Tuesday, January 21, 2025
বাড়িখেলা১৯৭০ বিশ্বকাপ: ব্রাজিলের ‘তৃতীয়’

১৯৭০ বিশ্বকাপ: ব্রাজিলের ‘তৃতীয়’

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ১২  নভেম্বর: ৮ অগাস্ট, ১৯৬২। জাপানের টোকিওতে ভোটের মাধ্যমে আর্জেন্টিনাকে পেছনে ফেলে নবম আসরের আয়োজক নির্বাচিত হয় উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। এই কংগ্রেসেই ঠিক হয় যে, ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপের একাদশ আসরের স্বাগতিক হবে আর্জেন্টিনা। ১৯৭০ বিশ্বকাপ দিয়ে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বাইরের কোনো মহাদেশে বসে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর। যা চলে ৩১ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত। বিশ্বকাপের আগের বছর উত্তর আমেরিকায় চলে উত্তেজনাপূর্ণ এক অধ্যায়। চাঁদে প্রথম পা রাখে কোনো মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিচার্ড নিক্সন। শেষবারের মতো পারফরম্যান্স করেন জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলস। ইতিহাসে দাগ কেটে রাখা এমন আরও অনেক ঘটনার মধ্যেই চলে আসে মেক্সিকো বিশ্বকাপ। সেখানে এমন একটি পাতায় নিজের নাম লেখান পেলে, যেখানে এখনও পর্যন্ত তিনি একাই আছেন। তিনি ছাড়া বিশ্বকাপে তিনটি শিরোপা জিততে পারেনি আর কেউ। আগের চারবারের ফরম্যাটেই এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। সরাসরি খেলার সুযোগ পায় স্বাগতিক মেক্সিকো ও শিরোপাধারী ইংল্যান্ড। বাছাই পর্ব পেরিয়ে তাদের সঙ্গী হয় ১৪ দেশ। এর মধ্যে ইউরোপ থেকে আসে আটটি- বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, পশ্চিম জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইতালি, রোমানিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া ও সুইডেন। লাতিন আমেরিকা থেকে তিনটি- ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও পেরু। উত্তর আমেরিকা থেকে একটি- এল সালভাদর। এশিয়া থেকে একটি- ইসরায়েল এবং আফ্রিকা থেকে একটি- মরক্কো। 

এই বিশ্বকাপ দিয়েই অভিষেক ঘটে ইসরায়েল, মরক্কো ও এল সালভাদরের। প্রথমবারের মতো বাছাই পর্বে বাদ পড়ে আর্জেন্টিনা। এর আগে ১৯৩৮, ১৯৫০ ও ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি দেশটি।  গ্রুপ পর্ব ১৬ দেশকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে গ্রুপে দলগুলো একে অপরের বিপক্ষে খেলে। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল যায় কোয়ার্টার-ফাইনালে। 

গ্রুপ ১: সোভিয়েত ইউনিয়ন, মেক্সিকো, বেলজিয়াম, এল সালভাদর

গ্রুপ ২: ইতালি, উরুগুয়ে, সুইডেন, ইসরায়েল

গ্রুপ ৩: ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, রোমানিয়া

গ্রুপ ৪: পশ্চিম জার্মানি, পেরু, বুলগেরিয়া, মরক্কো 

গ্রুপ ১ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মেক্সিকো। দুই জয় ও এক ড্রয়ে দুই দলেরই পয়েন্ট ছিল ৫। গোল পার্থক্যও ছিল সমান +৫। ড্রয়ের সময় প্রথম পটে থাকায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন, রানার্সআপ মেক্সিকো।  এক জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয় বেলজিয়াম। সব ম্যাচ হেরে শূন্য হাতে অভিষেক আসর শেষ করে এল সালভাদর। গ্রুপ ২ থেকে শেষ আটে যায় ইতালি ও উরুগুয়ে। এক জয় ও দুই ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় ইতালি। একটি করে জয় ও ড্রয়ে উরুগুয়ে ও সুইডেনের পয়েন্ট হয় ৩। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থেকে ইতালির সঙ্গী হয় আরেক সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। তৃতীয় হয়ে বিদায় নেয় সুইডেন। নিজেদের প্রথম আসরে ইসরায়েলের প্রাপ্তি দুটি ড্র থেকে ২ পয়েন্ট।  

