Sunday, February 16, 2025
বাড়িরাজ্যওমিক্রন সংক্রমণের খবর নেই রাজ্যে : সুশান্ত

ওমিক্রন সংক্রমণের খবর নেই রাজ্যে : সুশান্ত

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২২ ডিসেম্বর : ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দেশে। দেশে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিনশো অধিক ওমিক্রন সংক্রমণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের সব রাজ্যের সতর্কতা জারি করেছে। ত্রিপুরা রাজ্যে এখনও কোন ওমিক্রন সংক্রমণের খবর নেই। শুক্রবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর পৌরহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মহাকরণে।

পরবর্তী সময়ে মুখ্যসচিবকে সঙ্গে নিয়ে আধিকারিকদের উপস্থিতিতে আরো একটি বৈঠক হয়। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর পৌরহিত্যে একটি  বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকে বার্তা দেওয়া হয় সমস্ত রাজ্য গুলিকে যাতে তারা তাদের রাজ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সচেতনতা ও সতর্কতা মূলক প্রচার চালায়। এদিনের দুটি বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কথা জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। তিনি জানান এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্ত কাউকেই পাওয়া যায়নি। সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ভারতবর্ষে ৩৫৮ জনকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ায় চিহ্নিত করা হয়েছে।  তারা বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে। বিমান বন্দরে তাদের পরীক্ষা করে সনাক্ত করে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত রাজ্যে ৬৯ জন বিদেশ থেকে যাত্রা করে এসেছে। ৬৯ জনের মধ্যে ৩৩ জনের নমুনা ফের পরীক্ষা করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে ৩১ জনের নমুনা নেগেটিভ এসেছে।  বাকী দুই জনের রিপোর্ট এখনো আসেনি। সহসাই আসবে বলে জানান তিনি। তবে এখনো পর্যন্ত রাজ্যে ওমিক্রন সংক্রমণের কোন খবর নেই বলে জানান তিনি। আগের করোনা পরীক্ষা করা হতো আর টি পি সি আর-র মাধ্যমে। এখনের ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন পরীক্ষা করা হয় হোল জেনাস সিকুয়েন্স -র মাধ্যমে। এই মুহূর্তে রাজ্যে এই টেস্টের কোন ব্যবস্থা নেই। এটা পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে হয়। এই নমুনাগুলি সেখান থেকে পরিক্ষিত হয়ে আসার পরই বাকী ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। তবে আগামী ২০২২ সালের ফ্রেবুয়ারী মাসের মধ্যে রাজ্যের জিবি হাসপাতালে এই ডব্লিউ জি এস -র পরীক্ষার মেশিন বসানো হবে। এরপর আর নমুনা বাইরে পাঠাতে হবে না।

এধরনের পরীক্ষা নমুনা বাইরে পাঠানোর পর ৭ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হয় রিপোর্টের জন্য। কিন্তু রাজ্যে এই পরীক্ষার মেশিন বসলে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রয়োজন পড়বে না বলে জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। উৎসবের মরশুমে রয়েছে রাজ্যের মানুষ। তাই স্বাভাবিক ভাবে এই উৎসবের সময়ে কিছু নির্দেশিকা সকলে মানতে হবে বলে জানান তিনি। তবে আহবান জানান বিগত দিনে যেভাবে সম্মিলিত প্রয়াসের  মাধ্যমে কোভিডকে পরাস্ত করা গেছে, ঠিক তেমনি ভাবে ওমিক্রন যাতে ছড়াতে না পারে তার দিকে নজর রাখতে হবে রাজ্যবাসীকে। সতর্ক ও সচেতন থাকার মাধ্যমেই এটা সম্ভব বলে জানান তিনি। পুরনো কিছু কোভিডের অভ্যাস আবার মান্যতা দেওয়ার আহবান জানান তিনি। ওমিক্রন দ্রুত ছড়ালেও তাতে মৃত্যুর হার কম। তাই স্বাভাবিক ভাবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু সকলকে সহযোগিতা করার আহবান জানান তিনি। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে রাজ্য সরকার মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সামজিক দূরত্ব যাতে বজায় থাকে তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। কোভিডের স্টেট সার্ভিলেন্স অফিসার ডাক্তার দীপ দেববর্মা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান বিদেশ থেকে রাজ্যে আসা যাত্রীদের দুই  ভাগে ভাগ করা হয়েছে। হাই রিস্ক দেশ থেকে যারা আসছে তাদের একটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর যারা নর্মাল কান্ট্রি থেকে আসছে তাদের একটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সর্বশেষ মাসে প্রায় ১ হাজার যাত্রী বিদেশ থেকে ত্রিপুরা  রাজ্যে এসেছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছে বাংলাদেশ থেকে আগত। হাইরিস্ক কান্ট্রি থেকে এসেছে এমন রয়েছে ৬৯ জন। বর্তমানে হাইরিস্ক কান্ট্রিতে রয়েছে প্রায় ২৫ টি দেশ। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য গাইডলাইনও দুই ধরনের রয়েছে। নর্মাল কান্ট্রি থেকে যারা আসবে তাদের আরটিপিসিআর টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ থাকলে, করোনার টিকার দুইটি ডোজ নেওয়া থাকলে এবং কোন উপসর্গ না থাকলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে তাদের মধ্যে ২ শতাংশ মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হবে রেণ্ডম বেসিসে। এইটা ভারত সরকারের নির্দেশিকা। হাইরিস্ক কান্ট্রি থেকে যারা আসবে তাদের ১০০ শতাংশ আরটিপিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক ইমিগ্রেসন পয়েন্টে।

 আখাউরা চেক পোস্ট ব্যতীত ত্রিপুরা রাজ্যে আর কোন ইমিগ্রেসন পয়েন্টের প্রশ্ন আসে না। কারন বিদেশ থেকে রাজ্যে যারা আসছে তারা অন্য রাজ্য হয়ে আসছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিদেশ থেকে আসার পর যাত্রীরা যে রাজ্যে নামছে সেখানে তাদের টেস্ট হয়ে যাচ্ছে। যাদের টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে তাদের  নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাথে সাথে  তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে অবগত করা হচ্ছে। ত্রিপুরা রাজ্যে এমন ৬৯ জন লোক এসেছে। তাদের ৭ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক। অষ্টম দিনে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে ৭ দিন বাড়িতে নিজের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। যাদের রিপোর্ট পজেটিভ আসবে তাদের স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা মেনে আইসোলেশনে থাকতে হবে। রাজ্যে যে ৬৯ জন যাত্রী এসেছে তাদের মধ্যে ৩৩ জনের নমুনা অষ্টম দিনে সংগ্রহ  করা হয়েছে। যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে তারা যেন সঠিক ভাবে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করে তার জন্য তাদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে তথ্য দিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল জানান রাজ্যে যত সংখ্যক মানুষ করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে, তার মধ্যে ৮২ শতাংশ মানুষ  দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে। এখনো ১৮ শতাংশ মানুষ এমন রয়েছে যাদের দ্বিতীয় ডোজের সময় হয়ে গেছে কিন্তু তারা দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেনি। তাই  যাদের দ্বিতীয় ডোজের সময় হয়ে গেছে তাদের অবিলম্বে দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। আর রাজ্যে ওমিক্রন মোকাবেলা করতে পরিকাঠামো রয়েছে। অযথা আতঙ্কের কোন কারণ নেই।কেউ যাতে ওমিক্রন নিয়ে বিভ্রান্ত না ছড়ায় তার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য