স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৯ নভেম্বর : সারা দেশের মতো ত্রিপুরা রাজ্যেও গণতন্ত্র নেই, কর্মসংস্থানের অভাব, জিনিসপত্রের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। এই সমস্যাগুলি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে শুনতে চাইছে না সরকার। মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। তাই এগুলি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এবং সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল ভারত জুড়ো, ত্রিপুরা বাঁচাও যাত্রা ২৮ নভেম্বর শেষ হয়েছে।
প্রায় ১০ হাজার পদ যাত্রী রাজ্যের ৬০ টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার রাস্তা পরিক্রমা করেছে। প্রদেশ কংগ্রেসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২০০ কিলোমিটার পদযাত্রা করার। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার পদযাত্রা করা হয়েছে। পাহাড় থেকে সমতল সহ বিভিন্ন অলি গলিতে ঘুরেছে কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। মানুষ কংগ্রেসকে স্বাগত জানিয়েছে। কংগ্রেসের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের ভারত জুড়ো, ত্রিপুরা বাঁচাও যাত্রা শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটা জানান পদযাত্রার চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। আরও জানান প্রদেশ কংগ্রেসের ভারত জুড় ত্রিপুরা বাচাও জাত্রাকে সাধারন মানুষ মন থেকে স্বাগত জানিয়েছে। পদ যাত্রা চলাকালীন সময় পদ যাত্রীদের সাথে সাধারন মানুষের সাথে নানান কথা হয়েছে। সাধারন মানুষের কথায় সরকার কর্ণপাত করছে না।
সুদীপ রায় বর্মন আরো বলেন, সাধারন মানুষের বক্তব্য সরকার রাজ্যে এইমস স্থাপন করার কথা ছিল। দুইটি এইমস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো একটা এইমসও হয়নি। সরকারি হাসপাতাল গুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করতে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের ন্যায় সাধারন মানুষকে টাকা খরচ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। তিনি এদের সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে বলেন যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এই হাসপাতাল ত্রিপুরা রাজ্যে করা হবে সেই কাজের অগ্রগতি কতটা হয়েছে। আরো প্রশ্ন-রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য পুরনো জেল রোডে একটি আইটি হাব করা হবে, সেই কাজটা কতটা এগিয়েছে তা নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন তিনি। কারণ কংগ্রেসের পদযাত্রায় এ বিষয়েও যুবকরা প্রশ্ন তুলেছেন। আরো প্রশ্ন তোলা হয় রাজস্থানের কৌটা, ব্যাঙ্গালোর এবং মুম্বাইতে যে ত্রিপুরা ভবন গড়ে তোলা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সেই কাজটা কতটা এগিয়ে গেছে। পদযাত্রায় ছাত্রছাত্রীরা এসে দাবি করেছে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় যাতে দূরাগত শিক্ষা কোর্স পুনরায় চালু করা হয় এবং বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার টাকা করে নেওয়ার বন্ধ করার জন্য দাবি জানায়। এদিকে রাজধানীর বটতলা এলাকায় পদযাত্রার সময় নিগম দ্বারা উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীরা এসে সরকারের কাছে পুনর্বাসনের জন্য দাবি জানিয়ে কংগ্রেসকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বলে।
পাশাপাশি এদিন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সংবাদ মাধ্যমের উপর বর্তমান সরকারের মনোভাব প্রসঙ্গ টেনে বলেন সত্য কথা প্রকাশ করতে পারছে না সাংবাদিকরা। সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইতিমধ্যে রাজ্যে ৪৭ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। পূবর্তন সরকারের আমলে দুজন সাংবাদিক খুন হয়েছে। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। সিবিআই এর মাধ্যমে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি আজও পালন হয়নি। এহেন পরিস্থিতি সমাজের প্রত্যেকটা অংশের মানুষ ভুগছে। তাই প্রত্যেকটা মানুষ পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেসকে। মানুষের অভূতপূর্ব আশ্বাস পেয়ে কংগ্রেস সন্তুষ্ট জানান তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপ রায় বর্মণ অভিযোগ করেন বিভিন্ন জায়গায় প্রদেশ কংগ্রেসের ভারত জুড়ো, ত্রিপুরা বাঁচাও পদযাত্রাকে বাধা দানের চেষ্টা করা হয়েছে শাসক দলের পক্ষ থেকে। কোথাও কোথাও পদযাত্রায় হামলা সংগঠিত করা হয়েছে। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন সর্বভারতীয় সম্পাদিকা জারিতা লাইফাঙ বলেন ভারতীয় জনতা পার্টি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বলছে তিনি দল পরিবর্তন করতে চলেছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলে জানান তিনি। এইদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা।