে বন সৃজন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন অক্সিজেন পার্ক পরিদর্শন করে দেখেন আপ্লুত হন মুখ্যমন্ত্রী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য