স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১ মার্চ : বৃহস্পতিবার ২ রা মার্চ ত্রয়োদশ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল। ৬০ আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরা বিধানসভার জন্য গননা কেন্দ্র করা হয়েছে ২১ টি। আগরতলা উমাকান্ত অ্যাকাডেমিতে মোট ১৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রের গণনা কাজ চলবে। এই গণনা কেন্দ্রেই মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহার ভাগ্য নির্ধারণ হবে। তিনি ৮ নং টাউন বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। মুখ্যমন্ত্রীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা কংগ্রেস প্রার্থী আশীষ কুমার সাহা। দীর্ঘ সময়ের বিধায়ক তিনি।
২০১৮ সালে তিনি বিজেপি থেকে প্রার্থী হয়ে এলাকায় জয়ী হয়েছিলেন। তারপর তিনি বিধায়ক পদ এবং বিজেপির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগদান করেন। গত উপনির্বাচনে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। অপরদিকে ৯ বনমালীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি মনোনীত প্রার্থী রাজীব ভট্টাচার্যী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী এলাকায় প্রাক্তন বিধায়ক তথা কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায়। এদিকে ৬ আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী সুদীপ রায় বর্মন। তিনি এলাকার দীর্ঘ সময়ে বিধায়ক। বহুবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি এলাকায় জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে গেরুয়া চড়ে তিনি শামিল হয়ে বিজেপি থেকে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু দলের সাথে মতবিরোধ হয়ে যোগ দেন পুনরায় কংগ্রেসে। কিন্তু উপনির্বাচনে তিনি আবারও কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে জয় হাসিল করে নেন। এবং মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. অশোক সিনাকে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু ২৩ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ রায় বর্মনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পাপিয়া দত্ত। পাপিয়া দত্ত বিজেপি থেকে মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। এলাকার হাই ভোল্টেজ নেতা সুদীপ রায় বর্মনকে পরাজিত করতে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছে বিজেপি। এদিকে ৪ বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ডাক্তার দিলীপ দাসের সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইএম প্রার্থী সুদীপ সরকার।
সুদীপ সরকার ১০,৩২৩ -এর চাকরিচ্যুত শিক্ষক। এই কেন্দ্রে বিজেপি বনাম সিপিআইএমের মূল লড়াই লক্ষণীয় রাজ্যবাসীর কাছে। এদিকে ৭ রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বিজেপি প্রার্থী সুরজিত দত্ত এবং বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী পুরুষোত্তম রায় বর্মন। ভোটের দিন সকাল থেকেই রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের কালিকাপুর, বর্ডার গোলচক্কর স্থিত জয়পুর সহ আশপাশ এলাকায় বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ছিল বিরোধী দলের কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এবং মারধরের অভিযোগ ছিল ভোটাদের। মানুষ সমস্ত বাঁধা এড়িয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার জন্য ভোট কেন্দ্রে দল বেঁধে গেছে। ৫ খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিধানসভা কেন্দ্র বলা যায়। দীর্ঘ সময়ের বাম বিধানসভা কেন্দ্র খয়েরপুর। এ কেন্দ্রের বানিজ্যনগরে চলে মাফিয়া রাজ। ২০১৮ সালে মানুষ পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনে ভোট দিয়ে এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করেছিল বিজেপি প্রার্থী রতন চক্রবর্তীকে। কিন্তু দীর্ঘসময়ের মাফিয়া রাজ এলাকার থেকে বিলুপ্ত হয়নি। ধারাবাহিকভাবে অভিযোগ উঠেছে এলাকায় প্রাক্তন বিধায়ক পবিত্র করের মতো রতন চক্রবর্তী মাফিয়া রাজকে প্রতিপালন করেছে। এবারের নির্বাচন ছিল এক অন্যতম মেজাজের। ভোটের দিন বিক্ষিপ্ত কিছু সন্ত্রাসের ঘটনাও এলাকায় সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ। এখন দেখায় মানুষ এই কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী পবিত্র কর, বিজেপি প্রার্থী রতন চক্রবর্তী এবং তিপ্রা মথার প্রার্থী লক্ষ্মী নাগ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তাজেন দাসের মধ্যে কাকে এলাকার বিধায়ক হিসেবে বেছে নিতে রায় দিয়েছেন। এদিকে ১০ মজলিশপুর বিধানসভা কেন্দ্রকে বিশেষ নজর কাড়া কেন্দ্র। এলাকায় মূল লড়াই সিপিআইএম প্রার্থী সঞ্জয় দাস এবং বিজেপি প্রার্থী সুশান্ত চৌধুরীর মধ্যে। ১ সিমনা বিধানসভার কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী বিনোদ দেববর্মার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা আই পি এফ টি থেকে তিপরা মথায় যোগদান করা বৃষকেতু দেববর্মা। এলাকায় সিপিআইএম প্রার্থী রয়েছেন কমোদ দেববর্মা। মথার জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। এদিকে মোহনপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি রতন লাল নাথের প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী প্রশান্ত সেন চৌধুরী। এবং মথার প্রার্থী রয়েছেন তাপস দে। এই কেন্দ্রে মূলত ত্রিমুখী লড়াই হবে। অপরদিকে ১১ মান্দাই বাজার বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী রাধাচরণ দেববর্মা, বিজেপি প্রার্থী তড়িৎ দেববর্মা এবং মথার প্রার্থী স্বপ্না দেববর্মার মধ্যে হবে ত্রীমুখ লড়াই। এই কেন্দ্রে ফ্যাক্টর হতে পারে মথার প্রার্থী স্বপ্ন দেববর্মা। যার কারণে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীপ রাধা চরণ দেববর্মা এবং তড়িৎ দেববর্মার মধ্যে প্রধান লড়াই ভাবলে ভুল হবে। এবং এই কেন্দ্রটি মথা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নিয়েছে।
এদিকে বাধার ঘাট বিধানসভা কেন্দ্রে মুল লড়াই ঘরের ছেলে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী পার্থ রঞ্জন সরকারের। এলাকায় বিজেপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীর মধ্যে মূলত লড়াই। দুই দলের মধ্যে জয়ের সম্ভাবনা ৫০/৫০ শতাংশ। ১৩ প্রতাপগড় বিধানসভা কেন্দ্রটি মূলত শহরে উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রেবতী মোহন দাস এবং সিপিআইএম প্রার্থী রামু দাসের লড়াই। বিজেপি প্রার্থী নিয়ে এলাকায় অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের কারণে পাল্লা ভারী রামু দাসের। এই কেন্দ্রটি বরাবরই বামেদের দখলে থাকতো। ২০১৮ সালে এলাকায় বিজেপি প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছেন রেবতী মোহন দাস। কিন্তু এবার তিনি টিকিট পাওয়ায় প্রত্যাশী বিজেপি নেতাদের মধ্যে এলাকায় কিছুটা ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এদিকে ১৮ সূর্যমনি নগর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রামপ্রসাদ পালের সাথে লড়াই কংগ্রেস প্রার্থী সুশান্ত চক্রবর্তী। এই কেন্দ্রে স্নায়ুর চাপ থাকলেও জয় ধরে রাখতে মরিয়া মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল। নজর কাড়া এই বিধানসভার গণনা হবে উমাকান্ত স্কুলে হবে। আর কয়েক ঘন্টা বাকি। ইভিএমবন্দি জনতার রায় সামনে উঠে আসতে উড়বে আবির। এবং এই ১৪ টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে হবে কয়েকজন মন্ত্রিসভার সদস্য। সুতরাং জনগণের প্রত্যাশিত জয় কার হয় সেটা এখন দেখার।