স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৯ মার্চ : কলকাতার যেমন পার্ক স্ট্রিট। বেঙ্গালুরুর চার্চ স্ট্রিট আর ব্রিগেড রোড জায়গাটা ঠিক সেরকমই। শহরের বেশিরভাগে নামী রেস্তোঁরা কিংবা পাবগুলো সব সেখানে। চিন্নাস্বামীর খুব কাছে। হেঁটে মিনিট তিনেকের বেশি লাগবে না। জায়গাটা সন্ধের পর থেকে আরও বেশি জমজমাট দেখায়। আইপিএল কিংবা ভারতীয় দলের খেলা থাকলে কথাই নেই। উৎসব বেড়ে যায় আরও বহুগুণ।
আরসিবি-র লাউঞ্জটাও সেখানে। বিরাট কোহলিদের ম্যাচের দিন বিশেষ বিশেষ মেনুর বন্দোবস্ত করা হয়। ঘরের টিম জিতলে মাঝরাত পর্যন্ত সেলিব্রেশন চলে। ঘরের মাঠে আগের ম্যাচটাই জিতেছে আরসিবি। বিরাট কোহলি নিজেও রান পেয়েছেন। সবদিক বিচার্য হলে কেকেআর ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে নিশ্চিন্ত থাকার কথা আরসিবি সমর্থকদের। কিন্তু সেটা তাঁরা আর থাকতে পারছেন কোথায়?
পরিসংখ্যান বলছে, কেকেআরের বিরুদ্ধে বিরাটদের রেকর্ড মোটেই ভাল নয়। বিশেষ করে চিন্নাস্বামীতে। ঘরের মাঠে কোহলিরা এগারোবার মুখোমুখি হয়েছেন কেকেআরের। যার মধ্যে শাহরুখ খানের টিমের জয়ের সংখ্যাটা সাত।
শুধু তাই নয়, দুই টিমের ক্রিকেটীয় যুদ্ধ ঘিরে উত্তেজনার গনগনে আঁচটাও একইরকম ছড়াচ্ছে। আসলে গৌতম গম্ভীর বনাম বিরাট কোহলি মানে উত্তাপের আবহ তৈরি হবেই। এগারো বছর আগে চিন্নাস্বামীতে গম্ভীর বনাম কোহলি হয়েছে। প্রথম জন তখন নাইট অধিনায়ক। গত বছর হয়েছে। যখন গম্ভীর ছিলেন লখনউ সুপার জায়ান্টস মেন্টর। এবারও মেন্টর গম্ভীর, তবে কেকেআরের। এবং সামনে আবার বিরাট কোহলি ও আরসিবি! দু’জনের সম্পর্কের ফাটল ঠিক হয়েছে বলে খবর নেই। বরং কে বলতে পারে, শুক্রবারের চিন্নাস্বামী দু’জনকে ঘিরে নতুন করে উত্তাপ বয়ে আনবে না?
যদিও দুটো টিম এসব নিয়ে খুব একটা ভাবতে চাইছে না। বরং যাবতীয় ফোকাস ক্রিকেটে রাখতে চাইছে। কেকেআর যেমন ঘরের মাঠে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়েছে। একটা সময় মনে হয়েছিল কেকেআর হেসে-খেলে জিতবে। যদিও শেষটা ‘কেকওয়াকের’ মতো হয়নি। বরং টেনশনের স্রোত বইয়ে জয় এসেছে। মিচেল স্টার্ক, বরুণ চক্রবর্তী মিলে একগাদা রান বিলিয়েছিলেন। চিন্নাস্বামীর উইকেট এমনিতেই ব্যাটিং-স্বর্গ। তার উপর মাঠও খুব বড় নয়। ফলে বোলিংয়ে উন্নতি না হলে যে চিন্তা বাড়বে, সেটা গম্ভীররা খুব ভাল করেই জানেন। তা ছাড়া কেকেআর টপঅর্ডার প্রথম ম্যাচে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিল। এসব যদি চিন্তার কারণ হয়, তাহলে একরাশ স্বস্তি হল আন্দ্রে রাসেলের ফর্ম।
প্রথম ম্যাচে যেরকম বিধ্বংসী ব্যাট করেছেন ‘ড্রে রাস’, সেটা আরসিবি বোলিংকে চিন্তায় রাখার পক্ষে যথেষ্ট। ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন রাসেল। বলে গেলেন, কী করতে হবে সেটা তাঁর খুব ভাল করেই জানা। বলছিলেন, ‘‘দেখুন আগেরবার আমার মাইন্ডসেট খুব ভাল জায়গায় ছিল না। কী করে সেরাটা দেব, তার থেকে অনেক বেশি ভাবছিলাম ব্যর্থতা নিয়ে। একটা নেতিবাচক ভাবনা কাজ করছিল। বেশি চিন্তা-ভাবনা করে নিজেকে আরও চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছিলাম।’’
গত এক বছরে নিজের ব্যাটিং টেকনিকে কিছু বদল এনেছেন। রাসেল বলছিলেন, ‘‘কিছু বদল এনেছি। আবু ধাবিতে নেটে ব্যাটিং করছিলাম। সুনীল (নারিন) সেটা দেখছিল। আমাদের দু’জনেরই মনে হয়েছিল আমি অনেক কিছু করার চেষ্টা করছি। স্টেপ আউট করছিলাম। বুঝতে পারি যে স্ট্রাইড নিয়ে খাটাখাটনি করতে হবে। বিশ্বের বেশিরভাগ বিগ হিটারদের ব্যাটিং যখন দেখি, লক্ষ্য করেছি ওরা খুব স্ট্রেচ করে না। আমি এখন চেষ্টা করছি একটু দেরিতে মুভ করার। আর হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশনের উপর জোর দিয়ে খেলার চেষ্টা করছি।’’
সেগুলো যে কতটা কাজে দিয়েছে, তার প্রমাণ কিন্তু ইডেনে সাইরাইজার্স ম্যাচের ওই ইনিংস। কেকেআর সমর্থকরা নিশ্চিতভাবেই ইডেনের রিপ্লে দেখতে চাইবেন চিন্নাস্বামীতেও!