Sunday, February 16, 2025
বাড়িরাজ্যআন্তর্জাতিক সীমান্তে নৃশংসভাবে খুন এক যুবক

আন্তর্জাতিক সীমান্তে নৃশংসভাবে খুন এক যুবক

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ অক্টোবর : পাচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় অপরাধের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছুদিন পর পর  আন্তর্জাতিক সীমান্তে পাচারকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। এই সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুদেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে অনেক সময় মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। যাতে করে দুদেশের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। পাচারকারীদের মধ্যে রহিমপুর ভারত বাংলা আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এমনই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

গত ৮সেপ্টেম্বর একমাস আগে রহিমপুর সীমান্তের ১৬৬ নং গেটের ২০৫৮ পিলার নাম্বারের পাশাপাশি সীমান্ত লাগুয়া নারায়ণপুর জামে মসজিদের সামনে গভীর রাতে পাচারকারীদের সংঘর্ষে বাংলাদেশের এক যুবককে প্রচন্ড মারধর করে সীমান্তে ফেলে দিয়ে যায়। পরে বাংলাদেশের যুবকের সীমান্ত এলাকায় মৃত্যু হয়।  বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যুর ঠিক এক মাস পর সীমান্তে আবারো এক ভারতীয় যুবকের খুন হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। ঘটনা কলমচৌড়া থানাধীন  রহিমপুর সীমান্তের ১৬৮ নং গেটের পাশে। জানা যায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রহিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ৬ নং ওয়ার্ড দক্ষিণপাড়া এলাকার লিকত আলীর ছেলে খাইরুল আলম রহিমপুর বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে পূর্ব শত্রুতার জেরে কে বা কারা তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের ধারায় আঘাত করে। এতে  ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বলে অনুমান। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুভাগ হয়ে যায় তার মাথা। এই ঘটনাটি প্রথম প্রত্যক্ষ করেন রহিমপুর গ্রামের রাসেল মিয়া নামে এক যুবক। জানা যায় রাসেল মিয়া নামে বক্সনগর থেকে পূজা দেখে বাইকে করে বাড়ি যাওয়ার পথে বাইকের লাইটের আলোতে তার মৃতদেহটি পুরনো বর্ডার রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখতে পায়। এই ঘটনাটি দেখে রাসেল মিয়া ঘটনাস্থল থেকে কোনরকমে বাড়িতে গিয়ে চিৎকার করে পুরো এলাকায় বিষয়টি জানায়। এরপর এলাকার লোকজন মৃতদেহের কাছে গিয়ে ভীড় জমায়। পরে তার মা বাবাও চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ছেলের মৃতদেহ দেখতে পায়।

পরিবার ও এলাকার লোকজনদের চিৎকার শুনে সীমান্তে পাহারত বিএসএফ জোয়ানরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। সাথে সাথে খবর দেওয়া হয় কলমচৌড়া থানার পুলিশকে। ঘটনাস্থলে ছুটে যান কলমচৌড়া থানার ওসি বিষ্ণুপদ ভৌমিক সহ এস আই ডেভিড ডারলং পুলিশ ও টি এস আর বাহিনী। এই ঘটনার খবর পেয়ে আশাবাড়ি বিওপির কোম্পানি কমান্ডারও ছুটে যান। পুলিশ দীর্ঘক্ষণ  যুবকের হত্যার মূল বিষয় কি তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। খায়রুল আলমকে কি দিয়ে খুন করা হয় তাও অনুসন্ধান করে পুলিশ। পরে মৃতদেহটিকে আশাবাড়ি বিওপির জোয়ানদের গাড়ি করে বক্সনগর সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মর্গে নিয়ে আশা হয় । কলমচৌড়া থানার ওসি বিষ্ণুপদ ভৌমিক জানান খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে থানায় মামলা দায়ের করা হলেও কোন নাম সুনির্দিষ্ট ভাবে না থাকায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশের দাবি মৃত যুবক পাচার বানিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।

খাইরুল আলম ওরফে সবুজ  পেশায় গাড়ি চালক ছিলেন। এলাকারই ফরিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির ট্রিপার গাড়ি চালাতেন। মৃত যুবকের পিতা লিকত আলী অভিযোগ করে জানান তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় চক্রান্তকারী আবু তাহের এবং ফরিদ মিয়া বলে অভিযোগ জানান তিনি। তাদের গাড়ি চালাত ছেলে। সেই সুবাদে কাজের নাম করে ছেলেকে কষ্ট দিত দুইজন। পরিবারের ঝামেলায় লিপ্ত করে। ১১ বছর যাবত ফরিদ মিয়ার গাড়ি চালাত খাইরুল আলম।

গত কয়েক মাস যাবত তার বাড়িতে বিয়ে নিয়ে তোড়জোর চলছিল।  কমলপুর থানায় এনডিপিএস মামলায় জড়িত থাকায়  একমাস আগে তিনি এই মামলার জন্য জেল হেফাজত থেকে বাড়িতে আসেন। তবে কি কারণে তাকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এভাবে নৃসংশভাবে মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত করে হত্যা করা হল তা স্পষ্ট হয়নি।  পরিবারের আশঙ্কা তাকে পূর্বের কোন শত্রুতার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে তার সাথে ছিল খাবারের একটি প্যাকেট। এই ঘটনার জেরে রহিমপুর এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবার মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করার পর পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়। এই ঘটনা জেরে এলাকায় সুখের ছায়া নেমে আসে। সূত্রের খবর একদিকে পাচার বানিজ্য এবং অন্যদিকে অবৈধ সম্পর্কের জেরে এই হত্যার ঘটনা সংগঠিত হতে পারে। তবে পুলিশি তদন্তে প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে এটাই প্রত্যাশা গ্রামবাসী ও পরিবারের।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য