স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২ অক্টোবর : মানবপুরী পরিণত হলো যমপুরীতে। গোটা জিবি হাসপাতাল সোমবার দুপুরে এক ঘন্টার অধিক সময় অন্ধকারে ডুবে থাকে। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এদিন মানুষ টের পেয়েছে রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতালের হাল হাকিকাত। এবং সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। কারণ একদিকে হাসপাতালে শয্যায় ছটফট করছিল রোগী, অপরদিকে লিফটে ১৫ মিনিট ধরে আটকে পড়ে থাকে রোগী এবং শিশু সহ বহু মানুষ। চিৎকার কেউ লিফট খুলে বাঁচান! এক্স -রে ওয়ার্ডের দরজায় কাতারে কাতারে সংকটজনক রোগী। কখন আসবে বিদ্যুৎ প্রশ্ন রুগীর। এক্স-রে না করতে পেরে চিকিৎসক পর্যন্ত হাসপাতালে রোগীর ওষুধ দিচ্ছে না।
ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয় সোমবার দুপুরে প্রধান রেফারেল হাসপাতালের তাকমা লাগানো জিবি হাসপাতালে। ছিল না এক ঘন্টার অধিক সময় বিদ্যুৎ। নেই পানীয় জলের বন্দোবস্ত। এক প্রকার ভাবে অভিভাবকহীনতায় ভুগছে হাসপাতাল। আর কুম্ভ-নিদ্রায় আচ্ছন্ন বিদ্যুৎ নিগম ও স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষস্থানে বসে থাকা আমলা কামলারা। প্রতি সপ্তাহে সাংবাদিক সম্মেলন করে হাসপাতালের পরিষেবার উন্নত হওয়ার গুন গান গেয়ে চলেন হাসপাতালে দেখতে থাকা মহারথীরা। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও রোগীর পরিবার চাক্ষুষ করতে পারে হাসপাতালের কতটা দুরবস্থা। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পক্ষ থেকে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করা সহজ, কিন্তু বাস্তবের মাটিতে এসে রোগীদের কি পরিষেবা মিলছে তা দেখার কেউ নেই। এদিকে বিদ্যুৎ নিগমের মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে শারদোৎসবের আগে কাটআউট এবং লোডসিডিং -এর সংজ্ঞা মানুষকে সাত পাঁচ বুঝিয়ে যান। আর দিকে দিকে বিদ্যুতের দাবিতে চলছে পথ অবরোধ।
এখন অন্ধকার হয়েছে জিবি হাসপাতাল। এটাই রাজ্যের বিদ্যুৎ মডেল। আর এই মডেল নিয়ে রাজ্যে বৃদ্ধি হয়েছে বিদ্যুৎ মাশুল। এবং দেখানো হয়েছে ঘাটতি। এই ঘাটতি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে, তার কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে তুলে না ধরে হরির নাম কীর্তন চলছে গোটা রাজ্যে। আর উদ্বোধনে ব্যস্ত থাকছেন মন্ত্রীরা। আর হাসপাতাল ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে। যাইহোক এদিন হাসপাতালে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। লিপটে আটকে থাকে মানুষ দীর্ঘ ১৫ মিনিট। শিশুদের চিৎকার এবং রোগীদের ছটফট ছিল লিফটের মধ্যে। হাসপাতালে শয্যায় ছটফট করছে রোগী। কাহিল রোগীর পরিবার। অপরদিকে রোগীর পরিবারদের অভিযোগ শৌচালয়ে নেই জলের বন্দোবস্ত। খাবার জল পর্যন্ত বাইরে দোকান থেকে ক্রয় করে আনতে হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরে ঘটা করে মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে ওয়াটার এটিএম উদ্বোধন হলেও সেগুলোও মুখ থুবড়ে পড়েছে। এভাবেই চলছে রেফারেল হাসপাতাল। এক্সরে করতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগী দরজায় বসে চোখ দিয়ে জল ফেলার অবস্থা। বিদ্যুৎ না থাকায় এক্সরে মেশিন পর্যন্ত কোন কাজে আসছে না। তবে প্রশ্ন হল হাসপাতাল চত্বরে রয়েছে বেশ বড় বড় কয়েকটি জেনারেটর। সে জেনারেটরের মাধ্যমে কেন এদিন পরিষেবা দেওয়া গেল না সেটা জানা নেই সাধারণ মানুষের। আর যদি এভাবেই চলতে থাকে হাসপাতালে উন্নত পরিষেবা তাহলে সেটা মানুষ মনে গেঁথে রাখবে এবং এর প্রচার হবে রাজ্যব্যাপী। রোগী ও তার পরিবার মানুষকে জানান দেবে হাসপাতালের দুর্দশার কথা। মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্যের সাথে মিলে না হাসপাতালের অন্দরের চিত্র। বিপ্লব হয়েছে শুধু কয়েকজনের, কিন্তু বিপ্লব হয়নি বিদ্যুৎ এবং স্বাস্থ্যের।