স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৪ ফেব্রুয়ারি: ব্রুক এমন খেলেছেন যে, রুটের সেঞ্চুরিও তাতে অনেকটা ম্লান। তবে তার নিজের জন্য ইনিংসটি যেমন ছিল জরুরি, দলের জন্যও দারুণ কার্যকর। ব্রুক আর রুটের যুগলবন্দিতে শুরুর ধাক্কা সামলে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিনটি ইংল্যান্ডের। বৃষ্টিতে শুক্রবার আগেভাগেই খেলা বন্ধ হওয়ার সময় ইংলিশদের রান ৩ উইকেটে ৩১৫। যথারীতি রানের গতিতে ছাপ আছে ‘বাজবল’ ঘরানার। স্রেফ ৬৫ ওভার হয়েছে খেলা, ওভারপ্রতি রান পাঁচের কাছাকাছি। ১৬৯ বল খেলে ২৪ চার ও ৫ ছক্কায় ১৮৪ রানে অপরাজিত ব্রুক। ষষ্ঠ টেস্টে তার চতুর্থ সেঞ্চুরি এটি। আগের সেরা ১৫৩ ছাড়িয়ে তিনি এখন প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কাছে। স্রেফ ৯ ইনিংস খেলেই ২৪ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের রান এখন ৮০৭। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে ৯ ইনিংসে ৮০০ করতে পারেননি আর কোনো ব্যাটসম্যান। ৯ ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি ৩টি। এই দিন শেষে টেস্টে তার গড় এখন ১০০.৮৭। স্ট্রাইক রেট ৯৯.৩৮। টেস্ট ক্যারিয়ারের স্বপ্নের শুরু বললেও যেন যথার্থ হয় না। ১৮২ বলে ১০১ রানে দিন শেষ করেন রুট। ২৯ বার একশ ছুঁয়ে টেস্ট সেঞ্চুরিতে এখন তিনি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পাশে। অ্যালেস্টার কুকের (৩৩ সেঞ্চুরি) ইংলিশ রেকর্ডের দিকেও এগিয়ে গেলেন আরেকধাপ। এই ইনিংসের আগে ১১ ইনিংস সেঞ্চুরি ছিল না রুটের। খুব লম্বা সময় বা সেঞ্চুরির খরা এটি নয়। তবে এই ইংল্যান্ড দলের জন্য বা তার নিজের যে মান, তাতে এই ছোট্ট খরাও চোখে পড়ার মতো। আগের দুই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শতরান পাননি তিনি। ৫ বার আউট হয়েছেন দুঅঙ্ক ছোঁয়ার আগে। এ দিন সেঞ্চুরির পর তার উদযাপনে তাই স্বস্তির ছায়া থাকল স্পষ্টই।
রুট-ব্রুকের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৩৫০ বলে ২৯৪ রানের। অথচ দিনের শুরুটায় দাপট ছিল নিউ জিল্যান্ডের। বেসিন রিজার্ভে সবুজের ছোঁয়া থাকা উইকেটে টস জিতে বোলিং নেন কিউই অধিনায়ক টিম সাউদি। এই মাঠে সবশেষ ৪৯ প্রথম শ্রেণির ম্যাচেই টসজয়ী অধিনায়ক বেছে নিলেন বোলিং। শুরুটাও হয় তাদের প্রত্যাশামতো। আগের টেস্টে প্রথম মেইডেনটি পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৪৮ ওভার পর্যন্ত। এবার প্রথম দুই ওভারই মেইডেন। চতুর্থ ওভারে ধরা দেয় প্রথম উইকেট। ম্যাট হেনরি ফিরিয়ে দেন জ্যাক ক্রলিকে (২)। সন্তান জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য আগের টেস্টে না খেলা এই পেসার নিজের পরের ওভারে বিদায় করে দেন তিনে নামা অলিভার পোপকেও (১০)। পরের ওভারে সাউদির শিকার ওপেনার বেন ডাকেট (৯)। সপ্তম ওভারে ইংল্যান্ডের রান তখন ৩ উইকেটে ২১। তবে বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের এই ইংল্যান্ড তো ভড়কে যাওয়ার দল নয়! এই দলের মানসিকতার প্রতিফলন পুরোপুরি পড়ে যার ব্যাটে, সেই ব্রুক উইকেটে যান এরপর। দ্রুতই তিনি বদলে দিতে থাকেন ম্যাচের চিত্র।
