স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৬ ডিসেম্বর : কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বর্তমান সরকার ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তারা কথা রাখতে পারেনি। গত ৫৭ মাসে রাজ্যের কৃষকদের অবস্থা আরো বেশি দুর্বল হয়েছে। কিন্তু সরকারের প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন এক বছরেই নাকি রাজ্যের নথিভুক্ত কৃষক ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৫৭ জনের আয় দ্বিগুণ হয়েছে। সরকারের এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল।
মঙ্গলবার সারা ভারত কৃষক সভা রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই অভিযোগ তুললেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক পবিত্র কর। তিনি বলেন ২০১৮-১৯ সালে ধান উৎপাদন হয়েছে ১১,৯০,২৬৮ মেট্রিক টন। সরকার কর্তৃক তৎকালীন সময়ে ধান ক্রয় করা হয়েছিল ১০,৪০৬ মেট্রিক টন। এর পরিমাণ কমে ২০২০-২১ সালে ধান উৎপাদন হয়েছে ১২,০৪,৫৫০ মেট্রিক টন। সরকার কর্তৃক ধান ক্রয় করা হয়েছে ১৩,৭৪৬,৯ মেট্রিক টন।
২০২১ ২২ সালে সরকার কর্তৃক ধান ক্রয় করা হয়েছে মাত্র ১৯,৮১৭ মেট্রিক টন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ২০১৮ সালে পর এখন পর্যন্ত ৩.৯১ শতাংশ কৃষক উপকৃত হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছে রাজ্যে ৯৬ শতাংশ কৃষক। এতে বারবার স্পষ্ট হয়ে গেছে রাজ্যের কৃষকদের নিয়ে সরকার বিভ্রান্ত সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বলে জানান পবিত্র কর। তিনি আরো বলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সরকারের কৃষি মন্ত্রক থেকে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় বিধায়ক শংকর রায়ের করা একটি প্রশ্নের লিখিত উত্তরে বলেছিলেন যে ২০২২ সালের মধ্যে ত্রিপুরার কৃষকদের আয় দিয়ে গুণ করার লক্ষ্যে সরকার একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু তা বর্তমানে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কৃষকদের আয় দ্বিগুণ তো দূরের কথা, কৃষি জাতীয় সামগ্রী উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৫-১৬ সালে উৎপাদিত ধান দিয়ে রাজ্যের মোট ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো। অর্থাৎ ৩৫৪ দিনে চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রক থেকে গত ২২ শে মার্চ বিধানসভা বর্তমান বিধায়ক রতন কুমার ভৌমিকের আনা এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রেক্ষিতে জানানো হয়েছে বর্তমানে উৎপাদিত ধান দিয়ে রাজ্যের মোট ৩১৬ দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন ২০১৫-১৬ সালে ত্রিপুরার চাষযোগ্য জমি পরিমান ছিল ২,৭২,৮২৩ হেক্টর। ২০২০-২১ সালে তার কমে দাঁড়িয়েছে ২,৫৫,২৪১ হেক্টর। এতে বারবারই স্পষ্ট হয়ে গেছে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়নি, হতাশ হয়ে কৃষকরা কৃষি কাজ থেকে দূরে সরে গেছে বলে জানান পবিত্র কর। তিনি আরো বলেন রাজ্যে আশি শতাংশ জল সেচের মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। দপ্তরের সংস্কার করার কোন উদ্যোগ নেই। এর বিরুদ্ধে আগামী দিনে কৃষকদের স্বার্থে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। আয়োজিত এই দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অঘোর দেববর্মা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।