স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ৯ অক্টোবর :রাজ্য সরকারের অনুদান দিয়ে কিছুতেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ব্যয় ভার। তাই এ বছর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হল মোটা অংকের ফি। ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের কষ্ট হলেও কিছু করার নেই বোর্ড কর্তৃপক্ষের। বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানিয়েছেন ত্রিপুরার মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ড. ধনঞ্জয় গণচৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে দ্রব্যমূল্য, গাড়ি ভাড়া, পরীক্ষা সেন্টারে ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গোটা দেশের প্রত্যেক বোর্ড কর্তৃপক্ষ সবকিছু সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে।
সে অনুযায়ী ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য ফি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের গভর্নর বডির। এই গভর্নর বডির মধ্যে রয়েছে রাজ্য তিনজন বিধায়ক সহ বিভিন্ন শিক্ষাবিদ সহ শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তারাও এই বিষয়ে যুক্তিকথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি স্বীকার করে বলেন ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু কোন উপায় নেই বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে। সমাজের মেরুদন্ড শিক্ষক শিক্ষিকারা বিগত বছর ছাত্র-ছাত্রীদের খাতা দেখে এতটাই কাহিনী হয়ে গিয়েছিলেন তারা পরবর্তী সময়ে ভোট কর্তৃপক্ষকে দাবি করেছেন যে প্রতি খাতা দেখার ক্ষেত্রে যে ১০-১২ টাকা তাদের দেওয়া হয় তার দ্বিগুণ করে দেওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী বৃদ্ধি করা হলো ছাত্র-ছাত্রীদের ফি। তিনি বলেন ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পর্ষদ অধীন বিদ্যালয় গুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি ১০০ টাকা নেয়, সি বি এস ই -র অধীন বিদ্যালয়ে গুলি নেয় ১৫০০ টাকা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি হিসেবে ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পর্ষদ গ্রহন করে ১৫০ টাকা। সি বি এস সি বিদ্যালয়গুলি নেয় ২১০০ টাকা।
তিনি আরো বলেন, রিভিউ ফি ছিল বিগত দিনে ১৩০ টাকা এবং নিজে উপস্থিত থেকে খাতা দেখার জন্য ছিল আড়াইশো টাকা। বর্তমানে সেটা বৃদ্ধি করে রিভিউ ফি করা হয়েছে ২০০ টাকা এবং নিজে উপস্থিত থেকে খাতা দেখার জন্য রাখা হয়েছে ৫০০ টাকা। রেজিস্ট্রেশন বিগত দিনে মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ছিল ১০০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ছিল ২০০ টাকা। এখন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের দিতে হবে ২০০ টাকা করে। এক্সামিনেশন ফি বিগত দিনে ছিল ১২০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিকের ছিল ১৫০ টাকা। যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে মাধ্যমিকে ৩০০ টাকা এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৪০০ টাকা। অপরদিকে প্র্যাকটিক্যাল ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগের ছাত্র-ছাত্রীদের যত বেশি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে তার জন্য ফি দিতে হতো ৭৫ টাকা। যা এখন বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য ৭৫ টাকা করে। বোর্ডের জন্য আগে সেন্টার ফি ছিল মাত্র ৫০ টাকা। এখন সেটা বৃদ্ধি করে দিতে হয় ৮০ টাকা করে। আর বাইরের সেন্টারগুলি জন্য দিতে হয় ১০০ টাকা করে। তিনি আরো জানিয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যে ফি লাগু করা হচ্ছে সেটা গভার্নিং বোর্ডের অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে। আয়োজিত এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সচিব ড. দুলাল দে। তবে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের পক্ষ থেকে ফি বৃদ্ধি করায় রাজ্যে বিপাকে পড়বে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় বসতে গিয়ে এত টাকা ফি দিতে গিয়ে বেকারায় পড়বে। দিন দিন বিদ্যালয় গুলি থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ হারাচ্ছে। বিভিন্ন সার্ভে রিপোর্টে উঠে আসছে এমনই তথ্য। গত কয়েক মাসে এমনও খবর প্রকাশিত হয়েছে বিদ্যারজ্যোতি প্রকল্পের অধীন বিদ্যালয়ের ভর্তি ফি দিতে না পারায় পড়াশোনা ছেড়ে ঘরে বসে গেছে বহু ছাত্র-ছাত্রীরা। সে জায়গায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফি বৃদ্ধি করে মৌলিক অধিকারের উপর আঘাত নামিয়ে আনতে চলেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অধীন বিদ্যালয়গুলির মধ্যে পাঠরত থাকা একটা বড় অংশের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা গরীব মধ্যবিত্ত পরিবারের। ছেলে মেয়েকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বসাতে অনেক বড় সংগ্রাম করতে হয়। তাদের জন্য ফি বৃদ্ধি বড় সমস্যা ছাড়া আর কিছু নয়। রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে শুভেচ্ছা বার্তা জানাতে মন্ত্রী, বিধায়ক, কর্পোরেটর থেকে শুরু করে মন্ডল নেতারা কোটি কোটি টাকা ফ্ল্যাক্সের জন্য ব্যয় করছে। আর ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় বসতে গেলে ফি বৃদ্ধি করার মত এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে হলো বোর্ড কর্তৃপক্ষকে? সীলমোহর দিল গভার্নিং বডি। আশ্চর্য বিকাশ ত্রিপুরা।

