স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ৫ অক্টোবর : নেতা মন্ত্রীদের মুখে মুখে আধুনিক পরিষেবার জন্য উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে জিবি হাসপাতাল। কিন্তু প্রতিদিন কলঙ্ক রচনা করে রাজ্যবাসী ভরসা হারাচ্ছে প্রধান রেফারেল হাসপাতাল। এবার মাত্র সাড়ে তিন বছরের একটি শিশু কন্যা জিবি হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের গাফিলতিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। এই ঘটনা রবিবার জিবি হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের মধ্যে।
অভিযোগ, আগরতলা ভলকান ক্লাব এলাকার বাসিন্দা রাজন সাহার মেয়ে গুনগুন সাহার মাথায় একটি টিউমার ধরা পড়ে গত পাঁচ মাস আগে। যথারীতি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভর্তি করানো হয় জিবি হাসপাতালে। প্রথম তিন মাস সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও তারপর ধীরে ধীরে ছোট্ট গুনগুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তখন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবব্রত সাহা এবং ডাঃ রেড্ডি শিশুর অভিভাবকদের জানিয়ে দেন অস্ত্রোপচার করতে হবে গুনগুনের। বহিঃ রাজ্য থেকে মেশিন এবং পাইপ ক্রয় করে আনতে হবে বলে জানায় পরিবারের লোকজনদের। তখন শিশুটির মা ব্যাঙ্গালোর থেকে পাইপ এনে দেন চিকিৎসকদের। কিন্তু তারপরেও শিশুটির অস্ত্রোপচার সময় মতো করা হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে শিশুটির শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ভেন্টিলেশনে নিয়ে যায় শিশুটিকে।
তারপর শুরু হয় শিশুটির তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করার তৎপরতা। রবিবার সকালে শিশুটিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশুটি। তারপরই উত্তেজিত হয়ে উঠে শিশুটির পরিবারের লোকজন। শিশুটির মা জানান বহুবার কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বলা হয়েছিল যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্ত্রোপচার করার জন্য। কিন্তু চিকিৎসক বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। বরং দুর্গাপূজার আগে চিকিৎসক দেবব্রত সাহা গুনগুনের মাকে ডেকে বলেন এখন দুর্গাপূজা। চিকিৎসকরা ব্যস্ত থাকবেন। শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু মেয়ের অবস্থা আশঙ্কা জনক দেখে বাড়ি আনতে চাননি গুনগুনের মা। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক গুনগুনের মাকে জানিয়ে দেয়, শিশুটিকে রাজ্যের বাইরে রেফার করে দেওয়া হবে। এ ধরনের খামখেয়ালি পড়ার কারণে তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন গুনগুনের মা। অভিযুক্ত চিকিৎসক দেবব্রত সাহা এবং ডাঃ রেড্ডির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আরো জানান তাদের অবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে চাকরি থেকে। তাদের জন্য গুনগুনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হাসপাতালে থাকলে আগামী দিন এমন আরো অনেক গুনগুন অকালে হারিয়ে যাবে। বিনা চিকিৎসায় তাদের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করলো পরিবারের লোকজন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও হাসপাতাল চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের লোকজন। মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে সকলে।