হেনরির বাড়তি লাফানো বলে ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান তিনি তৃতীয় স্লিপ ও গালির মাঝ দিয়ে। পরের ওভারেই সাউদির বলে মারেন তিনি টানা তিন বাউন্ডারি, তৃতীয়টি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে! তাতে উজ্জীবিত হয়েই কি না, পরের ওভারে রুট পেয়ে যান প্রথম বাউন্ডারি। ব্যস, ছুটতে থাকে দুজনের রানের রথ। দ্বাদশ ওভারে চলে আসে দলের পঞ্চাশ। লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারে ব্রুক ফিফটিতে পা রাখেন ৫১ বলে, ১০ বাউন্ডারিতে। লাঞ্চের পরও এগিয়ে গতিতে ছুটতে থাকেন ব্রুক। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে নিউ জিল্যান্ড এই ম্যাচে বাইরে রাখে দুই পেসার স্কট কুগেলাইন ও ক্লেয়ার টিকনারকে। তাদের বদলে একাদশে আনে হেনরির সঙ্গে ব্যাটসম্যান উইল ইয়াংকে। বোলার একজন কম রাখার খেসারত তাদেরকে বুঝিয়ে দেয় ইংলিশরা। চতুর্থ পেসার হিসেবে যাকে ব্যবহার করা হয়, সেই ড্যারিল মিচেলের ওপর চড়াও হয়ে লাঞ্চের পর টানা দুটি ছক্কা মারেন ব্রুক।
আরেক পাশে রুট এগোতে থাকেন তার মতো করে। ফিফটি করেন তিনি ১২২ বলে। ওই ওভারেই ব্রুকের সেঞ্চুরি ধরা দেয় স্রেফ ১০৭ বলে। দ্বিতীয় সেশনে স্রেফ ২৭ ওভারে ১৩৭ রান তোলে ইংল্যান্ড। সেঞ্চুরি থেকে দেড়শতে যেতে ব্রুকের লাগে স্রেফ ৩৮ বল। নিল ওয়্যাগনারের শর্ট বলের চেনা কৌশল আগের টেস্টের মতো এ দিনও গুঁড়িয়ে দেন ব্রুক। এই বাঁহাতি পেসারের বলেই মারেন তিনি ৬টি চার ও ১টি ছক্কা। প্রথম ১২ ওভারে ওয়্যাগনার দেন ৮১ রান! পরে একটু রাশ টেনে ধরতে পারেন তিনি। রোমাঞ্চকর সব শট খেলে দেড়শর পরও এগিয়ে যেতে থাকেন ব্রুক। রুট আগলে রাখেন আরেক প্রান্ত। বেসিন রিজার্ভে চতুর্থ উইকেটে সেরা জুটির রেকর্ড হয়ে যায়। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের চতুর্থ উইকেট জুটির রেকর্ডও ধরা দেয়। পেছনে পড়ে যায় ১৯৭৫ সালে গড়া মাইক ডেনিস ও কিথ ফ্লেচারের ২৬৬ রানের জুটি। প্রথম ফিপটির পর গতি বদলে পঞ্চাশ থেকে শতরানে যেতে রুট খেলেন কেবল ৬০ বল। ১৮২ বলে পা রাখেন তিনি সেঞ্চুরিতে। এরপর বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। আর তা শুরু হতে পারেনি। ব্রুক-রুটের জুটি তখন ট্রিপল সেঞ্চুরির কাছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৫ ওভারে ৩১৫/৩ (ক্রলি ২, ডাকেট ৯, পোপ ১০, রুট ১০১*, ব্রুক ১৮৪*; সাউদি ১৭-৫-৪৮-১, হেনরি ১৫-২-৬৪-২, মিচেল ৯-১-৬১-০, ওয়্যাগনার ১৭-১-১০১-০, ব্রেসওয়েল ৭-০-৩৩-০)।