স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,১৭ অক্টোবর: সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে রোববার ম্যাচটি ৩-১ গোলে জিতেছে রিয়াল। বেনজেমা এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফেদে ভালভেরদে। শেষ দিকে ফেররান তরেস ব্যবধান কমালে জমে ওঠে লড়াই। তবে যোগ করা সময়ে রদ্রিগোর গোলে শেষ হয়ে যায় সফরকারীদের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা।গত আসরে ফিরতি লেগে ঘরের মাঠেই শাভির দলের বিপক্ষে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল রিয়াল। স্কোরলাইন অতটা উজ্জ্বল না হলেও প্রতিশোধ ঠিকই নিতে পারল তারা।৯ ম্যাচে ৮ জয় ও ১ ড্রয়ে রিয়ালের পয়েন্ট হলো ২৫। আসরে প্রথম হারের স্বাদ পাওয়া বার্সেলোনার পয়েন্ট ২২।ম্যাচের শুরুতেই সুযোগ আসে বার্সেলোনার সামনে। ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের পাস ধরে বক্সে ঢুকে শট নেন রাফিনিয়া; তবে রিয়াল গোলররক্ষক আন্দ্রে লুনিন ছিলেন সতর্ক। তিন মিনিট পর ভিনিসিউস জুনিয়রের শট বক্সে প্রতিপক্ষের একজনের গায়ে লেগে বাইরে যায়।দ্বাদশ মিনিটে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে এগিয়ে যায় রিয়াল। মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের ট্যাকলে পড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ছোট থ্রু বল বাড়ান টনি ক্রুস। বল ধরে অনেক ওপরে উঠে আসা প্রতিপক্ষের রক্ষণকে গতিতে ফাঁকি দিয়ে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শট নেন ভিনিসিউস। বল গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের প্রসারিত হাতে প্রতিহত হয়; তবে আলগা বল ফাঁকায় পেয়ে ১৫ গজ দূর থেকে জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন বেনজেমা।চোট পাওয়ার আগে ও ফেরার পর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পাঁচ ম্যাচ পর জালের দেখা পেলেন ফরাসি স্ট্রাইকার। এবারের লা লিগায় তার গোল হলো চারটি।২৫তম মিনিটে নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেন লেভানদোভস্কি। ডান দিক থেকে রাফিনিয়ার দূরের পোস্টে বাড়ানো বল স্লাইডে খুব কাছ থেকে অবিশ্বাস্যভাবে উড়িয়ে মারেন পোলিশ তারকা। দুই মিনিট পর লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড করেন উসমান দেম্বেলে।তাদের সুযোগ নষ্টের হতাশা ১০ মিনিট পর আরও বড় হয়ে ওঠে রিয়াল ব্যবধান দ্বিগুণ করায়। আবারও বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণ শাণান ভিনিসিউস, আরেক সতীর্থের পা ঘুরে বল পান ফেরলঁদ মঁদি। ডি-বক্স থেকে তার কাটব্যাক পেয়ে দূর থেকে নিচু জোরাল শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ভালভেরদে।
শুরু থেকে বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণেও এগিয়ে থাকা বার্সেলোনা ৪৩তম মিনিটে আরেকটি সুযোগ পায়। তবে এবার ডিফেন্ডার দানি কারভাহালের চ্যালেঞ্জে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আসরে আগের আট ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯ গোল করা লেভানদোভস্কি।দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে আবারও জালে বল পাঠিয়ে উল্লাস শুরু করেন বেনজেমা। তবে পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন তিনি।এরপর বেশ খানিকটা সময় খেলা চলতে থাকে ঢিমেতালে। বার্সেলোনার আক্রমণগুলো ছিল ধারহীন, রিয়ালের ছিল না তেমন তাড়া। পরের ২০ মিনিটে তেমন কোনো সুযোগই তেরি হয়নি।৭৩তম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া লেভানদোভস্কি পাশ থেকে কারভাহালের চ্যালেঞ্জে পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করে বার্সেলোনা। তবে রেফারি তা নাকোচ করে দেন।আক্রমণের ধার বাড়াতে ওই সময়ই দেম্বেলেকে তুলে আনসু ফাতিকে নামান কোচ। খানিক পর দারুণ সুযোগও তৈরি করেন তিনি। কিন্তু তরুণ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া নিচু শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়।লড়াইয়ে ফিরতে মরিয়া বার্সেলোনা করতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। তারই ধারাবাহিকতায় ৮৩তম মিনিটে মেলে সাফল্যের দেখা।বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ফাতি খুঁজে নেন লেভানদোভস্কিকে। তিনি চেষ্টা করেন ব্যকহিলে পেছনে বল বাড়াতে, ঠিকমতো না হলেও ঠিকই পেছনে ছুটে আসা তরেসের পায়ে যায়। গোলরক্ষক আগেই এগিয়ে ছিলেন আরেক দিকে, বিনা বাধায় ফাঁকা জালে বল পাঠান তরুণ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।
তখনও বাকি অনেক সময়। বার্সেলোনা শিবিরে জাগে নতুন আশা। ড্র করতে পারলেও লিগ টেবিলের শীর্ষেই থাকত তারা। কিন্তু শান্ত থেকে রক্ষণ জমাট রাখে রিয়াল; বাকি সময়ে প্রতিপক্ষকে তেমন সুযোগই দেননি আলাবা-মিলিতাওরা।গোল হজমের পরপরই ভিনিসিউসকে তুলে রদ্রিগোকে নামান কোচ। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের হাত ধরেই জয় নিশ্চিত হয় তাদের। ডি-বক্সে তাকেই এরিক গার্সিয়া ফাউল করলে ভিএআর দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। নিখুঁত স্পট কিকে লক্ষ্যভেদ করেন রদ্রিগো।প্রায় ৫৫ শতাংশের বেশি সময় বল ধরে রাখা বার্সেলোনা প্রথম ৭০ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে কেবল ৯টি শট নিতে পারে। বাকি ২০ মিনিটে আরও ৯টি শট নেয় তারা। সব মিলিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে মাত্র ৫টি। সেখানে রিয়াল পুরো ম্যাচে কেবল আটটি শট নেয়; যার চারটি লক্ষ্যে রেখে তিনটিই জালে পাঠায় তারা।গত নভেম্বরে দুঃসময়ে বার্সেলোনার দায়িত্ব নিয়ে অল্প সময়ে দলকে পথে ফেরান শাভি। তার ছায়ায় লা লিগায় অ্যাওয়ে ম্যাচে তো অজেয় হয়ে উঠেছিল দল। দারুণ সেই পথচলার এবার শেষ হলো; প্রতিপক্ষের মাঠে প্রথম হারের তেতো স্বাদ পেলেন তিনি।লা লিগায় কোনো দলের কোচ হিসেবে প্রথম থেকে সবচেয়ে বেশি অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি অবশ্য শাভিরই থাকছে। গত ১ অক্টোবর মায়োর্কার মাঠে ১-০ গোলে জয়ের মধ্য দিয়ে ১৮ ম্যাচ অপরাজিত থেকে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ জিনেদিন জিদানের রেকর্ডটি ভেঙেছিলেন তিনি।সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই নিয়ে সবশেষ চার ম্যাচের তিনটিতেই জয়শূন্য রইল বার্সেলোনা। এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইন্টার মিলানের মাঠে হারের পর তাদের সঙ্গেই ঘরের মাঠে ড্র করেছিল শাভির দল।বাজে অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে খুব দ্রুত দলকে চাঙা করে তুলতে হবে শাভিকে।