স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১ ডিসেম্বর : মণিপুর, ন্যাগাল্যান্ড, মিজোরাম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য গুলির মধ্যে এইচ আই ভি পজেটিভ রোগী রয়েছে। কিন্তু তাদের বিশ্বমানের বা জাতীয় স্তরের পরিষেবা দিয়ে চিকিৎসা করানো এবং স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসার মতো কোন কেন্দ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে নেই।
তাই আগরতলা বা ধর্মনগরে একটি জাতীয় মানের চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। এতে স্থানীয়দের রোজগার সাধিত হবে। অন্যদিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য সহায়ক হবে। বুধবার ত্রিপুরা এইডস কনট্রোল সোসাইটির উদ্যোগে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর প্রজ্ঞা ভবনে আয়োজিত রাজ্য স্তরীয় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। জাতীয় মানের চিকিৎসা কেন্দ্র উত্তর জেলায় স্থাপনে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে তার আগে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। অস্পৃশ্য মানসিকতা থেকে বড়িয়ে আসতে হবে। আগে বিজেপিকেও অস্পৃশ্য ভাবে দেখা হত।
এটা করেছিল যারা মেকি সেকুলারিজমের নামে যারা রাজনৈতিক ব্যবসা করে তারা। ভারত মাতার জয় বলা যেত না। কেননা তাতে সমাজতন্ত্রের বিরোধীতা করা হয়। এখন এই রীতির পরিবর্তন ঘটেছে। কোণ অসুবিধা হচ্ছে না কারুর। কিছু লোক ক্ষমতায় বসে এই সমস্ত তৈরি করে। এই সেকুলারিজম আর ত্রিপুরাতে আসবে না। এটা অতীত। আজকের যুবকরা সমস্ত কিছু বোঝে। বিজ্ঞানের কারনে মানুষকে বোকা বানানো আর সম্ভব নয়। এবারের বিষয় বৈষম্য দূরীকরণ এইডস নির্মূল করা এবং অতিমারি গুলি রুখে দেওয়া। আগরতলা জিবি হাসপাতালে প্রতিদিন দুই থেকে ৩ জন এইচ আই ভি পজেটিভ রোগী আসে। তার বড় অংশ ছাত্রছাত্রী। আগরতলার স্বনামধন্য কলেজ গুলির পড়ুয়াদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশী। লুকোচুরি খেলা আর লাভ নেই। সোজা সাপ্টা ভাবে কথা বলে তা স্বীকার করে নিতে হবে। এইডস হয়ে গেলে লুকিয়ে রাখার একটা প্রবনতা আছে। জনমানসে না বলার একটা প্রবণতা আছে। এটা তাদের দোষ নয়। এটা সমাজের দোষ। এমন মানসিকতা তৈরি করে রাখা হয়েছে। অপ প্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এরপর সহজতর করতে হবে ব্যবস্থাপনাকে। ত্রিপুরা জাগ্রুপ। এই রাজ্যের জনতা সব জানে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে। অস্পৃশ্য মানসিকতা থেকে বেরুতে হবে। কি ভাবে এইডস হতে পারে তা প্রচারে আনতে হবে। কাজ হচ্ছে। কিন্তু যে গ্রুপ প্রচার হচ্ছে না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই ভাবে নতুন প্রজন্ম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা চিন্তার বিষয় বলে জানান তিনি। রাজধানীর যে কলেজ এই ক্ষেত্রে বেশী আক্রান্ত সেই কলেজের প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর এইডস পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে এই কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার বার্তা দেন। অভিভাবকদের নজর দারীর কারনে এটা হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তর, আরক্ষা দপ্তর ও শিক্ষা দপ্তর মিলে রূপরেখা বানিয়ে এই কলেজ গুলিতে প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর এইডস সনাক্ত করার প্রক্রিয়া নিতে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। নেশা সেবনের উপর কড়া হতে হবে। এই প্রচার আরও ব্যপক ভাবে করতে হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এখনো পর্যন্ত ৩০০ জনের উপর মৃত্যু হয়েছে ত্রিপুরাতে বলে জানান তিনি।
আগে যারা ছিল তাদের খামতি ঘাটতে রাজ্যের মানুষের উপর চাপিয়ে দিত। ত্রিপুরার মানুষের মধ্যে কোণ কমতি নেই। রাজ্যের মানুষের কাছে সব আছে। ব্যবস্থিত ব্যবস্থার মধ্যে সমস্ত কিছু লাগু করতে হবে। এই রাজ্যে এইডস এর কোন জায়গা নেই তার শপথ নেওয়ার জন্য সকলের কাছে আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। এইডস ও নেশার বিরুদ্ধে পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী , স্বাস্থ্য সচিব জে কে সিনহা সহ অন্যান্যরা। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। একটি পোস্টারের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরা। ১৯৯৯ সারা রাজ্যের এইচআইভি এবং এইডস কর্মসূচি চালু হয়। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ২০২১ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ত্রিপুরার মোট ২৪৫৯ জন এইচআইভি শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ১৭০৯ জন পুরুষ, ৭৫০ জন মহিলা এবং ৯৭ জন শিশু। ২০০০-২০২১ -এর অক্টোবর মাস পর্যন্ত রাজ্যে ৬৪০ জন এইডস আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর ৮১,২৫৪ জনের এইচ আই ভি পরীক্ষা করে ৫৬০ জনের শরীরে এইচ আই ভি শনাক্ত হয়। এইচ আই ভি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি উত্তর জেলায়। প্রত্যেক জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯৪ জন, পশ্চিম জেলায় ৫৬৪ জন, ধলাই জেলায় ৪০৮ জন, ঊনকোটি জেলায় ২৬১ জন, খোয়াই জেলায় ১৮৮ জন, গোমতি জেলায় ১৮৩ জন, সিপাহিজলা জেলায় ১৩৭ জন এবং দক্ষিণ জেলায় ১০৯ জন আক্রান্ত রয়েছেন। বহিঃরাজ্য থেকে ১৫ জন আক্রান্ত রোগী রাজ্যে বসবাস করছেন।