Saturday, July 27, 2024
বাড়িরাজ্যগোটা রাজ্যে টি.আই.এস.এফ -এর সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে বাধা...

গোটা রাজ্যে টি.আই.এস.এফ -এর সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে বাধা ছাত্র-ছাত্রীদের, স্তব্ধ জনজীবন

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ ফেব্রুয়ারি : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী টি আই এস এফ -এর ডাকে সোমবার সকাল থেকেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য পথ অবরোধ। স্তব্ধ হয়ে পড়ে দূরপাল্লার যান চলাচল। এদিকে রেল লাইনেও বসে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা কেন্দ্র পৌঁছাতে পারেনি। পুলিশের সামনে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মাঝ রাস্তা থেকে জোর জবরদস্তি ছাত্র-ছাত্রীদের টেনে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দোলনে।

ভূমিপুত্র বলে দাবি করে রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলে এই বিক্ষোভকারীরা। এই দৃশ্যগুলি সোমবার সকাল থেকেই গোটা রাজ্যে নজির স্থাপন করেছে। শুধু গোটা রাজ্যের প্রধান সড়ক গুলি এবং রাস্তায় নয়, মুখ্যমন্ত্রী বাড়ির সামনেও গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে টিআইএসএফের কর্মী সমর্থকরা। মুখ্যমন্ত্রীর নিজ বাসভবনের সামনে পুলিশকে এড়িয়ে তুমুল আন্দোলন শুরু করে তারা। কুম্ভ নিদ্রায় থাকা পূর্ব আগরতলা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে এলাকার মোতায়েন থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এদিকে আসাম – আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করল টি আই এস এফ।

 বড়মুড়ায় জাতীয় সড়কে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখা তারা। দাবি জানায় তারা এ রাজ্যের ভূমিপুত্র। ককবরক ভাষার পরীক্ষায় রোমান হরফে লেখা তাদের ভাষাগত অধিকার রয়েছে। পর্ষদ থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত দাবি মানা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন জারি থাকবে বলে জানান টিআইএসএফের নেতৃত্ব জন দেববর্মা। সারা রাজ্যের সাথে আমবাসাতেও পরিলক্ষিত হয় মথার ছাত্র সংগঠন টিএসএফ -এর বিক্ষোভ। জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে রেলপথ টিএসএফ সংগঠনের সদস্যরা অবরোধ করে। অসম – আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। আমবাসা রেল স্টেশনেও দাঁড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। রেল পথ অবরোধ থাকায় ট্রেন গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারেনি। তিপরা মথার সভাপতি বিজয় কুমার রাঙ্খল বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলন করে যাচ্ছে।

 যাতে করে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সকল স্তরের কোন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়। এবং তাদের এই দাবি যতক্ষণ পর্যন্ত মানা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। রোমান স্ক্রিপ্টের দাবিতে তিপ্রা ইন্ডিজিনিয়াস স্টুডেন্ট ফেডারেশন আগরতলা – সোনামুড়া সড়কের বিশ্রামগঞ্জের তক্সাপাড়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করল এদিন। নেতৃত্ব দেন টনি দেববর্মা। তিনি জানান, তাদের এই দাবি দীর্ঘদিনের। এটি বর্তমানে একটি জ্বলন্ত সমস্যা জনজাতি অংশের মানুষের। বিশেষ করে এ দাবি তাদের কোন অংশের মানুষের বিরুদ্ধে নয়। এ দাবি জনজাতি অংশের মানুষের ভাষাগত অধিকার। এবং তার পর্ষদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন যদি আগে রোমাণ হরফে লেখার সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে এখন এই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে মূলত কি উদ্দেশ্য রয়েছে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের? তাই এভাবে ভাষাগত অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেবে না বলে পর্ষদদের উদ্দেশ্যে জানায় তারা।অপরদিকে মুঙ্গিয়াকামী লক্ষ্য করা যায় সড়ক অবরোধ এবং রেললাইন অবরোধ।

 বিক্ষোভ কারীরা জানিয়ে দেয় যদি ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে তারা অবরোধ থেকে পিছু হাঁটবে না। সারা রাজ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অবরোধ চলবে। একই ইস্যু নিয়ে ধর্মনগর মহকুমাধীন এলাকায় নোয়াগাঙে আসাম আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে তিপরা মথা ও টিএসএফ। সকাল থেকে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে তারা। জাতীয় সড়কের যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে ব্যহত হয় এদিন সকাল থেকে। তিপরা মথা নেতা জয় চুংথাঙ্গা হালাম এবং বাগবাসা কেন্দ্রের একই দলের বিজিত প্রার্থী কল্পনা সিনহার যৌথ নেতৃত্বে অবরোধ হয়। নেতৃত্ব দাবি করেন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছে থাকলেও রোমান হরফে ককবরক ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে পারে। কিন্তু তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তারা এই অবরোধের মাধ্যমে তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেবে।

১৯৬৯ সাল থেকে জনজাতিরা স্বীকৃত হলেও তাদের হরফকে ইচ্ছে করে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না, তার বিরুদ্ধে রাজ্যে দিকে দিকে আন্দোলন গড়ে তোলা হচ্ছে। একই দাবিতে এদিন সকাল থেকে রাস্তা অবরোধে বসেন টি আই এস এফ। গন্ডাছড়া – আমবাসা এবং গন্ডাছড়া – অমরপুর রোড অবরোধে করা হয়। বিধায়িকা নন্দিতা দেববমা রিয়াং দাবি আদায়ের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান। এ ধরনের আন্দোলন দেখে মানসিকভাবে ব্যতিবস্ত হয়ে পড়েছে ছাত্রছাত্রী সহ বহু অভিভাবকরা। কার প্রশ্রয় এ ধরনের আন্দোলন করে ছাত্রছাত্রীদের পর্যন্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে না দেওয়ার সাহস পেয়েছে বিক্ষোভকারীরা সে বিষয়টা নিয়েও রাজনৈতিক মহল ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে ব্যাপক গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। মাঝে আর মাত্র একদিন, তারপরই বাগদেবীর আরাধনা। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রী সকলেই বিদ্যার দেবী সরস্বতী আরাধনায় প্রতিবছরের মতোই ব্রতী হবে। যদিও অনেকের মতে এটা প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের অভাবে হয়েছে এ ধরনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি। বিরোধী দলের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলনের ঘোষণা হওয়ার পরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখত তাহলে এই দুর্ভোগে পড়তো না ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক কর্মচারী থেকে শুরু করে সমস্ত অংশের মানুষ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বিরোধী দল তিপরা মথা লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ইস্যুহীন হয়ে এখন ছাত্রদের হাতিয়ার করছে। তাই রোমান হরফকে ইস্যু বানিয়ে আগামী নির্বাচনে লড়াই করতে চায় মথা। তবে এ বিতর্কিত আন্দোলন নিয়ে রবিবার টি আই এস এফ -এর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আন্দোলন না করলে নাকি দাবি পূরণ হবে না! এদিকে সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন বাজার গুলি ছিল এক প্রকার ভাবে জনশূন্য। যান চলাচল স্তব্ধ ছিল প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে। জনশূন্য ছিল প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তাঘাট। আগরতলা শহরের নাগেরজলা, চন্দ্রপুর ও রাধানগর থেকে দূরপাল্লার গাড়ি একপ্রকারভাবে বন্ধ ছিল। অফিস আদালতে যেতে পারেনি বহু কর্মী। জনজীবনের উপর প্রভাব পড়ে এই দিনের আন্দোলন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য