স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৮ জুলাই: উইকেটে স্পিনারদের জন্য টার্ন ও বাউন্স মিলল বেশ। দুই বাঁহাতি স্পিনার কুলদিপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজা মিলে গুঁড়িয়ে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং। সেই পিচেই পরে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ফিফটি উপহার দিলেন ইশান কিষান। অনায়াস জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।বারবাডোজের কেনসিংটন ওভালে বৃহস্পতিবার প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের জয় ৫ উইকেটে।ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় স্রেফ ২৩ ওভারে ১১৪ রানে। এই সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর এটি। ২০১৮ সালের ভারত সফরে ১০৪ রান সর্বনিম্ন।ঘরের মাঠে ক্যারিবিয়ানদের এর চেয়ে কম রানের ইনিংস আছে আর কেবল দুটি।আগে ব্যাটিং করে এর চেয়ে কম ওভারে আগে কেবল একবারই অল আউট হয়েছিল তারা, ২০১১ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২ ওভারে ৬১ রানে।৪৪ বলের মধ্যে ২৬ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারায় শেষ ৭ উইকেট, সবগুলিই ভাগ করে নেন জাদেজা ও কুলদিপ।রিস্ট স্পিনার কুলদিপের শিকার শেষের ৪টি। ৩ ওভারে ২ মেডেনে রান দেন তিনি স্রেফ ৬। ম্যাচের সেরাও তিনিই। জাদেজা ৩৭ রানে নেন ৩টি।
এই প্রথম কোনো ওয়ানডেতে ভারতের বাঁহাতি স্পিনাররা মিলে সাত বা এর বেশি উইকেট নিলেন।অধিনায়ক শেই হোপের ৪৫ বলে ৪৩ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কেউ উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি।জবাবে ভারতের ৫ উইকেট পড়লেও বিরাট কোহলি এ দিন ব্যাটিংয়েই নামেননি। রোহিত শর্মা সাত নম্বরে নেমে ১৯ বলে ১২ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।ব্যাট হাতে ব্যবধান গড়ে কিষান ৪৬ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় করেন ৫২ রান।টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারেই কাইল মেয়ার্সকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হার্দিক পান্ডিয়াকে বেরিয়ে এসে খেলে মিডে-অনে সহজ ক্যাচ দেন বাঁহাতি ওপেনার।স্রেফ দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা আলিক আথানেজ পরপর ছক্কা ও চার মারেন পান্ডিয়াকে। আরও দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি শার্দুল ঠাকুরের তিন বলের মধ্যে।তবে অভিষিক্ত মুকেশ কুমারের নিরীহ এক বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি ১৮ বলে ২২ রান করে। পরের ওভারে শার্দুলের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন ব্র্যান্ডন কিং।৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলের হাল ধরেন হোপ ও শিমরন হেটমায়ার। ২০২১ সালের জুলাইয়ের পর ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামা হেটমায়ার অবশ্য শুরু থেকে সংগ্রাম করেন ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে। রান বাড়ানোর কাজটা করেন মূলত হোপ।
১৫ ওভার শেষে ক্যারিবিয়ানদের রান ছিল ৩ উইকেটে ৮৭। এরপরই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে তাদের ব্যাটিং।জাদেজা নিজের প্রথম ২ ওভারে দিয়েছিলেন ২০ রান। তাকেই স্কুপ করতে গিয়ে হেটমায়ার বোল্ড হলে ভাঙে ৪৩ রানের জুটি। বাঁহাতি স্পিনার পরের ওভারে এসে তিন বলের মধ্যে বিদায় করেন রভম্যান পাওয়েল ও রোমারিও শেফার্ডকে। দ্বিতীয় স্লিপে এক হাতে শেফার্ডের অসাধারণ এক ক্যাচ নেন কোহলি।ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডল ও লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন কুলদিপ যাদব। ছবি: ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিম ফেইসবুক পাতা।ডমিনিক ড্রেকসকে এলবিডব্লিউ করে শিকার ধরা শুরু কুলদিপের। নিজের পরের দুই ওভারে বাকি তিন ব্যাটসম্যানকেও ফিরিয়ে স্বাগতিকদের ইনিংস গুটিয়ে দেন তিনি।রান তাড়ায় কিষানের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন শুবমান গিল। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি গিল। জেডেন সিলসের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি ৭ রান করে।
দলকে এগিয়ে নেন কিষান ও সূর্যকুমার যাদব। দুজনই খেলেন দারুণ কিছু শট। ৪১ বলে ৩৬ রানের জুটি ভাঙে সূর্যকুমারের (২৫ বলে ১৯) বিদায়ে।নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট হয়ে পান্ডিয়া বিদায় নেন দ্রুতই। কিষান ফিফটি তুলে নেন ৪৪ বলে। ভারত আর কোনো উইকেট হারাবে না বলেই মনে হচ্ছিল তখন।তবে কিষান বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পরের ওভারে আউট হয়ে যান শার্দুল ঠাকুরও। বাকিটা সারেন জাদেজা ও রোহিত।ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাজে সময় প্রলম্বিত হলো আরও। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিদারুণ ব্যর্থতার পর এই সংস্করণে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা হারল পরিষ্কার ব্যবধানে। শনিবার একই মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর আরেকটি সুযোগ হোপদের সামনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৩ ওভারে ১১৪ (কিং ১৭, মেয়ার্স ২, আথানেজ ২২, হোপ ৪৩, হেটমায়ার ১১, পাওয়েল ৪, শেফার্ড ০, ড্রেকস ৩, ক্যারাইয়াহ ৩, মোটি ০*, সিলস ০; পান্ডিয়া ৩-০-১৭-১, মুকেশ ৫-১-২২-১, শার্দুল ৩-১-১৪-১, জাদেজা ৬-০-৩৭-৩, উমরান ৩-০-১৭-০, কুলদিপ ৩-২-৬-৪)
ভারত: ২২.৫ ওভারে ১১৮/৫ (কিষান ৫২, গিল ৭, সূর্যকুমার ১৯, পান্ডিয়া ৫, জাদেজা ১৬*, রোহিত ১২*; ড্রেকস ৪-০-১৯-০, সিলস ৪-০-২১-১, মেয়ার্স ১-০-৬-০, শেফার্ড ১-০-২-০, মোটি ৬.৫-০-২৬-২, ক্যারাইয়াহ ৫-০-৩৫-১, আথানেজ ১-০-৭-০)
ফল: ভারত ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ:তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে ভারত
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুলদিপ যাদব