স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৯ আগস্ট: ক্যারিয়ারটা থমকে ছিল এক বছর ধরেই। সেটি এবার পাকাপাকিভাবেই থামিয়ে দিলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। মরা পিচেও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন যিনি, এক সময় গতি ও বাউন্সে যিনি ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়তেন, সেই ফাস্ট বোলারকে আর দেখা যাবে না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।এক যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিলেন গ্যাব্রিয়েল। সামাজিক মাধ্যমে বুধবার বিদায়ের এই ঘোষণা জানিয়ে দেন ৩৬ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার।
“গত ১২ বছরে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায়। প্রিয় এই খেলাটির সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতে পারা আমাকে দারুণ আনন্দ এনে দিয়েছে। তবে যেমনটি বলা হয়, সব ভালো কিছুরই শেষ আছে। আজকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি।”২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন গ্যাব্রিয়েল। পরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন। তবে রঙিন পোশাকে থিতু হতে পারেননি কখনোই। টেস্টেও দলে জায়গা পাকা করতে লড়তে হয়েছে অনেক দিন। দলে যাওয়া-আসা করতে হয়েছে।
তবে ২০১৭ সাল থেকে দেখা গেছে তার সেরাটা। এক পর্যায়ে টেস্টে দলের মূল পেসার হয়ে ওঠেন তিনি। আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে জায়গা করে নেন। দারুণ কিছু জয় তার হাত ধরে এসেছে। নিজের উচ্চতা ও পেশিকে কাজে লাগিয়ে প্রাণহীন পিচেও তিনি ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারতেন। তার গতি ও বাউন্স দেখে এক পর্যায়ে তাকে প্যাট্রিক প্যাটারসন, ইয়ান বিশপের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন ক্যারিবিয়ান পেস কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশ।
৫৯ টেস্টে ১৬৬ উইকেট নিয়ে শেষ হলো তার ক্যারিয়ার। এছাড়া ২৫ ওয়ানডে খেলে তার শিকার ৩৩টি, দুটি টি-টোয়েন্টিতে উইকেট তিনটি।২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে দেখা গেছে তার সেরাটা। ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানে শিকার করেন ৮ উইকেটে। ম্যাচে তার ১২১ রানে ১৩ উইকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সেরা বোলিং।
২০১৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বারবাডোজে বিধ্বংসী বোলিংয়ে ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে ফেরান তিনি। তবে পরের টেস্টে প্রবল সমালোচিত হন তিনি ব্যাটিংয়ের কারণে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ক্রিজে যান, টেস্ট ড্র করতে তার কেবল সাতটি বল বাকি ছিল। কিন্তু লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহকে স্লগ করতে গিয়ে তিনি বোল্ড হয়ে যান। ম্যাচ জিতে সিরিজও জিতে নেয় পাকিস্তান।এই স্মৃতিগুলোই এখন তার সঙ্গী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তাকে সবশেষ দেখা গেছে গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে।ক্যারিয়ারজুড়েই চোটের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তাকে। গত কয়েক বছরে চোটের থাবা ছিল একটু বেশিই। পারফরম্যান্সেও ভাটার টান ছিল স্পষ্ট। সবশেষ সাত টেস্টে তার উইকেট মোটে ১০টি।
ফর্মহীনতা ও চোট মিলিয়ে ২০২১ সালের পর প্রায় দেড় বছর ছিলেন দলের বাইরে। গতবছর ফিরলেও তিন টেস্টে উইকেট নিতে পারেন কেবল পাঁচটি। এরপর আবার জায়গা হারান দলে। এখন সেই লড়াই থেমে গেল।আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও অবশ্য এখনই খেলা ছেড়ে দিচ্ছেন না তিনি।“সামনে তাকিয়ে আমার পরিকল্পনা হলো, ক্যারিয়ারজুড়ে যে ভালোবাসা ও আবেগ দিয়ে খেলেছি, সেই একইভাবে আমার দেশের (ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো) হয়ে খেলা, ক্লাব ও বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলিতে খেলা।”