Monday, January 13, 2025
বাড়িরাজ্যনির্বাচনের পর আবার আসব ত্রিপুরায়, ত্রিপুরাকে আমরা ছাড়ছি না : মমতা

নির্বাচনের পর আবার আসব ত্রিপুরায়, ত্রিপুরাকে আমরা ছাড়ছি না : মমতা

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ ফেব্রুয়ারি : বাংলার মডেলকে রোল মডেল করতে মঙ্গলবার আগরতলা শহরে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রোড হাটলেন বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের রোড শো আগে থেকেই ঘোষণা ছিল। সে মোতাবেক মঙ্গলবার সকাল থেকে গোটা রাজ্য থেকে কাতারে কাতারে মানুষ এসে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে জমায়েত হতে থাকে।

আমজনতার অভাবনীয় সাড়া পেয়ে হাসিমুখে রোড শো শুরু করেন বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এদিন জনসমুদ্রের সামনে ছিলেন মমতা হাতজোড় করে হাজার হাজার মানুষকে আপন করে নিলেন এদিন। যেন মনে হয়েছিল এটা মমতার জন্য ভিন রাজ্য নয়, বাংলারই কোন এক শহর। পরবর্তী সময় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে এসে জনসভায় উপস্থিত হয়ে রাজ্যবাসীকে সম্বোধন করলেন তিনি। এদিন তৃণমূল নেত্রী রাজ্যবাসীকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে এক আত্মার সম্পর্ক বলে বার্তা দিলেন। তিনি আবেগঘন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বলেন, আমাদের ভাষা এক, সংস্কৃতি এক, অভ্যাস এক, ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা এক। বাংলা আর ত্রিপুরা আসলে ভাইবোন। ত্রিপুরা, মেঘালয় তথা গোটা উত্তরপূর্ব ভারতের প্রতি তাঁর বিশেষ ভালবাসা আছে, সেটাও এদিন মনে করেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু বক্তব্যের শুরুটা আবেগ দিয়ে শুরু হলেও ডাবল ইঞ্জিন সরকারকে তুলধুনো করতে ভুল করেননি মমতা। এদিন ত্রিপুরার মাটিতে বিজেপিকে আক্রমণ করতে বাংলা মডেলকেই হাতিয়ার করলেন মমতা। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, দুয়ারে সরকার থেকে শুরু করে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পর্যন্ত। বাংলার উন্নয়নের ফিরিস্তি সাজিয়ে নিয়ে গিয়ে ত্রিপুরাবাসীকে দুর্দশা থেকে মুক্তি দেওয়ার স্বপ্ন দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী। সবুজশ্রী থেকে সমব্যাথী পর্যন্ত বাংলার সরকারের যাবতীয় কর্মসূচির কথা তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন, বাংলা যদি পারে, তাহলে ত্রিপুরা কেন পারবে না?ত্রিপুরায় এবার ৬০টি আসনের মধ্যে ২৮ টি’তে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। দলবদলুদের জন্য দলের সংগঠনের ক্ষতি হয়েছে সেটাও বিলক্ষণ জানেন মমতা।

তাই ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, আপনারা বাম অপশাসন দেখেছেন, বিজেপি দেখেছেন, কংগ্রেসের সরকারও দেখেছেন। একবার তৃণমূলকে সমর্থন করুন। বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস উন্নয়ন করেছে, ত্রিপুরাতেও উন্নয়ন করতে পারবে। আর যদি প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারে তাহলে ফিরিয়ে দেবেন। এবং এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূল নেত্রীর সংযোজন, ‘যদি একটু পাই, হাজার গুণ ফেরত দেব। আমরা ভোটের আগে যতটা বলি, ভোটের পর তার থেকেও বেশি করে করি।’

মমতা বলেন, তিনি তৃণমূল না গঠন করলে কংগ্রেসে থাকলে বাংলায় পরিবর্তন হতো না। আজ বাংলায় উন্নয়ন হতো না বলে অভিমত ব্যক্ত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা যেদিন বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল যুবসমাজ যাতে এগিয়ে এসে ত্রিপুরাকে অত্যাচার থেকে মুক্ত করে। ত্রিপুরায় এসে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব আক্রান্ত হয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের ত্রিপুরার বিজেপি সরকার ঔষধ পর্যন্ত ঠিকভাবে দিত না। তারপর ত্রিপুরা থেকে সেই আহত কর্মীদের কলকাতা নিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে।

এর মধ্যে অনেকে মারাও গেছে। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের নেতাদের দেখা মেলে শুধু মাত্র ভোট আসলে। আর ভোট চলে গেলে তোমার দেখা নাই গো তোমার দেখা নাই। নির্বাচন আসলে ধনে, মানে, প্রানে জোর লাগায় বিজেপি। তারা দিল্লিকে যেভাবে ডুবিয়ে দিয়েছে ত্রিপুরা সেইভাবে ডুবিয়ে দিতে চাইছে। এদিন বিজেপি, সিপিআইএম এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন পশ্চিমবঙ্গে তাদের বলা হয় রাম, বাম, শ্যাম। আবার কেউ কেউ বলে জগাই, মাধাই, গদাই। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই জগাই, মাধাই, গদাই প্রার্থী দেয়। লজ্জা করে না? ত্রিপুরায় এক নমুনার রাজনীতি আর বাংলায় আরেক নমুনার রাজনীতি! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন, কংগ্রেস বা সিপিএম নয়। বিজেপির বিকল্প শুধু তৃণমূলই। সিপিএম ২৫ বছরে ত্রিপুরাকে শেষ করে ফেলেছে। আর কংগ্রেস ত্রিপুরায় সিপিএমের বি টিম হিসাবে কাজ করছে। মমতার অভিযোগ, কংগ্রেসে দলবদলু ভর্তি। তাঁরা চার বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য দল বদলান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বিজেপি’কে আক্রমণ করে আরো বলেন, এই বিজেপি সরকারের আমলে মানুষ আন্দোলন করতে পারেনি, দাবি নিয়ে কথা বলতে পারেনি। হয়তো এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে বলে আজকের এ জনসভাতে করা সম্ভব হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বক্তব্য শেষ করার আগে আরো বলেন, নির্বাচনের পর আবার আসব ত্রিপুরায়। ডাবল ইঞ্জিন হয়, নাকি সিঙ্গেল ইঞ্জিন হয়, না মানুষের ইঞ্জিন হয় সেটা দেখার জন্য। আর মনে রাখবেন ত্রিপুরাকে আমরা ছাড়ছি না। আর ত্রিপুরাকে আমরা ভুলছি না। ত্রিপুরার সাথে আমরা ছিলাম, আছি আর থাকবো এবং লড়াই করব। ত্রিপুরার উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করতে চাই। এভাবে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে এই দিন বক্তব্য রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আয়োজিত সভায় এদিন এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পীযুষ কান্তি বিশ্বাস, সংসদ সুস্মিতা দেব।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য