Thursday, September 19, 2024
বাড়িখেলাছক্কা ১১টি, চার নেই একটিও, হেটমায়ারের অদ্ভুত বিশ্বরেকর্ড

ছক্কা ১১টি, চার নেই একটিও, হেটমায়ারের অদ্ভুত বিশ্বরেকর্ড

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৫ সেপ্টেম্বর : “চেষ্টা করছিলাম চার মারতে, কিন্তু কাজ হলো না…”, ইনিংস শেষে টিভি সাক্ষাৎকারে বেশ মজা করে বলছিলেন শিমরন হেটমায়ার। চার মারতে না পারলে এমনিতে আলোচনার কিছু নেই। কিন্তু তার ইনিংসে সবচেয়ে আলোচিত ব্যাপার এটিই। হেটমায়ার যে ছক্কা মেরেছেন ১১টি!হ্যাঁ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) ম্যাচে বিধ্বংসী ইনিংসের পথে ১১টি ছক্কা মারলেও কোনো চার মারেননি হেটমায়ার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যক্তিগত ইনিংসে কোনো চার ছাড়া সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এটিই।

সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সিপিএলে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোরে শেষ হওয়া ম্যাচে ৩৯ বলে ৯১ রানের ইনিংসের পথে এই কান্ড ঘটান হেটমায়ার।২০ ওভারের ক্রিকেটে ব্যক্তিগত ইনিংসে ১১ বা এর বেশি ছক্কার নজির আছে ৭৭টি। হেটমায়ারই প্রথম, যার ইনিংসে একবারও মাটি কামড়ে বল যায়নি সীমানায়।এতদিন এই রেকর্ডে সবার ওপরে ছিলেন রিকি ওয়েসেলস। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টের ম্যাচে উস্টারশায়ারের বিপক্ষে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে ১৮ বলে ৫৫ রানের ইনিংসে ৫৪ রানই করেছিলেন তিান ছক্কা থেকে। ৯টি ছক্কা আর একটি সিঙ্গেলে সেদিন ইনিংসটি গড়েছিলেন তিনি।

১১টি বা এর বেশি ছক্কার ইনিংসে সবচেয়ে কম চার মারার নজির আছে তিনটি। ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে নর্থ ওয়েস্টের হয়ে ৪৫ বলে ১০১ রানের ইনিংসে ১২ ছক্কা ও ১ চার মারেন নিকি ফন ডেন বার্গ।

২০১৮ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ৩৬ বলে ৮৮ রানের ইনিংসে ১১ ছক্কার সঙ্গে ১টি চার মারেন আন্দ্রে রাসেল। এরপর সপ্তাহখানেক পর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে ৬৩ বলে ১০৪ রানের ইনিংসে ১১ ছক্কা ও ১টি চার মারেন ক্রিস গেইল।এবার হেটমায়ার গড়লেন অনন্য কীর্তি। রান জোয়ারের এই ম্যাচে তার দল গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স ৪০ রানে হারাল সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসকে।টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা গায়ানা ২০ ওভারে তোলে ২৬৬ রান। রান প্রবাহের শুরুটা হয় রাহমানউল্লাহ গুরবাজের ব্যাট থেকে। ছয় ছক্কায় ৩৭ বলে ৬৯ রান করেন আফগান কিপার-ব্যাটসম্যান।

চারে নামা হেটমায়ার ক্রিজে যান পাওয়ার প্লে শেষে। ওই ওভারেই ছক্কা দিয়ে শুরু করেন ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। এরপর এটিই হয়ে যায় সবচেয়ে নিয়মিত দৃশ্য। আনরিক নরকিয়ার গতি হোক বা ভিরাসামি পেরমলের বাঁহাতি স্পিন, মোহাম্মদ মোহসিনের লেগ ব্রেক বা ওডিন স্মিথের বাউন্স, কিছুই পাত্তা পায়নি হেটমায়ারের ব্যাটের তাণ্ডবে।

