স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৮ জুন: অভিজ্ঞ রবীন্দ্র জাদেজা তো আছেনই। আরেক বাঁহাতি স্পিনার অক্ষর প্যাটেলের কী দরকার? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভারতের ১৫ সদস্যের দল দেখে নিশ্চয়ই এ প্রশ্নটা অনেকের মাথায় এসেছে। উত্তরটা কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচে নিশ্চয়ই পেয়েছেন।ভারতের ১৭১ রানের জবাবে খেলতে নেমে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার দলটিকে বিস্ফোরক শুরু এনে দেন, ঠিক তখনই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া স্পেল নিয়ে হাজির হন সেই অক্ষর। তাঁর প্রথম শিকার ১৫ বলে ২৩ রান করা বাটলার, দ্বিতীয়টি ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে আরেক অভিজ্ঞ জনি বেয়ারস্টোর।
বাঁহাতি স্পিনার অক্ষরের প্রথম স্পেলে প্রতি–আক্রমণ করার জন্য ইংল্যান্ড বাঁহাতি মঈন আলীকে তিনে নামিয়েছেন। কিন্তু সেই মঈনও থেমেছেন অক্ষরের বলে। ইংল্যান্ডের ম্যাচ সেখানেই শেষ। বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। অক্ষর শেষ পর্যন্ত ৪ ওভার বল করলেন, যা এবারের বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে তাঁর জন্য প্রথম। রান দিয়েছেন মাত্র ২৩, উইকেট ৩টি। প্রত্যাশিতভাবে ম্যাচসেরাও অক্ষর।ভারতীয় নির্বাচক অজিত আগারকার নিশ্চয়ই আড়ালে হাসছেন। অধিনায়ক রোহিত শর্মার মুখের চওড়া হাসিটা তো কাল দেখেছেনই। বিশ্বকাপ দলে চারজন স্পিনার নেওয়ার ঝুঁকিটা মূলত গতকালের সেমিফাইনাল ম্যাচের জন্যই নিয়েছেন দুজন।
ভারত আগে থেকেই জানত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলে তাদের খেলা হবে গায়ানায়, ক্যারিবীয় অঞ্চলে অন্যতম স্পিনবান্ধব উইকেট এটি। সে অনুযায়ী দল সাজিয়েছে দলটি। বাড়তি স্পিনার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন অক্ষর, যাঁর হাত ধরেই বার্বাডোজের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত।আইসিসি যে ভারতকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই এভাবে বিশ্বকাপ সূচি করেছে, সেটি আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। দেশটির সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকারই ইএসপিএনক্রিকইনফোতে বলেছেন, ‘পরিষ্কার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। রোহিতকে এটা মানতেই হবে। সে বলতে পারবে না যে এটা তাদের কাজটা সুবিধা করে দিচ্ছে না। ভারত নিশ্চয়ই তাদের দল সাজিয়েছে এটা মাথায় রেখে।’
বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের নক আউট পর্বের পারফরম্যান্স ভালো নয়। সেটিও নাকি এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়েছে, এমন আভাস দিয়েছেন সাবেক এই ভারতীয় ক্রিকেটার, ‘সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ভারতের সমস্যা ছিল। যখন আপনি জানবেন আপনার খেলা গায়ানায়, তখন আপনি চার স্পিনার দলে রাখবেন। এটাই হবে একটা কারণ।’মাঞ্জরেকারের মতো খোলামেলা সমালোচনা করেছেন ইংলিশ সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনও। ক্লাব প্রেইরি ফায়ার পডকাস্টে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘এটা তাদের (ভারত) টুর্নামেন্ট। তারা যেখানে চায়, সেখানে খেলছে। তারা জানে তাদের সেমিফাইনাল ম্যাচ কোথায় হবে। তারা প্রতিটা ম্যাচ খেলছে সকাল বেলা, যেন ভারতের দর্শকরা রাতের বেলা টিভিতে খেলা দেখতে পারে।’
ভারতের ম্যাচের দর্শকপ্রিয়তা ও আর্থিক বিষয়টি মাথায় রেখেই পরের কথাটা বলেছেন ভন, ‘আমি বুঝতে পারছি। বিশ্ব ক্রিকেটে টাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হলে বিষয়টি বোধগম্য হতো। কিন্তু আপনি যখন বিশ্বকাপ খেলবেন, আইসিসির উচিত অন্য দলগুলোর প্রতি আরও স্বচ্ছ হওয়া। ভারতের কারণে ক্রিকেটে টাকা আসে, তাই এই সুবিধা পেতে পারে না। আমি যেমনটা বললাম, দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এসব হলে আমি বুঝতাম। কিন্তু বিশ্বকাপে আপনি একটি দলের প্রতি সহমর্মিতা, পক্ষপাত দেখাতে পারেন না। এই বিশ্বকাপ সম্পূর্ণ ভারতের জন্য সাজানো হয়েছে।’
শুধু তা–ই নয়, আরেক ইংলিশ সাবেক ক্রিকেটার ডেভিড লয়েড প্রতিটি আইসিসি টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ হতে দেখে অবাক।তাঁর দৃষ্টিতে এটি এক ধরনের ‘ফিক্সিং’। ফুটবল বিশ্বকাপ, ইউরোর কোন গ্রুপে কোন দল খেলবে, তা নির্ধারণ হয় ড্রর মাধ্যমে। ক্রিকেট বিশ্বকাপ তেমন নয়। তাই প্রতি বিশ্বকাপেই ভারত-পাকিস্তান, ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রাখার চেষ্টা করে আইসিসি।এই পদ্ধতির কড়া সমালোচনা করে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার লয়েড টক স্পোর্টসে বলেন, ‘আমরা ক্রিকেটে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে কথা বলি। এটা বড় একটা টুর্নামেন্টের ফিক্সিং। খেলাটাই কিন্তু মঞ্চ। আপনি এটাকে ফিক্স করতে পারেন না। এটা তো কিছুই নয়। আমরা আরও অনেক কিছুই ফিক্স করি। এই বিশ্বকাপেই তো কত কিছু আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে (সূচি, ভেন্যু)। আপনি কারসাজি করার চেষ্টা করছেন, এটা ঠিক নয়।’