স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১১ নভেম্বর : প্রবাদ আছে – দা থেকে আছার বড়! আর সেটাই হচ্ছে প্রধান রেফারেল হাসপাতাল থেকে শুরু করে দ্বিতীয় রেফারেল হাসপাতাল ও হাঁপানিয়া হাসপাতালে। ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা একটি বেসরকারি সিকিউরিটি সংস্থার গার্ডদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হচ্ছে রোগীর পরিবার-পরিজন। তারা পোশাক পরিধান করে হাসপাতালে দারোগা পুলিশের ভূমিকা পালন করছে।
যেন হাসপাতালে তারাই সর্বেসর্বা। মনে হচ্ছে একটি বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ডের সংস্থার নেতৃত্বে চলবে হাসপাতাল। গত দুদিন আগে হাপানিয়া হাসপাতালে এক রোগীর ছেলেকে মহিলা সিকিউরিটি গার্ড বেধড়ক মারধর করার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে শুক্রবার রাতে আই জি এম হাসপাতালে ঘটে গেল এখন অবাঞ্ছিত ঘটনা। আইজিএম হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শ্বাসকষ্ট জনিত সংকটাপন্ন রোগীকে একই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সিকিউরিটি গার্ডের জন্য রোগীকে চিকিৎসকের কাছে সঠিক সময় মত নিতে না পারায় মৃত্যু হলে ঢলে পড়ে রোগী বলে অভিযোগ মৃতের ছেলের। তারপরেই রোগীর পরিবারের লোকজনেরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে হাসপাতালে। তারপর হাসপাতালের ডাক্তারদের ফোনে ছুটে আসে পশ্চিম থানার পুলিশ এবং সিআরপিএফ জওয়ানরা। অভিযোগ, এদিন রাতের বেলা দক্ষিণ চন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা সামু মিয়াকে হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে নিয়ে আসা হয়।
তখন জরুরী বিভাগে পরিবারের লোকজনেরা নিতে চাইলে দরজায় মাতব্বর সিকিউরিটি গার্ড আটকে রাখে রোগীকে। দীর্ঘ ১৫ মিনিট সময় ধরে জরুরি বিভাগের দরজায় ছটফট করতে থাকে রোগী ৬৩ বছর বয়সি সামু মিয়া। সামু মিয়ার ছেলে সিকিউরিটি গার্ডকে বলেন ভেতরে তিনজন চিকিৎসক রয়েছে। একজন চিকিৎসক যদি এসে তার বাবাকে দেখে তাহলে হয়তো শ্বাসকষ্টের সমস্যাকে কিছুটা হলেও সমাধান হবে। তারপরও দেওয়া হয়নি রোগীকে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি। রোগীর পরিবারকে বলে দেওয়া হয় ভেতরে আরো দুজন রোগী রয়েছে তাদের দেখার পর ধারাবাহিকভাবে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। সেই সময়ও হাসপাতালের চেয়ারে একজন চিকিৎসক অবসর বসেছিলেন। ভেতর থেকে সবকিছুই প্রত্যক্ষ করছিলেন হাসপাতালের তিন মহাগুনী চিকিৎসক। কিন্তু তারপরও তারা বাইরে এসে রোগীকে না দেখে স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে একটি অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে পাঠিয়ে দেন হাসপাতালের পাঁচ তলায় বলে অভিযোগ।
কিন্তু রোগীকে নিয়ে ভর্তি করানোর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তখন উত্তেজিত হয়ে পড়ে রোগীর পরিবারের লোকজনরা। পরিস্থিতি উত্তেজিত দেখে ঘটনাস্থল থেকে গা বাঁচাতে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত সিকিউরিটি গার্ড। ছুটে আসে পুলিশ। সি.আর.পি.এফ দ্বারা উত্তেজিত রোগীর পরিবারকে নিয়ন্ত্রণে আনে। আশ্বাস দেওয়া হয় বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। তবে কতটা তদন্ত হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিগত দিনে বহু রোগীর পরিবার এ ধরনের অমানবিকতার স্বীকার হয়েছে রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালে। আজ ঘটনাস্থলে এসে আশ্বাস দেন নি চিকিৎসা কিংবা স্বাস্থ্য আধিকারিক নয়, আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ। আর এখানেই তদন্ত ইতি। এ ধরনের ঘটনা কয়টি হলে কুম্ভ নিদ্রা ভাঙবে রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের এবং আর কয়টি ঘটনা ঘটলে অভিযুক্ত সিকিউরিটি গার্ড সংস্থা বিরুদ্ধে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। সুতরাং এক প্রকার ভাবে কাঠগড়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক, সিকিউরিটি গার্ড এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।