স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,৬ ডিসেম্বর: চতুর্থ দিন বিকেলে যখন ইনিংস ঘোষণা করলেন বেন স্টোকস, নিশ্চয়ই কোনো লক্ষ্য, কোনো আশা, কোনো বিশ্বাস তার ছিল। কিন্তু শেষ দিন বিকেলে যখন সেই লক্ষ্য পূরণ হলো, সত্যিই যখন জিতে গেল ইংল্যান্ড, অধিনায়কের নিজের কাছেও অবিশ্বাস্য লাগছে তা। অভাবনীয় প্রাপ্তির আনন্দে ভাসছেন ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা ও সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয়ের স্বাদ পাওয়া ক্রিকেটার জিমি অ্যান্ডারসনও। অসংখ্য সাফল্যে সমৃদ্ধ ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এক জয় যোগ হয় সোমবার। যে টেস্টের সাড়ে তিন দিন শেষেও জয়-পরাজয় ছিল একরকম অকল্পনীয়, সেই ম্যাচেই চমকপ্রদ ইনিংস ঘোষণা ও শেষ দিনে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইংল্যান্ড হারিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। মহাসড়কের মতো নিস্প্রাণ উইকেটে ম্যাচের প্রথম দিনেই চার সেঞ্চুরিতে ৭৫ ওভারে ৫০০ রান ছাড়ায় ইংল্যান্ড। তাদের প্রথম ইনিংস থামে ওভারপ্রতি সাড়ে ৬ করে রান নিয়ে ৬৫৭ রানে। পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে তোলে ৫৭৯ রান। তিন দিন ও প্রায় এক সেশন হয়ে গেছে ততক্ষণে। প্রথম ইনিংসে ওয়ানডের গতিতে রান তোলা ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে থাকে টি-টোয়েন্টির গতিতে। স্রেফ ৩৫.৫ ওভারে ২৬৭ রান তুলে তারা আচমকাই ইনিংস ঘোষণা করে দেয়। ইংলিশ অধিনায়কের সিদ্ধান্ত চমকে দেয় অনেককেই। পাকিস্তানকে চার সেশনে ৩৪৩ রানের লক্ষ্য দেয় তারা। এই উইকেটে যা ছিল বড় ঝুঁকির। তবে তাদের এই পদক্ষেপই প্রাণ ফেরায় ম্যাচে।
শেষ দিনে রান তাড়ায় অনেকটা সময় ধরে পথেই থাকে পাকিস্তান। কিন্তু অলিভার রবিনসন ও ৪০ বছর বয়সী জিমি অ্যান্ডারসনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৭৪ রানের দারুণ জয় আদায় করে নেয় ইংল্যান্ড। দুই পেসারই নেন ৪টি করে উইকেট। শেষ সেশনে ৯ রানের মধ্যে পাকিস্তান হারায় ৫ উইকেট। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও বেন স্টোকসের জমানায় যে আগ্রাসী ঘরানার যে দর্শনে টেস্ট ক্রিকেটে বিপ্লব এনেছে ইংল্যান্ড, সেটিই নতুন উচ্চতা স্পর্শ করল এই ম্যাচে। স্টোকস ম্যাচের পর বললেন, তারা নিজেরাও অনেকটা ঘোরের মধ্যে আছেন। “এটি অবিশ্বাস্য। ড্রেসিং রুমে আমরা নিজেরাই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ৫ দিন ধরে যে কঠোর পরিশ্রম ও খাটুনি গিয়েছে সবার, তা সবাইকে নাড়া দিচ্ছে। জিমি অ্যান্ডারসন বলছিল, সে খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে। ১৮০টির মতো (১৭৬) টেস্ট খেলা একজন মানুষ যখন ম্যাচ শেষে এরকম অনুভব করে, এটিই প্রমাণ করে দেয় যে আমরা বিশেষ কিছু অর্জন করেছি।” স্টোকস অধিনায়ক হওয়ার পর এই নিয়ে ১৫ ইনিংসের সবকটিতেই প্রতিপক্ষকে অলআউট করল ইংল্যান্ড। বিস্ময়কর এই তথ্যই বলে দিচ্ছে, তার নেতৃত্বে দল কতটা আক্রমণাত্মক।
রাওয়ালপিন্ডির এই নিষ্প্রাণ উইকেটে কাজটা যদিও সহজ ছিল না। প্রথম দিনে দ্রুত রান তোলার পরিকল্পনা থেকে ইনিংস ঘোষণা পর্যন্ত পরিকল্পনার পেছনের ভাবনা ম্যাচ শেষে শোনালেন স্টোকস। “মিথ্যে বলব না, আমি শুরু থেকে শেষটা ভাবছিলাম যে কেমন হতে পারে। প্রথম দিন থেকেই জানতাম, আমাদেরকে দ্রুত রান তুলতে হবে। এই উইকেটে ব্যাটিংয়ের ভুল ছাড়া উইকেট যাওয়া কঠিন, কারণ এখানে কোনো সুইং ছিল না, স্পিন ছিল না। আমাদের তা কাজে লাগাতেই হতো।” “এরপর যখন টেস্ট ম্যাচ এগিয়ে যেতে থাকল, মূল ব্যাপারটি হয়ে দাঁড়াল, কোনো না কোনো ভাবে যেন শেষ দিনের এমন অবস্থায় ম্যাচকে আনা যায়, যেখানে দুই দলেরই জয়ের সুযোগ আছে। আমাদের ওই ইনিংস ঘোষণা ওদেরকে উৎসাহী করে তোলে, এটিই আমাদের পক্ষে আসে।” শেষ ইনিংসের ২৪ ওভার বল করে স্রেফ ৩৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেওয়া অ্যান্ডারসনের এটি টেস্টে ৭৯তম জয়। ১৯ বছরের বেশি সময় ধরে ক্রিকেট বিশ্বের নানা প্রান্তে কত দুর্দান্ত জয়ের স্বাক্ষী তিনি। তার মতো একজনের কাছেও এই জয়টি বিশেষ কিছু। “এটি সম্ভবত আমার সম্পৃক্ত থাকা সেরা জয়গুলির একটি, সেরা যদি নাও হয়। এরকম একটি পিচে, যেভাবে আমরা খেলেছি ওভাবে খেলতে পারা, এমন গতিতে রান তুলে আমরা নিজেদের সুযোগ করে দিয়েছিল ফল বেল করার এবং আমার মনে হয়, ম্যাচ শেষে এই ফল আমাদের প্রাপ্য।”