স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৪ মার্চ : রোগীর জন্য না হলেও, অন্তত সেই মায়ের জন্য রক্ত দান করুন, যে তার সন্তান হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারে না। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত এক মাস ধরে রক্তদান শিবির রাজ্যে বন্ধ হয়ে পড়েছে। ঝরছে রক্ত, কিন্তু রক্তের জোগান নেই। ব্লাড ব্যাংকগুলি শূন্য হয়ে পড়ে আছে। হন্ন হয়ে ঘুরছে রোগীর পরিজন। জিবি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের প্রতিদিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত, থ্যালাসেমিয়া এবং ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর পরিবার-পরিজনেরা রক্তের জন্য আসলেও মিলছে না রক্ত। পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে আছে রক্তের জোগান। বিশেষ করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলি ব্যস্ত থাকায় গত কয়েক মাসে রক্তদান শিবির হয়নি বলেই চলে। কিন্তু এতে করে পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
রক্তের অপর নাম জীবন। কোন গ্রুপের রক্ত জিবি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে মিলছে না রোগীর পরিজনদের। শেষ পর্যন্ত রোগীর পরিজনকে ডোনার খুঁজে এনে রক্তের বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে। এভাবে আর আগামী কয়েক দিন চলতে থাকলে বহুরোগীর জীবন সংকটময় হয়ে পড়বে। বহু রোগীর নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন হয়। সেই রক্তের জোগান দিতে কারোর আবার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। কিভাবে রক্তের জোগান দেবে। অসহায় রোগীর পরিজনদের আবেদন যেহেতু রক্ত টাকা দিয়ে কেনা যায় না, তাই এভাবে ডোনার দিয়ে কতদিন তারা রক্তের বন্দোবস্ত করবে। এভাবে অনেক প্রশ্ন যখন রোগীর পরিজনদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন জিবি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মানুষের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছে যাতে রক্তের জোগান দিতে রক্তদান শিবির আয়োজন করা হয়। ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিমত একবার যদি লোকজন রক্তদানকে তাদের কর্তব্য হিসাবে বিবেচনা করা শুরু করে, তাহলে হাসপাতালে রোগীদের জন্য আর রক্তের অভাব হবে না। কারণ রক্তের চেয়ে বড় কোনো মানব সেবা হতে পারে না। একই অবস্থা রাজ্যের দ্বিতীয় রেফারেল হাসপাতালে।
আইজিএম হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, জানুয়ারি মাসে মাত্র তিনটি ভলেন্টিয়ারি ক্যাম্প হয়েছে। এবং ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র দুটি ভলেন্টিয়ারি ক্যাম্প হয়েছে। সেই রক্ত সাথে সাথেই রোগী-পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপর থেকে রক্তের প্রয়োজন হলে রোগীকে সেই গ্রুপের ডোনার নিয়ে আসতে হচ্ছে। টেস্ট করে সে রক্ত তুলে দেওয়া হচ্ছে রোগীর পরিজনদের হাতে। এভাবে চলতে থাকলে সংকটের মুখে পড়বে বহু রোগীর জীবন। তাদের অভিমত একবার যদি লোকজন রক্তদানকে তাদের কর্তব্য হিসাবে বিবেচনা করা শুরু করে, তাহলে হাসপাতালে রোগীদের জন্য আর রক্তের অভাব হবে না। এদিকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে। ঘটা করে সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে মন্ত্রীদের হাত থেকে পুরস্কার তুলে নিলেও তারা সঠিক সময়ের মতো দায়িত্ব পালন কতটা করছে সেটাও আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে। রাজ্যে যতগুলি সামাজিক সংস্থা রয়েছে সেগুলি যদি এই দুর্যোগ সময়ে নিয়মিত রক্তদানের উদ্যোগ গ্রহণ করত তাহলে শূন্য হতো না ব্লাড ব্যাংক। পুনরায় জীবন ফিরে পায় বহু রোগী।