স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৬ আগস্ট : আইনি জটিলতার মধ্যেই রাজধানীর সিটি সেন্টার স্থিত বলাকা সিনেমা হলে তালা ঝলিয়ে দিলেন আগরতলা পুর নিগমের কমিশনার শৈলেশ কুমার যাদব। এবং কর্ণধার দেবাশীষ সাহাকে সিনেমা হল থেকে বের করে দিলেন বলে রবিবার আগরতলা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ তুললেন কর্ণধার দেবাশীষ সাহা।
তিনি বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে অধিক ভাড়ার দরদাতা হিসেবে এই হল এবং ফুড কোর্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সোসাইটি অফ সিটি সেন্টারেও যে চুক্তি দেয় তাতে রেনুয়েল অপশন ৩ ইনক্লুসিভ অফ অল টেক্সেস লিপিবদ্ধ আছে। সেই অনুযায়ী বরাবর ভাড়া সময়মত পরিশোধ করা হয়। কিন্তু কোভিডের সময় যখন সিনেমা হল দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল, সেই সময় কোন ধরনের রাজস্ব আদায় না হলেও কর্মচারী বেতন, মেশিন পরিচর্যা, ফিক্সড ইলেক্ট্রিসিটি বিল ইত্যাদি পরিশোধ করা হয়। এতে বিপুল আর্থিক ঋনের সম্মুখীন হয় দেবাশীষ সাহা। তখন আকস্মিক ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময় আবার সিনেমা হল খুললে ধার দেনা করে হলটি চালু হয়। কিন্তু সোসাইটি অফ সিটি সেন্টার কোভিড সময়ের ভাড়া চাপিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তখন সেই ভাড়া মুকুব করে দিতে দাবি করা হয়।
কিন্তু দাবি না মানায় সেই টাকা ধীরে ধীরে পরিশোধ করা শুরু করেন। এছাড়াও চুক্তিভঙ্গ করে রিটেন্ডারের ভয় দেখিয়ে ভাড়া বৃদ্ধি ও ইনক্লুসিভ অফ অল ট্যাক্স পরিবর্তে এক্সক্লুসিভ অফ অল টেক্স করে বিল দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই অবস্থায় সংশোধিত বিল দিতে বলা হলে আশ্চর্যজনকভাবে তারা বহিষ্কারের নোটিশ ধরিয়ে দেয় এবং টেন্ডারের কল করেন। বারংবার তাদের চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ করা হয় যাতে আবারও হালটি তাকে প্রদান করা হয়। টেন্ডারে এমন সব শর্ত আরোপ করা হয় যাতে মধ্যবিত্তরা অংশগ্রহণের সুযোগ না পায়। তখন আইনের শরণাপন্ন হয় তিনি। বিচারপতি গত ১ অগাস্ট পর্যন্ত দেবাশীষ সাহার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশিকা সম্পূর্ণভাবে অমান্য করে গত ২৭ জুলাই চিঠি মুলে নির্দেশ দেয়া হয় ৩১ জুলাই হল ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এবং স্থানীয় এক সিনেমা হলের প্রতিনিধিকে হস্তান্তরের জন্য সিনেমা হালের ভেতরে নিয়ে আসেন ম্যানেজার পিঙ্কু ভট্টাচার্য। গত ১ আগস্ট বিচারপতি আগের নির্দেশ বজায় রেখে পরবর্তী শুনানির জন্য ২১ অগাস্ট ধার্য করেন। পরে ব্যবসা শুরু করলে সেদিন রাতের বেলায় অমানবিক ও বেআইনিভাবে কোনরকম চিঠি না দিয়ে মূল্যবান জিনিষপত্র সহ হলে তালা ঝুলিয়ে দেন আগরতলা পুর নিগমের কমিশনার শৈলেশ কুমার যাদব। পরবর্তী সময় তিনি নিগমের কমিশনারের কাছে অনুরোধ করলে তিনি গ্রেপ্তারের হুঁশিয়ারি দেন দেবাশীষ সাহাকে বলে অভিযোগ। দেবাশীষ সাহার আরো অভিযোগ, অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে কমিশনার হল থেকে তাকে বের করে দেন। এবং কর্মীদের দিয়ে হলে তালা ঝুলিয়ে দেন। এদিকে নিগমের কমিশনার এদিন দুপুরে একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর ইজারা চুক্তিটি ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। এবং দেবাশীষ সাহাকে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি চিঠির মাধ্যমে পাঁচ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। ইজারা চুক্তিটি ২০২০ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাস থেকে প্রতি বছর ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সাথে বাড়ানো হয়েছিল। তবে দেবাশীষ সাহা কখনো বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেননি। কিন্তু রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছেন। বিবৃতিতে তিনি আরো জানান দেবাশীষ সাহা তিন মাসে ভাড়া পরিশোধ করেনি। ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল হলের জন্য ই-টেন্ডার প্রকাশিত হয়েছিল। তখন দুজন দরদাতা অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু দেবাশীষ সাহা সেই টেন্ডারে অংশ নেয় নি। গত ৬ আগস্ট বিজয়ী দরদাতার নাম হিসেবে ঘোষণা হয়েছে এসএসআর সিনেমাস প্রাইভেটের।