স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ২৩ অক্টোবর : এডিসি এলাকার বহির্ভূত জায়গায় বনধের আংশিক প্রভাবও পড়েনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাজার হাট, অফিস আদালত এবং যান চলা সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। মূলত আট দফা দাবিতে তিপরা সিভিল সোসাইটির ডাকে ২৪ ঘন্টার বনধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই বনধ মন থেকে গ্রহণ করলো না রাজ্যবাসী। সেটাই প্রমাণ করলো এদিনের নামমাত্র বনধ।
ত্রিপুরা রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, ত্রিপাক্ষিক চুক্তি কার্যকর করা সহ মোট আট দফা দাবিতে লেম্বুছড়ায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে তিপ্রাসা সিভিল সোসাইটির কর্মী সমর্থকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৫ টা থেকে শুরু হয় আগরতলা-খোয়াই ১০৮(বি) জাতীয় সড়কের লেম্বুছড়া এলাকায় পথ অবরোধ। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তারা। লেম্বুছড়া এলাকায় উপস্থিত ছিলেন এডিসি-র ই.এম রুনিয়েল দেববর্মা। তিনি সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিস্তারিত জানান।
এদিকে তেলিয়ামুড়া ও জিরানিয়া মহকুমায় বিভিন্ন এলাকায় চলে বনধ। প্রাক্তন বৈরী নেতা চিত্ত দেববর্মা জানান, অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হলেও ত্রিপুরা রাজ্যে কোন প্রকারের হেলদোল তাদের নজরে আসেনি। তাই তারা কোন রাজনৈতিক দল বুঝেন না, কোন রাজনৈতিক রঙ বোঝেন না, রাজ্যের ভূমিপুত্রদের প্রকৃত অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই তারা ময়দানে নেমেছেন। বিগত নির্বাচনের পূর্বে প্রয়াত বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতৃত্ব তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এন.সি দেববর্মা নেতৃত্বে এই চন্দ্র সাধুপাড়া এলাকায় একটানা ১৪ দিন পথ অবরোধের মতো ঘটনা হয়েছিল। তবে সেগুলি রাজনৈতিক সেন্টিমেন্ট এবং রাজনৈতিক গেইম হতে পারে বলে চিত্ত দেববর্মার অনুমান।
অন্যদিকে জীরানিয়া মহকুমা শাসক অনিমেষ ধর জানিয়েছেন,, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে এবং নির্বিঘ্নে এই পথ অবরোধ চলছে। উনার মহকুমা এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রকারের আপত্তিকর ঘটনার খবর নেই।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিভিল সোসাইটি ও তিপ্রা মথা দলের কর্মী সমর্থকরা ঋষ্যমুখ বিধান সভার রতনপুর এলাকায় রতনপুর থেকে বিলোনিয়া যাতায়াতের পথ অবরোধে বসে। অবরোধের জেরে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে পরে। সিভিল সোসাইটির এক কর্মী জানান রাজ্য সরকার তাদের দাবি মানতে না। তাই তিপ্রাসাদের মৌলিক অধিকারের জন্য আজকের এই আন্দোলন। উনারা জানান বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ অনুপ্রবেশ হচ্ছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে পুনরায় বাংলাদেশে প্রেরন করতে হবে জানান সিভিল সোসাইটির কর্মী সমর্থকরা।
তিপ্রা সিভিল সোসাইটি আহুত রাজ্যব্যাপী বনধ ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বনধ সমর্থকরা পিকেটিং করছে। শেষ সংবাদ পর্যন্ত এই বনধ ঘিরে তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই এই বনধ বর্তমান সময়ে ব্যাপক চর্চার কেন্দ্র বিন্দুতে।
এদিকে ত্রিপুরা সিভিল সোসাইটির ডাকা ২৪ ঘন্টা ত্রিপুরা বনধের সমর্থনে উত্তর জেলার বাগবাসায় আসাম – আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় সিভিল সোসাইটির কর্মীরা। বনধের ফলে জাতীয় সড়কের দুপাশে দীর্ঘ লাইন লেগে থাকে দূরপাল্লার গাড়ির। বনধের কারণে যাতে করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য এলাকায় রয়েছে বিশাল পুলিশ, টিএসআর বাহিনী।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে দক্ষিণ ত্রিপুরার শাকবাড়ি ও শাঁচিরাম বাড়ি তিপ্রাৎমথা পাটির সিভিল সোসাইটির ডাকে বনধের প্রভাব দেখা দিয়েছে। শাঁচিরামবাড়ী ১৪ নাম্বার টিএসআর ক্যাম্পের সামনে আগরতলা – সাবরুম জাতীয় সড়ক অবরোধে বসে আন্দোলন কারিরা। একই সাথে আন্দোলন কারিরা জুলাইবাড়ী থেকে বিলোনিয়া যাওয়ার রাস্তায় রতনপুর বাজারে পথ অবরোধে বসে। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আন্দোলন প্রদর্শন করেন।
আন্দোলন কারীরা বলেন রাজ্য সরকার যে চুক্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে জোট করেছিলো। সেই গুলির মধ্যে কোনোটাই কার্যকর হয়নি। আন্দোলন কারীরা আরো বলেন আগামীতে তাদের দাবি যদি না মানা হয়, তাহলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে জোট আছে তা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান এবং বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হবে জানান।
অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবিতে তিপ্রা সিভিল সোসাইটি ডাকা ২৪ ঘন্টার বনধের সর্মথনে খোয়াই আংশিক প্রভাব পড়েছে। এদিন সকাল থেকেই খোয়াই মহকুমা দুই স্থানে বেলফাং ও বাছাইবাড়ি বনধকে সফল করতে সর্মথনকারীরা পিকেটিং শুরু করেছেন। সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে পিকেটিং। আগরতলা-খোয়াই ১০৮(বি) জাতীয় সড়কের বেলফাং এলাকায় এবং খোয়াই কমলপুর ২০৮(বি) জাতীয় সড়ক বাছাই বাড়িত অবরোধ করে।
এদিকে উত্তর ত্রিপুরা জেলার বাগবাসা ছাড়া আর কোথাও বনধের প্রভাব পড়েনি। ধর্মনগর, চোরাইবাড়ি সর্বত্রই ছিল স্বাভাবিক। দোকানপাট, রাজারহাট এবং যান চলাচল থেকে শুরু করে অফিস আদালত সর্বত্র খোলা ছিল।

