স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৮ অক্টোবর: বড় ভাইয়ের নির্ভরতায় ক্রিকেটারদের কাঁধে হাত রাখা। অভিভাবকের মতো আদর-শাসনে ক্রিকেটারদের যত্নে রাখা। পারস্পরিক সম্পর্ক, ভরসা, তথ্যগত অন্তর্দৃষ্টি, মাঠের ভেতরে-বাইরে উপভোগ করা এবং কিছুটা ভাগ্য। সানাৎ জায়াসুরিয়ার কোচিংয়ের সারসংক্ষেপ বলা যায় এসবকেই। অন্তবর্তীকালীন দায়িত্বে এভাবেই তিনি সফল হয়েছেন। পূর্ণকালীন দায়িত্বেও এসবকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে চান শ্রীলঙ্কার নতুন কোচ।শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট পরার্শকের দায়িত্ব থেকে গত জুলাইয়ে ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন জায়াসুরিয়া। সে দায়িত্বে তিনি দারুণভাবে সফল হওয়ার পর সোমবার পূর্ণকালীন কোচ হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। দেশের মাঠে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার।
জায়াসুরিয়া ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে ২৭ বছরের মধ্যে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজ হারলেও ওভালে দারুণ জয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পেয়েছে এবং নিউ জিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে টেস্ট সিরিজে। সেটির পুরস্কার তিনি পেয়েছেন লম্বা সময় দায়িত্ব পেয়ে।নিয়মিত প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে জায়াসুরিয়া বলেন, পারস্পরিক সম্পর্কে জোর দিয়েই পারফরম্যান্সের ভিত গড়েছেন তিনি।
“আমি সবসময় বলে আসছি, পুরো ব্যাপারটাই হলো আত্মবিশ্বাস ও আস্থা। দলকে ঘিরে এই আবহ আমি তৈরি করতে পেরেছি এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছুটা ভাগ্যের ব্যাপারও ছিল। অনেক অনেক কাজ করার পরও কখনও কখনও ভাগ্যের ছোঁয়াও সামান্য লাগে।”“ক্রিকেটারদের কথাও বলতে হবে, ভালো করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল ওরা। ওরা জানে যে, গত বছর দুয়েক কত কিছুর মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে। সত্যিই হতাশ ছিল ওরা। শ্রীলঙ্কার মানুষদের আমি অনুরোধ করেছি ক্রিকেটারদের পাশে থাকতে। ওরা খুব ভালো ক্রিকেটার ও দারুণ প্রতিভাবান। আমি ওদেরকে স্রেফ বিশ্বাস জুগিয়েছি এবং পাশে থেকেছি। আমার সঙ্গে ওরা যে কোনো কথা বলতে পারে, যা কিছু ইচ্ছা আলোচনা করতে পারে।”
ভারপ্রাপ্ত কোচদের বাদ দিলে, এখনও পর্যন্ত ১৪ জন কোচ দায়িত্ব নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের। তাদের মধ্যে শ্রীলঙ্কান কোচ জায়াসুরিয়াকে নিয়ে স্রেফ চারজন। সবশেষ কোচ ছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিস সিলভারউড।স্থানীয় কোচ হিসেবে ক্রিকেটারদের আস্থা অর্জন করা, তাদের কাছাকাছি যেতে পারাটা সহজ। ভাষার দূরত্ব, সংস্কৃতির ব্যবধান, সম্পর্কের অস্বস্তি এখানে থাকে না। জায়াসুরিয়াও সেসব তুলে ধরলেন। পাশাপাশি, স্থানীয় কোচ হিসেবে বাড়তি দায়িত্বও অনুভব করছেন ৫৫ বছর বয়সী সাবেক এই অধিনায়ক।
“প্রথমত, আমার জন্য ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা সহজ। যে কোনো বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে এটা এবং সমাধান করা তুলনামূলক সহজ। আমার ওপর এই বিশ্বাস ওদের আছে। ওরা এটাও জানে যে, কোন ধরনের ক্রিকেট আমি খেলেছি। দলে তাই কতটা মান বয়ে আনছি, এটাও ওদের জানা।”“তবে স্থানীয় কোচ হিসেবে আমার বাড়তি দায়িত্বও আছে। দলে আমার প্রিয় বলে কেউ নেই। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের জন্য সম্ভাব্য সেরা ফল আনার মতো দলকেই খেলাব আমি। খুব ভালো করেই জানি, আমার পর কোনো স্থানীয় কোচের দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। সেদিক থেকেও আমার ওপর বড় ভার আছে।”
কোচ হওয়ার আগে দুই দফায় শ্রীলঙ্কার প্রধান নির্বাচক ছিলেন জায়াসুরিয়া। সেই সময় তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ছিল, বিতর্কও হয়েছে প্রচুর। আইসিসি দুর্নীতি দমন আইনের ধারা ভেঙে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছেন।প্রধান নির্বাচক হিসেবে তাকে নিয়ে একটা বড় অভিযোগের জায়গা ছিল, ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার সম্পর্ক অতি হৃদ্যতাপূর্ণ, যেটা তার কাজের পথে অন্তরায়। কিন্তু কোচ হিসেবে সেটিই এখন তার মূল শক্তি।জায়াসুরিয়ার কোচিংয়ের আরেকটি বড় মন্ত্র, উপভোগ করা। মাঠের ভেতরে-বাইরে ক্রিকেটারদের সময় উপভোগ্য করে তুলতে চান তিনি।
“অনুশীলনে আমরা বিভিন্ন রকম কিছু করার চেষ্টা করি। ব্যাপারটাকে উপভোগ করে তুলতে চাই আমরা। অনুশীলন শুরুর আগেও কিছু ছোট পরিবর্তন আমরা এনেছি, যা দলীয় আবহকে দারুণ করে তুলেছে। এরকম ছোট ছোট কিছু কাজ করেছি, যা বড় ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।”“মৌলিক ব্যাপারগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এসব তারা উপভোগ করে এবং এসবে মনোযোগ দেয়। তবে সবসময়ই বলে আসছি, ‘খেলায় ও অনুশীলনে সর্বোচ্চ মনোযোগ দাও। শেষ হলে পুরোপুরি এটার বাইরে চলে যাও।’ যখন ওরা খেলছে না বা অনুশীলন করছে না, ম্যাচ যখন শেষ, তখন ওদেরকে চাপে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই আমার।”নিয়মিত কোচ হিসেবে জায়াসুরিয়ার পথচলা শুরু হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজ দিয়ে। ডাম্বুলায় তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু আগামী রোববার। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ পাল্লেকেলেতে।