Wednesday, February 12, 2025
বাড়িরাজ্যপ্ল্যানারী বৈঠকে ত্রিপুরার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

প্ল্যানারী বৈঠকে ত্রিপুরার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১০ অক্টোবর : বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গত সাড়ে চার বছরে অর্থ ও সামাজিক থেকে ব্যাপক পরিবর্তনের এসেছে ত্রিপুরা রাজ্যের। এর মধ্যে গত ৮ এবং ৯ অক্টোবর গুয়াহাটি স্থিত আসাম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কলেজে অনুষ্ঠিত হয় ৭০ তম প্ল্যানারী মিটিং। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চল পরিষদের চেয়ারম্যান অমিত শাহ এই বৈঠকে পৌরহিত্য করেন। কেন্দ্রীয় উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি সহ পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরাও এই বৈঠকে অংশ নেন।

উত্তর পূর্বাঞ্চলে রাজ্যগুলির রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্ল্যানারীর প্রথম দিনের বৈঠকে ডোনার মন্তকের মন্ত্রী, সচিব, উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের সচিব, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্য সচিবগণ এবং কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী দপ্তরের আধিকারিকরা এই বৈঠকে অংশ নেন। এই তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় অর্থাৎ পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা, বেসরকারি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, ফাইভ জি পরিষেবা, ডিজিটাল স্কুল চালু করা সহ অন্যান্য বিষয়ের কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের আধিকারিকদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকের পর সোমবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। বৈঠকের দ্বিতীয় দিন তিনি নিজে রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অগ্রাধিকার বিষয়গুলি সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের সামগ্রিক বকেয়া বিষয়গুলি দ্রুত সমাধানের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর্ষদ এবং ভারত সরকারের গোচরে আনতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডোনার মন্ত্রকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও পর্ষদের অন্যান্য সদস্যদের কাছে তুলে ধরা হয়। এবং তিনি সেই বৈঠকে জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দায়িত্ব নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারকে উত্তর পূর্বাঞ্চলে দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন। উত্তর পূর্বাঞ্চলের শান্তি রক্ষা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গত আট বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দিশায় উন্নয়ন হচ্ছে। এবং সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াসের সদর্থক আকার নিচ্ছে।

বর্তমানে রাজ্যের প্রতি বছর ৫ লক্ষ দেশীয় ও বিদেশী পর্যটক ভ্রমণ করছে। ত্রিপুরা ট্যুরিজম পলিসি ২০২০-২৫ রাজ্যে চালু হয়েছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ পর্যটকদের আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো ও পরিষেবা প্রদান করার বলে জানান তিনি। ত্রিপুরা রাজ্যে এইমস্ স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ রাজ্য সরকারের ভীষণ ডকুমেন্ট এর একটি অন্যতম অ্যাজেন্ডা ছিল বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

টি বোর্ড, কফি বোর্ড, রাবার বোর্ড এবং স্পাইসেস বোর্ডের মত আগরতলার সদর দপ্তর করে রাজ্যের আগর-উড পশুনির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বিবেচনা করার জন্য দাবি জানানো হয়েছে। সম্প্রীতি চা-ই মার্কেট জায়গার মাধ্যমে টি বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার সহায়তায় বিক্রির প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি এর আবার উৎপাদকদের বিশেষ ইন্সেন্টিভ প্রদান এবং আধুনিক স্মোক হাউজ নির্মাণের জন্য রাবার বোর্ডকে অনুরোধ করা জন্য। বাংলাদেশের রাবার জাত সামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে বন্ধের বিভিন্ন বিধি নিষেধ খুলে বেড়া প্রয়োজন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি দিল্লির সফরকালে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ত্রিপুরার মধ্যে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোকপাত করেছিলেন। কারণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজ্যগুলির সীমানায় একটি প্রধান ল্যান্ড পোর্ট স্থাপনের বিষয়টি ভারতের দিক থেকে পুনরায় তুলে ধরা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ত্রিপুরাতে যুক্ত করার লক্ষ্যে ফেনী নদী উপর নির্মিত মৈত্রী সেতুকে কার্যকর ভাবে চালু করতে সমস্ত সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন।

সমস্ত পণ্য সামগ্রী পরিবহন করার অনুমতি প্রদানের বিষয়টি ভারত এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবি। তাই এ বিষয়টি বিবেচনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লাস করেন। আগরতলা নেতাজি সুভাষ আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জিমন্যাস্টিক হলটিকে ন্যাশনাল জিমন্যাস্টিকস একাডেমী হিসেবে ঘোষণার জন্য রাজ্য সরকারের প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনার জন্য উত্থাপিত করা হয়েছে।

অলিম্পিক মানের সুইমিং পুল সহ পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতার কারণে জাতীয় ক্ষেত্রে রাজ্য তেমন স্বীকৃতি অর্জন করতে পারছে না। জাতীয় মানের একটি সুইমিং পুল নির্মাণে অর্থ প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় তুলে ধরেন বলে জানান তিনি।

রাজ্য সরকার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং আগরতলার মধ্যে বিমান পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জন্য দ্রুত বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বৈঠকে আরো আলোচনা হয় জাতীয় ব্যাম্বু মিশনের প্রকল্পের অধীন রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকা রাজ্যের বাসের চাষের জন্য সহায়তা করা যেতে পারে। কুমারঘাট রেল স্টেশন পর্যন্ত ভ্যান পরিষেবা সম্প্রসারণ করা হলে আগরবাতির শলাকা পরিবহন ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে আরো বলেন জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়নের জন্য ১৩০০ কোটি টাকা একটারন্যাল এইডেড প্রোজেক্টের একটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে। তাই এই বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য দাবি জানানো হয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদ উত্তর পূর্বাঞ্চলের নীতি আয়োগ হিসেবে একটি সমাধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। তিনি উত্তর পূর্বাঞ্চলে পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানান এবং এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উন্নয়নের গতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাছে পদক্ষেপের কথা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সাহা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নেশা নিয়ে সরকার কোনো আপোষ করবে না। নেশা বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য