স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৭ মে : র্মরণোত্তর দেহ দান করে গেলেন বিশ্বজিৎ সাহা নামে ৫৮ বছর বয়সি এক ব্যক্তি। কিন্তু মৃত্যুর পর মিলল না সম্মান, বরং পরিবারের লোকজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হলো জিবি হাসপাতালে। মৃতদেহ নিয়ে দিনভর হাসপাতালে দুয়ারে দাঁড়িয়ে হয়রানির শিকার হতে হলো পরিবারের লোকজনদের। জানা যায়, জিরানীয়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সাহা মঙ্গলবার রাতে শারীরিক অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কূলে ঢলে পড়েন।
আইজিএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। যেহেতু তিনি ২০০৮ সালে মরণোত্তর দেহ দান করেছিলেন, সে অনুযায়ী মৃতদেহটি জিবি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যথারীতি জিবি হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন বুধবার সকাল দশটা সময় মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তারপর মৃতদেহটি ফুল দিয়ে সাজিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর এ জি এম সি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে হবে পরিবারকে। আগরতলা গভমেন্ট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কথা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ সাহাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পরিবার এবং পরিজন সকলে বুধবার সকাল নয়টায় হাসপাতালে ছুটে আসে। তারপর আগরতলা গভমেন্ট মেডিকেল কলেজে কর্তৃপক্ষ শুরু করে পরিবারের লোকজনদের হয়রানি করা। জানিয়ে দেন মৃতদেহে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানিয়ে দেন এটাই নিয়ম। যদি মৃতদেহ দিতে চায় তাহলে মৃতদেহ দিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না। তারপর এ বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে পরিবারের লোকজনদের বাক বিতন্ডা শুরু হয়।
কিন্তু তারপরে পরিবারের লোকজনদের জানিয়ে দেয় মৃতদেহ রাখা হবে না, বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দিশেহারা পরিবারের লোকজনেরা এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের অবগত করতে যখন ডাকা হবে বলে জানান তখন কর্তৃপক্ষ বলেন সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি অবগত না করার জন্য। মৃতদেহ ময়না তদন্ত করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে পরিবারের লোকজনেরা আপত্তি করে বলেন যদি মৃতদেহ ময়না তদন্ত করা হয় তাহলে মেডিকেল বোর্ড মৃতদেহটি গ্রহণ করবে না। তারপর বিষয়টি ঘোলা জলে পরিণত হয়। পরিজনেরা অনেকে জানান বিশ্বজিৎ সাহা যখন মরণোত্তর দেহ দান করেছিলেন তখন উনাকে সরকারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
তিনি উৎসাহিত হয়ে মানুষকে মরণোত্তর দেহ দান করার জন্যও বলেছিলেন। ঘরে সরকারের শুভেচ্ছা বার্তা ঝুলিয়ে মানুষকেও উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর যে এতটা হয়রানির শিকার হতে হবে পরিবারকে সেটা তিনি জানতেন না। এ বিষয় নিয়ে পরিবারের যারা মরণোত্তর দেহদান করতে উৎসাহিত ছিলেন তারাও এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন এখন আর ইচ্ছে শক্তি নেই তাদের। ১২ ঘন্টা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে মৃতদেহ নিয়ে তাদের নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেন তারা। শেষ পর্যন্ত দুপুর তিনটা নাগাদ মৃতদেহ পরিবারে হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর পরিবারের লোকজনেরা মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যায়। বলা হয় যথাযথ মৃতদেহটি আগরতলা গভমেন্ট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। মৃতদেহ পরিবারের কাছ থেকে গ্রহণ করে প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তবে এদিন আগরতলা গভমেন্ট মেডিকেল কলেজের কান্ডজ্ঞানহীনতায় মরণোত্তর দেহ দাণের মতো কাজ থেকে উৎসাহ হারিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে এটা দায়সারা মনোভাব নাকি অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে কর্তৃপক্ষের সেটা বলা মুশকিল।