মজার ব্যাপার হলো, এক ওভার বাকি থাকতে তিনি আউট হয়ে যান চার মারার চেষ্টাতেই! ওডিন স্মিথকে টানা দুটি ছক্কা মারার পর একটিফুল লেংথ ডেলিভারিতে তিনি চেষ্টা করেন বৃত্তের ভেতরে থাকা মিড অফ ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে আলতো করে বল সীমানায় পাঠাতে। কিন্তু একটু লাফিয়ে বল তালুবন্দি করেন ফিল্ডার মিকাইল লুই।আউট হয়ে হেটমায়ারের শরীরী ভাষায় হতাশা ফুটে ওঠে স্পষ্ট। সেটা হতে পারে সেঞ্চুরি না পাওয়ায় কিংবা একটি চার মারতে না পারায়!শেষ দিকে কিমো পল করেন ১৪ বলে ৩৮, রেমন রিফার ৫ বলে ১৪ প্রথম ১০ ওভারে ১০৪ রান তোলা গায়ানা শেষ ১০ ওভারে তোলে ১৬২ রান। শেষ ৪ ওভার থেকেই আসে ৭৮ রান।

পাহাড় সমান এই রানও তাড়া করার সম্ভাবনা জাগিয়ে ফেলেছিলেন স্থানীয় দল সেন্ট কিটস! পাওয়ার প্লেতে তারা তুলে ফেলে ৯৪ রান। ১০ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ১৩৯!তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞের নায়ক আন্দ্রে ফ্লেচার। ৯ ছক্কা ও ৪ চারে ৩৩ বলে ৮১ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।অফস্পিনার কেভিন সিনক্লেয়ারের ওক ওভারে চারটি ছক্কা, দুটি চার ও দুটি ‘নো’ বলসহ রান আসে মোট ৩৪। সিপিএলে সবচেয়ে খরুচে ওভারের রেকর্ড ছোঁয়া হয়ে যায় এতে। গত আসরে বারবাডোজ রয়্যালসের পেসার নাইম ইয়াংয়ের ওভারেও এসেছিল ৩৪ রান।

তিনে নেমে কাইল মেয়ার্স করেন ১৭ বলে ২৮, শেরফোন রাদারফোর্ড চারে নেমে ১২ বলে করেন ৩৪। কিন্তু সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি মিডল অর্ডার। সাতে নেমে মিকাইল লুই করেন ২১ বলে ৩১।২৬৭ রান তাড়া করতে প্রয়োজন ছিল আরও বেশি কিছু। সেটি পারেননি কেউ। ১৮ ওভারে ২২৬ রানে শেষ হয় সেন্ট কিটসের ইনিংস।গায়ানার অধিনায়ক ৪৫ বছর বয়সী লেগ স্পিনার ইমরান তাহির এবং বাঁহাতি স্পিনার গুডাকেশ মোটি নেন তিনটি করে উইকেট।

বোলারদের দুঃস্বপ্নে ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে মোট ছক্কা হয়েছে ৪২টি। এক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড স্পর্শ হয়েছে এতে। গত আইপিএলে কলকাতা নাইটরাইডার্সের ২৬১ রান তাড়ায় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের জয়ের ম্যাচেও মোট ছক্কা হয়েছিল ৪২টি।এই ম্যাচ শেষে নিজ দলের বোলারদের সরাসরিই কাঠগড়ায় দাঁড় করান সেন্ট কিটস অধিনায়ক আন্দ্রে ফ্লেচার।“এটা কঠিন, খুবই কঠিন। নিজেদের মাঠে খেলা, এখানকার কন্ডিশন ও বাতাসের ব্যাপারটি সবার জানা। তার পরও এই ধরনের বোলিং অগ্রহণযোগ্য। মনে হচ্ছিল যেন, স্কুল ক্রিকেট হচ্ছে! বোলারদের ওপর খুব রূঢ় মনে হতে পারে আমাকে, তবে পরিকল্পনার বাস্তবায়নের পথ বের করতে হবে আমাদের।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য