Friday, November 22, 2024
বাড়িখেলাছলছল চোখে ১৭ বছরের অধ্যায়ের ইতি টানার ঘোষণা দিলেন সুয়ারেস

ছলছল চোখে ১৭ বছরের অধ্যায়ের ইতি টানার ঘোষণা দিলেন সুয়ারেস

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩ সেপ্টেম্বর: খুব অপ্রত্যাশিত কিছু অবশ্য নয়। বরং যে কোনো সময় এরকম সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। সেই ঘোষণা সোমবার জানিয়েই দিলেন ৩৭ বছর বয়সী তারকা। কোপা আমেরিকার বাছাইয়ে শুক্রবার প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচেই দেশের জার্সিতে শেষবার মাঠে নামবেন তিনি।দেশের জার্সি তুলে রাখার হাহাকার তার আছে। তবে বিদায়বেলায় বিদায়বেলায় মানসিক প্রশান্তিও সঙ্গী সুয়ারেসের।

“অবসরের সটিক সময় কোনটি, এটি জেনে বিদায় নেওয়ার চেয়ে গর্বের কিছু আর নেই এবং সৌভাগ্যবশত, আমার বিশ্বাস, জাতীয় দল থেকে এমন সময়ে অবসর নিচ্ছি, যখন আমি জানি যে সরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। ৩৭ বছর বয়স হয়ে গেছে, পরের বিশ্বকাপ খেলা কঠিন আমার। এটা ভেবে স্বস্তি পাচ্ছি যে, চোটের কারণে বা পারফরম্যান্সের কারণে আমাকে অবসর নিতে হচ্ছে না।”

“ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এটা শান্তির অনুভূতি যে, নিজে থেকেই সরে দাঁড়াতে প্রস্তুত। সিদ্ধান্তটি অবশ্যই কঠিন। বিদায় বলা কখনোই সহজ নয়। তবে এই মানসিক শান্তি আমার সঙ্গী যে, শেষ ম্যাচ পর্যন্ত নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি এবং ভেতরের বারুদ আস্তে আস্তে মিইয়ে আসেনি। এজন্যই আমার মনে হয়েছে, এখনই সময়।”২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল সুয়ারেসের উরুগুয়ে অধ্যায়। প্রায় দেড় যুগের পথচলায় দেশের হয়ে ১৪২ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। উরুগুয়ের সর্বোচ্চ ৬৯ গোলের রেকর্ড তার।

অভিষেকের পর জাতীয় দলে নিয়মিত হতে খুব একটা সময় তার লাগেনি। ২০১০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের সেমি-ফাইনালে ওঠায় এই ফরোয়ার্ডের ছিল বড় অবদান। টুর্নামেন্টে তিনটি গোল করেছিলেন তিনি। তবে এর চেয়েও বেশি সাড়া জাগিয়েছিলেন ঘানার বিপক্ষে গোল বাঁচিয়ে। কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচের শেষ সময়ে গোল লাইন থেকে হাত দিয়ে বল ফেরান তিনি। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সেই হ্যান্ডবল থেকে পাওয়া পেনাল্টি কাজে লাগাতে পারেনি ঘানা। পরে টাইব্রেকারে জিতে শেষ চারে পা রাখে উরুগুয়ে।

সেই কাণ্ড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেক হলেও সুয়ারেস নিজে সবসময়ই বলে এসেছেন, দেশের জন্য তিনি সঠিক কাজটিই করেছেন। এখনও তিনি পেছন ফিরে তাকিয়ে বলেন, “সেটি ছিল টুর্নামেন্টের সেরা সেভ।”গৌরবময় ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে চারটি বিশ্বকাপ ও পাঁচটি কোপা আমেরিকা খেলেছেন সুয়ারেস। ২০১০ বিশ্বকাপের সাফল্যের পথ ধরে ২০১১ কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। চার গোল করে ও দুটি গোলে সহায়তা করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পান সুয়ারেস।লিভারপুল, বার্সেলোনা, আতলেতিকো মাদ্রিদের মতো দলের হয়ে ক্লাব ফুটবল মাতানো সুয়ারেসের কাছে ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন ২০১১ কোপা আমেরিকা জয়।

“ক্যারিয়ারে অনেক শিরোপা জিততে পেরে আমি সৌভাগ্যবান। তবে কোপা আমেরিকার শিরোপার সঙ্গে দুনিয়ার কিছু্ বদল করতে রাজি নই। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমার ক্যারিয়ারের সুন্দরতম মুহূর্ত ছিল ২০১১ কোপা আমেরিকার ট্রফি জয় করা। অনেক কিছুই জিতেছি, কিন্তু এটা কোনো কিছুর বিনিময়েই বদল করব না।”উরুগুয়ের হয়ে তার সবশেষ দারুণ স্মৃতিও কোপা আমেরিকায়। এবারের আসরে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়ে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান তিনি। পরে টাইব্রেকারেও বল জালে পাঠান। ৪-৩ গোলে জিতে তৃতীয় হয় উরুগুয়ে।

সেই পারফরম্যান্সকে সুয়ারেস বললেন তার সন্তানদের জন্য উপহার।“আমার স্বপ্ন ছিল, আমার সন্তানেরা যেন জাতীয় দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিততে দখে আমাকে। ওই শেষ গোলটি আমার সন্তানদের জন্য দারুণ ছিল। যদিও ট্রফি জিততে পারিনি, তবু কিছু একটা পেয়েছে ওরা। মানুষকে আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, জাতীয় দলের হয়ে এখনও অবদান রেখে যেতে পারি এবং কোপা আমেরিকায় তা দেখিয়েছি।”

কোপা আমেরিকা দিয়েই বিদায় নেওয়ার ভাবনা তার ছিল। তবে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে শুক্রবারের ম্যাচটি খেলার কারণ তিনি জানালেন।“কোপার পরই ভালোভাবে বিদায় বলতে পারতাম। কিন্তু সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমার দেশের সমর্থকদের সামনে আমার স্টেডিয়ামে বিদায় নিতে পারলেই ভালো। আমি চাই, আমার সন্তানরা যেন মুহূর্তটি হৃদয়ে লালন করতে পারে। নিজের দর্শকদের সামনে বিদায় নেওয়ার সুযোগ সবার আগে না।”ক্লাব ফুটবলে এখন ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন সুয়ারেস। আগেই জানিয়েছেন, তার শেষ ক্লাব হবে এটিই।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য