গ্রুপ ৩ থেকে পরের ধাপে যায় ব্রাজিল ও ইংল্যান্ড। তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় ব্রাজিল। দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের সঙ্গী হয় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। এক জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় রোমানিয়া। সব ম্যাচ হেরে তলানিতে থেকে বিদায় নেয় চেকোস্লোভাকিয়া।  গ্রুপ ৪ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালে যায় পশ্চিম জার্মানি ও পেরু। তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় পশ্চিম জার্মানি। দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ পেরু। একটি করে ড্রয়ে পরের দুটি স্থানে থাকে বুলগেরিয়া ও মরক্কো। বুলগেরিয়া ও পেরুর বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন জার্মান ‘গোল মেশিন’ জার্ড মুলার। কোয়ার্টার ফাইনাল শেষ আটের লাইনআপ ছিল এমন: সোভিয়েত ইউনিয়ন-উরুগুয়ে, ব্রাজিল- পেরু, ইতালি- মেক্সিকো, পশ্চিম জার্মানি-ইংল্যান্ড। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‌১-০ গোলে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে যায় উরুগুয়ে। মেক্সিকোকে ৪-১ গোলে হারিয়ে তাদের সঙ্গী হয় ইতালি। পেরুকে ৪-২ গোলে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে যায় ব্রাজিল। জোড়া গোল করেন তোস্তাও, একটি করে রিভেলিনো ও জায়ারজিনিয়ো। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয় পশ্চিম জার্মানি। ৮১তম মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। শেষ দিকে উয়ে সিলার সমতা ফেরান। অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান গড়ে দেন মুলার। গত আসরে ফাইনালে হারের মধুর প্রতিশোধ নেয় পশ্চিম জার্মানি। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে ১৯তম মিনিটে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্লোদোয়ালদো, জায়ারজিনিয়ো ও রিভেলিনোর গোলে ৩-১ ব্যবধানে উরুগুয়ে হারায় তারা। পরদিন উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে পশ্চিম জার্মানিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালে যায় ইতালি। অষ্টম মিনিটেই এগিয়ে যায় তারা। শেষ দিকে গোল করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেয় পশ্চিম জার্মানি। অতিরিক্ত সময়ে হয় পাঁচ গোল! ৯৪তম মিনিটে প্রথম ও ১১০তম মিনিটে দ্বিতীয়বার দলকে এগিয়ে নেন মুলার।

 কিন্তু সমতা ফেরানোর পর ফের এগিয়ে যায় ইতালি। ব্যবধান ধরে রেখে নিশ্চিত করে ফাইনাল। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে উরুগুয়েকে ১-০ গোলে হারায় পশ্চিম জার্মানি। ফাইনাল ১৯৫০ সালে ফিফা যখন বিশ্বকাপের ট্রফির নাম ‘জুলে রিমে ট্রফি’ করে সেই সময় সিদ্ধান্ত হয়, যে দল সবার আগে তিনবার বিশ্বকাপ জিতবে, তারা চিরতরে পাবে এই ট্রফি। ব্রাজিল ও ইতালি- দুই দলের সামনেই হাতছানি ছিল এই সুযোগ কাজে লাগানোর।২১ জুন, ১৯৭০। টানটান উত্তেজনা নিয়ে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার দর্শক উপস্থিত হয় মেক্সিকো সিটির আজতেকা স্টেডিয়ামে। জুলে রিমে ট্রফি চিরতরে নিজেদের করে নেয়ার লড়াইয়ে নামে ফুটবল দুই পরাশক্তি ব্রাজিল ও ইতালি। প্রথমার্ধে ব্রাজিলকে এগিয়ে নেন পেলে। ৩৭তম মিনিটে সমতা ফেরায় ইতালি। আশা জাগায় লড়াইয়ের। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তাদের দাঁড়াতেই দেয়নি ব্রাজিল। ৩ গোল করে ফাইনালে জিতে যায় ৪-১ ব্যবধানে; সঙ্গে চিরতরে নিজেদের করে নেয় জুলে রিমে ট্রফি। ছয় ম্যাচের সব জিতে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। তর্ক সাপেক্ষে অনেকে ব্রাজিলের এই দলকে ফুটবল ইতিহাসের সেরা হিসেবে দেখেন। 

এক নজরে নবম বিশ্বকাপ 

·                    স্বাগতিকঃ মেক্সিকো

·                    চ্যাম্পিয়নঃ ব্রাজিল

·                    রানার আপঃ ইতালি  

·                    মোট ম্যাচঃ ৩২

·                    মোট গোলঃ ৯৫

·                    গোল গড়ঃ ২.৯৭  

·                    সর্বোচ্চ গোলদাতাঃ  জার্ড মুলার। [পশ্চিম জার্মানি -১০ গোল]

·                    সেরা খেলোয়াড়ঃ পেলে (ব্রাজিল)  [আন অফিসিয়াল]

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য