স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১০ মে : লক্ষণ পড়ে অষ্টম শ্রেণীতে। জন্মের পর হারিয়েছে মা। মায়ের ভালোবাসা ছাড়াই নানির কাছে কোলে পিঠে বড় হচ্ছে মেধাবী লক্ষণ। কিন্তু এলাকার মহান জনপ্রতিনিধিদের নজর পড়েনি তার পরিবারের দিকে। আর্জি সরকারি সহযোগিতার। কৈলাসহরের চন্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দেওরাছড়া ভিলেজের অন্তর্গত চার নং ওয়ার্ড এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা লক্ষণ উরাং। পিতা রাজেশ উরাং।
লক্ষণের বয়স যখন প্রায় ৭ কিংবা ৮ ছিল তখন লক্ষণের মার মৃত্যু হয়। কিছুদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়েন লক্ষণের পিতা। আর তারপর থেকেই পরিজনদের কাছে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা লক্ষণ। বৃদ্ধা নানী লক্ষণকে কোলেপিঠে করে মানুষ করতে করতে কখন যে সে পুরো সংসারের দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে সেটা লক্ষণ জানে না। বর্তমানে লক্ষণের বয়স প্রায় ১৪ বৎসর। চন্ডিপুর বিধানসভার অন্তর্গত দেওড়াছড়া এডিসি ভিলেজের কলাছড়া স্কুলে সে বর্তমানে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।
প্রায়সই সে স্কুলে আসে না খেয়ে, লক্ষ্য একটাই পড়তে চায়। হত দারিদ্রতার মধ্যেও মুখের হাসিটা সবসময় অটুট লক্ষণের। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অন্যান্যদের পাশাপাশি একটু বাড়তি নজর রাখেন লক্ষণের পড়াশোনার প্রতি। গৃহ শিক্ষক রেখে পড়ার আর্থিক ক্ষমতা না থাকার পরও স্কুলে যা পড়ানো হয় তা দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে লক্ষণ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান যে, লক্ষণ প্রতিবারই মোটামুটি সব বিষয়ে ৬০ শতাংশের বেশী নম্বর পায়। তবে কিছুটা সাহায্য সহযোগিতা পেলে হয়তো আরো এগিয়ে যাবে।তবে লক্ষণের দিকে নজর নেই এলাকার জনদরদী জনপ্রতিনিধিদের। বছরের পর বছর ধরে লক্ষণ থাকে এক কুঁড়েঘরে! নেই সরকারী বিদ্যুৎ পরিষেবা,নেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর, নেই একটা রেশন কার্ড, নেই তার নানীর বৃদ্ধ ভাতা! রেশন কার্ড না থাকায় স্বল্প উপার্জনের অর্থ থেকে ৩২ টাকা দরে চাল কিনতে হচ্ছে লক্ষণ ও তার নানীর। লক্ষণের সাথে কথা বলতে বলতে সে জানায় সে পড়াশোনা করতে চায় এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে সরকার তার পড়াশোনা সহ সমস্ত সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কারণ আজকের লক্ষণ আগামী দিন ভোটার হবে। যাবে ভোট দিতে। কিন্তু এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অমানবিকতার প্রভাব হয়তো পড়বে ভোট বাক্সে। তখন আর ভোট ভিক্ষায় কাজ হবে না সেই স্বার্থের পিছে দৌড়ানো জনপ্রতিনিধিদের। কারণ আজকে শিশুরা যেমন আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তেমনি তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠবে বলে মনে করে এলাকার সচেতন মহল।