Friday, April 19, 2024
বাড়িখেলামেসিদের সামনে ‘মায়াবী বিভ্রম’ লিভাকভিচ

মেসিদের সামনে ‘মায়াবী বিভ্রম’ লিভাকভিচ

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৩ ডিসেম্বর: কাতার বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে ক্রোয়াটদের পথচলার নায়ক এই লুভাকভিচ। শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার-ফাইনালে চীনের প্রাচীরের দৃঢ়তায় তিনি আটকে রেখেছিলেন পোস্ট। সেখানে জাপান ও ব্রাজিলের শত চেষ্টাও পড়েছিল মুখ থুবড়ে। মেসি-মার্তিনেসদের সামনে এবার এই দেয়াল টপকানোর চ্যালেঞ্জ।পোস্টের নিচে এবার লিভাকভিচ নামের এক তারার উদয় হবে, তা হয়তো অনেকেই ভাবেনি। মানুয়েল নয়ার, আলিসনদের মতো গোলরক্ষক ছিলেন বিশ্বকাপে। কিন্তু সবাইকে আড়াল করে দিয়ে আপন আলোয় উদ্ভাসিত ২৭ বছর বয়সী লিভাকভিচ।৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা শরীর তার, হাত দুটোও দুই দিগন্তে প্রসারিত যেন বাজপাখির ডানা। যেমনটা ছিল সামোরার। বলা হত, স্পেনের এই গোলরক্ষক পোস্টের নিচে দাঁড়ালে ‘ছোট’ হয়ে যেত গোলমুখ! পথ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যেত প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকাররা। আল জানোব স্টেডিয়ামে জাপানের বিপক্ষে, এডুকেশন সিটির আঙিনায় ব্রাজিলের বিপক্ষে লিভাকভিচ যেন তেমনটাই করে দেখালেন।জাপান ম্যাচে টাইব্রেকারে তিন শট রুখে দারুণ কীর্তি গড়েন লিভাকভিচ। পেনাল্টি শুটআউটে জাপানের তাকুমি মিনামিনো, কাওরো মিতোমা ও মায়া ইয়োশিদার শট ফিরিয়ে দেন। তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপের এক ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে তিনটি সেভ করলেন রিকার্দো ও দানিয়েল সুবাসিচের পর।

২০০৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পর্তুগালের রিকার্দো ও ২০১৮ আসরে শেষ ষোলোয় ডেনমার্কের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়ার দানিয়েল সুবাসিচ এই ‘হ্যাটট্রিক’এর কীর্তি গড়েছিলেন। সুবাসিচেরই যোগ্য উত্তরসূরি লিভাকভিচ। গতবার তিনি ছিলেন বদলি গোলরক্ষকের তালিকায়, এবার তিনিই কোচ দালিচের প্রথম পছন্দের।এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল আক্রমণের মরুঝড় বইয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়ার উপর দিয়ে। কিন্তু নেইমার, রিশার্লিসনরা টলানো পারেননি লিভাকভিচকে। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে মিলিয়ে ১২০ মিনিটে সেভ করেন ১১টি, পরাস্ত হন মাত্র একবার। ১-১ সমতা শেষে টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে রদ্রিগোর প্রথম শট রুখে সুরও বেঁধে দেন তিনি।

ক্রোয়েশিয়াও সেমি-ফাইনালে উঠে যায় বিশ্বকাপের মঞ্চে টাইব্রেকার নামের স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ে টানা চারবার জিতে। গতবার রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ষোলোয় ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার-ফাইনালে রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়েছিল জ্লাতকো দালিচের দল। এবার জয় এলো জাপান ও ব্রাজিলের বিপক্ষে, নিজের ভাগ্য নিজে লেখা লিভাকভিচের হাত ধরে।লিভাকভিচ আসলেই নিজের পথ বেছে নিয়েছিলেন ছোটবেলায়। ‘ডাক্তারবাড়ি’ কিংবা ‘ইঞ্জিনিয়ারবাড়ি’র ছেলের মনটা পড়ে থাকত খেলার মাঠে। ডাক্তার, রেডিওলজিস্ট দাদার হাত ধরে জাদারের বাস্কেটবল ক্লাবে আসা-যাওয়া শুরু। ইঞ্জিনিয়ার বাবা জাদরাভকোর (Zdravko) কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার এবং ক্রোয়েশিয়া সরকারের সাবেক মন্ত্রীও ছিলেন, তার নানী ইংরেজির শিক্ষক, কিন্তু কেউই ছোট্ট লিভাকভিচের পথ আগলে দাঁড়ায়নি, ছুটতে দিয়েছে ইচ্ছেমতো।তিনিও ছুটলেন, ২০০৭ সালে যোগ দিলেন জাদারের যুব দলে। এরপর জাগরেবে। বাস্কেবল, টেনিসের প্রতি যা একটু টান, ছিল তা টুটে গেছে ততদিনে। গ্লাভসজোড়াকে আপন করে নিয়েছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, ক্লাব ফুটবলে ক্রোয়েশিয়ার সীমানা পেরুনোর কথা কখনও ভাবেননি, এখনও খেলে চলেছেন দিনামো জাগরেবে।

২০১০ সালে ক্রোয়েশিয়ার বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পাওয়া। বয়সভিত্তিক পর্যায়ের নানা গলি পেরিয়ে সাত বছর পর তার ঠাঁই মেলে সিনিয়র টিমে। গত বিশ্বকাপে যদিও ছিলেন সিবাসিচের ছায়ায় ঢাকা, কিন্তু রাশিয়ার আসর থেকে শিখেছিলেন ঢের-পোস্টের নিচে কিভাবে শান্ত থাকতে হয়, স্নায়ুর লাগাম মুঠোয় রেখে নিজের মনের কথা শুনতে হয়।ছোটবেলায় মনের কথা শুনে ফুটবলের সুবজে পা রাখার স্মৃতিচারণ করতে এক সাক্ষাৎকারে লিভাকভিচ বলেছিলেন, “আমার পরিবারের সবাই ডাক্তার, নয়তো ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু ছেলেবেলাতেই আমি জানতাম আমি কি করব।”সেই লিভাকভিচ এখন ক্রোয়েশিয়ার পোস্টের নিচে ‘ফায়ারম্যান’ গোলকিপার। যার বিভ্রমে পড়ে সবশেষ পথ হারিয়েছে ব্রাজিল। মেসি-মার্তিনেসদের সামনে তাই অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য