স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩ সেপ্টেম্বর: প্রথম ফুটবলার হিসেবে ছয়টি ইউরোতে অংশ নেওয়ার ইতিহাস গড়ে এবারের ইউরো শুরু করেছিলেন রোনালদো। কিন্তু পরের গল্পটুকু হতাশার। একটি গোলও তিনি করতে পারেননি। তার দল পর্তুগাল প্রথম দুই ম্যাচে জিতলেও গ্রুপের শেষ ম্যাচে হেরে যায়। শেষ ষোলোর লড়াই গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে জিততে পারে তারা স্লোভেনিয়ার সঙ্গে। কোয়ার্টার-ফাইনালে আরেকটি গোল ম্যাচের পর ফ্রান্সের কাছে টাইব্রেকারে হেরে তারা বিদায় নেয়।
গোটা টুর্নামেন্টে রোনালদো তেমন কোনো প্রভাব রাখতে পারেননি। পারফরম্যান্সে ছিল না ধার। তাকে নিয়ে সমালোচনাও ছিল তীব্র। পর্তুগাল দলে তার শেষও দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। তার অবসরের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি।সেই রোনালদো জাতীয় দলের হয়ে নতুন অভিযান শুরু করতে যাচ্ছেন উয়েফা নেশন্স লিগে। বৃহস্পতিবার ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করবেন তারা, রোববার লড়াই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।
পর্তুগালের অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দিয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে রোনালদো বললেন, নতুন প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামছেন তিনি দেশের হয়ে।“যা কিছু করার, সংবাদমাধ্যমই করেছে। আমার ভাবনায় কখনোই আসেনি যে, পর্তুগালের হয়ে সময় শেষ আমার। বরং উল্টোটা, আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি খেলা চালিয়ে যেতে।”“প্রেরণা হলো, এখন জাতীয় দলে এসে নেশন্স লিগ জয়ের চেষ্টা করা। এর মধ্যেই আমরা এটি একবার জিতেছি এবং আবারও জিততে চাই। একই কথা হয়তো বারবার বলছি, কিন্তু সেটিই সত্যি যে, দীর্ঘমেয়াদে কিছু ভাবছি না আমি, নিকট ভবিষ্যৎ ভেবেই এগোচ্ছি।”

আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পর্তুগালের অধিনায়ক তিনিই। তবে পারফরম্যান্সের যা অবস্থা, তাতে সেরা একাদশে জায়গা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে স্বাভাবিকভাবেই। পর্তুগালের কোচ রবের্তো মার্তিনেস অবশ্য বরাবরই রোনালদোর পাশে থেকে এবং কদিন আগেও বলেছেন, অভিজ্ঞ এই তারকা এখনও তার দলের সম্পদ।
রোনালদো নিজেও সেভাবেই দেখেন নিজেকে। ৩৯ বছর বয়সী তারকা বললেন, সময় শেষ বুঝতে পারলে নিজে থেকেই বিদায় বলে দেবেন।“ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত আমার মানসিকতা সবসময়ই এরকমই থাকবে যে, শুরুর একাদশে জায়গা পাব। এই মুহূর্তে আমার যা মনে হচ্ছে এবং কোচের কথায়ও সেটির প্রতিফলন পড়েছে, জাতীয় দলের জন্য আমি সম্পদ হিসেবেই আছি। যদি এটির ব্যতিক্রম হয়, সবার আগে আমিই মেনে নেব।”“যখন আমি আর জাতীয় দলের জন্য সম্পদ থাকব না, সবার আগে নিজে থেকেই চলে যাওয়ার ঘোষণা দেব। তবে নিজের কাছে একদম পরিষ্কার হয়ে তবেই যাব, আমি জানি আমি কে, আমি কী করতে পারি, আমি কী করছি এবং কী করতে থাকব।”
পারফরম্যান্সের পাশাপাশি এখন নিয়মিত প্রশ্ন উঠছে রোনালদোর মানসিকতা নিয়েও। গত জুনে সৌদি কিংস কাপের ফাইনালে আল নাস্র হেরে যাওয়ার পর কাঁদতে দেখা গেছে তাকে। ইউরোতে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্তি সময়ে পেনাল্টিতে গোল করতে না পেরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন মাঠেই। সেই ঘটনা নিয়ে তুমুল হইচই হয়েছিল তখন। আলোচনা-সমালোচনা চলছে এখনও।তবে সমালোচনাগুলোকেও প্রেরণা হিসেবেই নিচ্ছেন রোনালদো। সমালোচনাকারীদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার।“সমালোচনা দারুণ ব্যাপার, কারণ এটা না থাকলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। সবসময়ই এমনটি ছিল। এখন কি তা বদলাবে? মোটেও নয়। কাজেই নিজের পথ অনুসরণ করেই যাব, যতটা সম্ভব পেশাদার থাকব এবং স্রেফ গোল, অ্যাসিস্ট, শৃঙ্খলা ও উদাহরণ হয়েই হয়, বরং আমার পেশাদারিত্ব দিয়ে যতটা সম্ভব সহায়তা করে যাব। কারণ, ফুটবল মানে কেবল ভালো খেলা কিংবা গোল করাই নয়, আরও বেশি কিছু।”
“যারা বাইরে থেকে নিজেদের মতামত দিচ্ছে, তারা কখনোই ড্রেসিং রুমে থাকেনি। এসব দেখে আমার প্রায়ই হাসি পায়, কারণ আমি ফর্মুলা ওয়ান নিয়ে কথা বললে যেমন হবে, এই ব্যাপারটিও তেমন। আমি ফর্মুলা ওয়ান নিয়ে কথা বললে ব্যাপারটি কেমন হবে, যখন আমি টায়ার, রিম, গাড়ির ওজন, এসব নিয়ে কিছুই জানি না…! এসব তাই স্বাভাবিক এবং এজন্যই সমালোচনা ভালো ব্যাপার এবং এটি খেলাটিরই অংশ। কোনো সমস্যা নেই।”আর একটি গোল করতে পারলেই ক্যারিয়ারের ৯০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি। কয়েকদিন আগে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সতীর্থ রিও ফার্ডিনান্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রোনালদো বলেছেন, তার লক্ষ্য ১ হাজার গোল করা।